২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

শীতে দুর্বিষহ দিন কাটে ভোলার পথশিশুদের

-

শীতের সাথে সংগ্রাম করে যাদের জীবন, সেসব পথশিশুরা অযতœ আর অবহেলায় দিন যাপন করছেন ভোলার পথেঘাটে। যাদের পরনে ছিন্ন পোশাক ছাড়া শীত নিবারণের কোনো কাপড় নেই। অন্ন জোগানোর জন্য পুরোটাই পরের ওপর নির্ভর করতে হয় এসব পথশিশুদের। শীত নিবারণের কাপড় ও টেকসই বাসস্থান না থাকায় তাদের দুর্বিষহ দিন যাপন করতে হচ্ছে। জড়ো হয়ে তারা পুরনো কাগজ আর খরকুটো দিয়ে আগুন জ্বেলে একটু হলেও শীত নিবারণের চেষ্টা করে।
লালমোহনের পথশিশু নাগরের সাথে কথা হলে সে বলে, ‘মসজিদের লাইগা রাস্তায় কুড়াইয়া টাকা উঠাই। সেখান থাইকা সামান্য দুই এক টাকা পাই, তা দিয়া কিছু কিন্না খাই। শীতের মোটা কাপড় নাই, অনেক কষ্ট হয়।’
দেখা যায়, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, পারিবারিক বিচ্ছেদ, পরিবারের সদস্য বৃদ্ধি, বাবা-মায়ের একাধিক বিবাহ, পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু, নদীভাঙনের ফলে ভিটেমাটি হারা হওয়াসহ নানা কারণে তারা এক সময় পথশিশুতে পরিণত হয়। তবে এসব শিশুর বড় একটি অংশ ছোট থেকে বড় অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে এবং এ প্রবণতা বাড়ছে দিনকে দিন।
দেখা যায়, মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এসব শিশুরা মানসিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। রাত জেগে কাজ করা, অবহেলা, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠায় এসব শিশুর বড় একটি অংশ স্বাস্থ্য ঝুঁকিয়ে রয়েছে।
পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন এসব শিশু শহরে এসে প্রয়োজনীয় খাবার, আশ্রয় ও পোশাক না পেয়ে বিপাকে পড়ে। রাত কাটে শহরের অলিগলি, ফুটপাথে। এক সময় এসব শিশু অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তবে কেউ কেউ আবার বাসা-বাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁয় বা কারাখানায় শ্রমিকের কাজ পেয়ে বেঁচে যায়।
লালমোহন উপজেলার ওয়েল্ডিং কারখানার শিশু শ্রমিক রুবেল বলে, ‘আমার বাজান ভ্যান চালায় কিন্তু ঘরে ভাইবোন বেশি হওয়ায় বাজান আমারে এইহানে দিয়া গ্যাছে।’ চায়ের দোকানের কারিগর মহসিন বলে, ‘আমি ভোর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত দোকানে কাজ করে দৈনিক ৫০ টাকা পাই। তারপরও ছুটি পাই না, আজহার রোডের ভাঙ্গারী দোকানের শিশু শ্রমিক মিরাজ, ইউসুফ ও হাসান জানায়, সংসারে অভাবের কারণে পড়া লেখা করতে পারেনি সে। তাই গাওয়ালে গিয়ে ভাঙ্গারী মালামাল কিনে মহাজনের দোকানে বিক্রি করে সংসার চালাতে হয় তাকে।
ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী আলমঙ্গীর মিয়া বলেন, গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিত্যক্ত কাছের বোতল, প্লাস্টিক সরঞ্জামাদি কুড়িয়ে পথশিশুরা আমার কাছে বিক্র করে। অনেক শিশুর অভিভাবক আমার কাছ থেকে দাদনও নিয়েছেন। সে টাকা কাজ করে আস্তে আস্তে পরিশোধ করে শিশুরা।
জানা যায়, পথ শিশুদের অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। শীত মৌসুমে তাদের সেই জীবন যেন থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়। তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসতে বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠন।


আরো সংবাদ



premium cement