২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অসময়ে ভাঙছে পদ্মা : ঝুঁকিতে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট

সন্ধ্যার ভাঙনের কবলে আমরাজুড়ী বাজার
-

পদ্মার পানি কমে গেলেও অসময়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের পশ্চিমে নতুন পাড়া ও লালু মণ্ডলের পাড়ায় নদী ভাঙছে। গত এক সপ্তাহে ওই এলাকার প্রায় ২৫ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত বছর একই সময় পদ্মার ভাঙনে এলাকার বহু মানুষ ভিটেমাটি হারায়। এবারো একই সময় ভাঙন দেখা দেয়ায় স্থানীয়দের মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সরজমিন দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের পশ্চিমে লালু মণ্ডলের পাড়ায় গিয়ে এমনই দৃশ্য দেখা যায়। এ সময় দেখা যায় ওই এলাকার কৃষক ও স্থানীয়দের চোখে মুখে ভাঙন আতঙ্ক। এ সময় দেখা যায় পদ্মা পাড়ের বিশাল এলাকা আস্তে আস্তে পানিতে ডুবে যাচ্ছে। ভাঙনের তীব্রতা তেমন না হলেও দিন দিন নদীর পাড় ভেঙেই চলছে। স্থানীয় কৃষকরা আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা আর কত সইব। সময় নাই অসময় নাই আমাদের জমাজমি নদীর পেটে চলেই যাচ্ছে। এমপি মন্ত্রী কত আইল, নদী শাসনে কথা কইল। কাজের কাজ কিছুই অইল না। বর্ষাকাল আইলেই তারা আসে, বড় বড় কথা কইয়া আমাগেরে মন ভোলায়। বর্ষা শেষ তাদের কথাও শেষ। নদী আর কবে শাসন অইব।’
এ সময় এলাকার লালু মণ্ডলের পাড়া গ্রামের আলাউদ্দিন, কুদ্দস প্রামাণিক, বদর উদ্দিন কানাই শেখসহ অনেকেই ভাঙন এলাকা দেখিয়ে আক্ষেপ করেন। এ সময় তারা জানতে চান নদী শাসনের কাজ কবে হবে। নদী পাড়ের কয়েকজন বলেন, গত বছর অসময়ে পদ্মার ভাঙনে ওই এলাকার প্রায় ৫০০ পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। এবারো গতবারের প্রায় একই সময়ে ভাঙন শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর দৌলতদিয়াঘাট সহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম বলেন, দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকার যেখানে ভাঙছে তাতে ঘাটের তেমন কোনো সমস্যা হবে না। তা ছাড়া খুব তাড়াতাড়ি নদী শাসন প্রকল্পের কাজ শুরু হলে দৌলতদিয়া এলাকায় কোনো ভাঙন থাকবে না। যে কারণে এই ভাঙন রোধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
এদিকে পিরোজপুরের কাউখালীর সন্ধ্যা নদীর আমরাজুড়ী এলাকা ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে আমরাজুড়ী বাজার ও ফেরিঘাট এলাকায় তীব্র ভাঙনে ব্যাপক এলাকা হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙন রোধের দাবিতে কাউখালী উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে ভাঙনকবলিত আমরাজুড়ী নদীতীরে এলাকাবাসী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এতে ভুক্তভোগী ৫০টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার অংশ নেয়। তারা আমরাজুড়ী বাজারসহ এই এলাকায় বসবাসকারী মানুষের বসতবাড়ি ও জমিজমা রক্ষার্থে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা নদীর ভাঙনরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় স্থানীয় আমরাজুড়ী বাজারের কমপক্ষে ২৫টি বাসাবাড়ি ও দোকানপাট নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে আমরাজুড়ী ফেরিঘাট এলাকা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙনের ফলে ৫০টি পরিবার আজ ক্ষতির সম্মুখীন। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরাজুড়ী বাজারটি সম্পূর্ণ বিলীনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মসজিদের ইমাম গাজী আনোয়ার হোসেন বলেন, ৩০ বছর ধরে আমরা ভাঙনের কবলে। অথচ ভাঙনরোধে আজ অবধি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমরাজুড়ী বাজারের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের বাঁচাতে হলে দ্রুত ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। না হলে পুরো বাজার ও ফেরিঘাট এলাকা নদীতে চলে যাবে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান সামসুদ্দোহা চান বলেন, সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে আমরাজুড়ী বাজার এলাকা চরম বিপন্ন। গত কয়েক দিন ধরে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। এতে ওই এলকার ৫০টি পরিবার ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত। ভাঙন ঠেকানোর দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা খাতুন রেখা ভাঙনের তীব্রতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরাজুড়ী ফেরিঘাট, বাজার ও কাউখালী নেছারাবাদ সংযোগ সড়কটি তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মিয়া মনুসহ ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী প্রকৌশলী পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement