২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আসছে শীত, খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছিরা

-

কুয়াশা আর ভোরে লতা-পাতা ও ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু জমে থাকাই সময় বলে দিচ্ছে গ্রামীণ জনপদে জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। শীত পুরোপুরি শুরু না হতেই গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস আহরণের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে গাছ প্রস্তত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতোমধ্যে সব ধরনের উপকরণও সংগ্রহ করেছেন গাছিরা। চুয়াডাঙ্গার সীমান্ত ঘেষা জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা শীতের আমেজ শুরুর সাথে সাথে কোমরে দড়ি, দা বেঁধে নিপুণ হাতে খেজুর গাছ প্রস্তুত করছেন।
আগে উপজেলার মাঠে মাঠে ফসলি জমিতে কিংবা জমির আইলে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা গেলেও এখন আর সে দৃশ্য অনেকটা স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। তবে কিছু কৃষক পতিত ও অনুর্বর বা ফসলি জমির আইলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর বাগান গড়ে তুলেছেন। তাতে তারা প্রতি বছর আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন।
উপজেলার একাধিক গাছির সাথে কথা বলে জানা গেছে, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে গাছ ঝোড়ার কাজ শুরু করেছেন তারা। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছিদের ধারণা বাজারে এবার গুড়-পাটালির চাহিদা বেশি থাকবে এবং দামও ভালো পাওয়া যাবে। তবে গাছিদের আক্ষেপ, আগের মতো আর এলাকায় খেজুর গাছ নেই। আবার যেসব গাছ আছে, তাতে রসও ভালো পাওয়া যায় না। বর্তমানে যতটুকু রস-গুড় পাওয়া যাচ্ছে আগামী কয়েক বছর পর হয়তো তাও মিলবে না। উপজেলার কালা গ্রামের গাছি খাজা আহমেদ ও গোপালনগরের গাছি জয়নাল আবেদীন বলেন, এলাকায় আগের মত আর খেজুর গাছ নেই। অন্য দিকে গাছে রসও কম হচ্ছে। ফলে গাছিরা রস আহরণের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তবে কিছু কৃষক তাদের পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে খেজুর বাগান গড়ে তুলছেন। আমাদের এলাকার গাছিরা রস সংগ্রহ করতে আগে ভাগে খেজুর গাছ প্রস্ততে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
স্কুল শিক্ষক মতিয়ার রহমান বলেন, আগে শীত মৌসুমে গ্রামে সকালের পরিবেশ নলেন গুড়-পাটালির ঘ্রাণে মৌ মৌ করত। কিন্তু এখন আর সেসব দিন নেই। শীতের সময় শুধু গ্রামই নয় শহরেও খেজুরের রস-গুড় দিয়ে তৈরি হয় হরেক রকমের পিঠা-পুলি, ক্ষির ও পায়েস। ফলে চাহিদার চেয়ে এ সময় রস-গুড় উৎপাদন কম হওয়ায় দামও বেশি।
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারমিন আক্তার বলেন, উপচেলার একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নে কী পরিমাণ খেজুর গাছ আছে কিংবা আগে কী পরিমাণ ছিল তার কোনো পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। যতই দিন যাচ্ছে, ততই খেজুর গাছের সংখ্যা কমছে। বর্তমান সময়ে গাছি সঙ্কটের কারণে খেজুর গাছের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। আগের মতো আর খেজুর গাছ দেখা যায় না। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর বাগান গড়ে তোলা হলে তাতে লাভবান হওয়া যাবে। কারণ খেজুর গাছের জন্য বাড়তি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।
বাড়ির আশপাশে ও পুকুরপাড়ে এবং সড়কের ধারে খেজুর গাছ লাগিয়ে রস সংগ্রহ করা যেতে পারে। গাছিদের উৎপাদিত রস-গুড় ও পাটালি বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিব মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। আর তাতে কৃষকদের মধ্যে খেজুর গাছ লাগানো আগ্রহও বাড়বে।

 


আরো সংবাদ



premium cement