২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জীর্ণদশায়ও ৫ বছরে কেরুর লাভ ৩৯ কোটি টাকা

-

বিশ্ব মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চলতি বছরসহ পাঁচ বছরে ৩৮ কোটি ৯২ লাখ ৮ হাজার টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। পুরনো জরাজীর্ণ কারখানার অধিকাংশ যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতা অনেক আগেই হ্রাস পেলেও শুধু শ্রমিক-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মিলটি সরকারকে উচ্চ অঙ্কের মুনাফা দিতে পেরেছে।
১৯৩৮ সালে পাঁচটি ইউনিট নিয়ে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকল কমপ্লেক্স স্থাপিত হয়। এর মধ্যে ডিস্টিলারি, চিনি কারখানা, কৃষি খামার, পরীক্ষামূলক খামার ও জৈব সার কারখানা রয়েছে। মোট জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৫৫৬ দশমিক ৬৬ একর। একটি পরীক্ষামূলকসহ ১০টি কৃষি খামার রয়েছে। দৈনিক ১১৫০ টন আখ মাড়াই করে বছরে ১১ হাজার ৫০০ টন চিনি উৎপাদনের সক্ষমতা নিয়ে মিলটি প্রতি বছর নভেম্বর মাসের শেষের দিকে মাড়াই মৌসুম শুরু করে।
চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, কেরুজ চিনি কারখানা, কৃষি খামার, পরীক্ষামূলক খামার ও জৈব সার কারখানায় ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে ৩১২ কোটি ৩০ লাখ ৬৯ টাকা লোকসান হয়েছে, পক্ষান্তরে ডিস্টিলারি ও ফার্মাসিউটিক্যাল থেকে ৩৫১ কোটি ২০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা লাভ এসেছে। ডিস্টিলারির লাভ থেকে মোট লোকসান বাদ দিলে পাঁচ বছরে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি কমপ্লেক্সের সামগ্রিক নিট মুনাফা ৩৮ কোটি ৯২ লাখ ৮ হাজার টাকা।
কৃষি ও পরীক্ষামূলক খামার ও জৈব সার কারখানায় কেনো লোকসান হচ্ছে জানতে চাইলে কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত জিএম (কৃষি) গিয়াস উদ্দীন জানান, চিনিসমৃদ্ধ উন্নত জাতের আখ রোপণের অভাবে এমনটি হচ্ছে। যে আখ চাষ করা হয়ে থাকে সে আখে চিনির রিকোভারি কম। তা ছাড়া মিল এলাকায় অধিকাংশ জমিতেই আখের সাথে ভুট্টার চাষ হচ্ছে। আখ ও ভুট্টা একই গোত্রভুক্ত হওয়ায় আখ তুলনামূলকভাবে কম নিউট্রেশন প্রাপ্ত হয়। ফলে আখ উৎপাদন ও চিনি আহরণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ কারণে চিনি আহরণের গড় হার ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে একই জমিতে একই জাতের আখ রোপণ করা হচ্ছে। আরো একটি কারণ হলো এক কেজি চিনির দাম ৬০ টাকা। সে হিসাবে ১০০ কেজি আখে চিনি পাওয়া যায় পাঁচ কেজি। ১০০ কেজি আখের দাম ৩৫০ টাকা আর পাঁচ কেজি চিনির দাম মাত্র ৩০০টাকা। এ ভাবে লোকসান বাড়তেই থাকে। এ ছাড়া খামারগুলোতে অতিরিক্ত জনবল থাকায় বিনিয়োগে সময়মতো রিটার্ন আসে না। জৈব সার কারখানায় বিক্রি কম হওয়ায় লোকসান ছিল, চলতি বছর বিক্রি বেড়ে লাভ করেছে।
চিনি কারখানায় লাগাতার লোকসানের কারণ জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত জিএম (কারখানা) জিললুর রহমান এক কথায় বলেন, চিনির বিক্রয় মূল্য কম, উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। এক কেজি চিনির দাম মাত্র ৬০টাকা, অথচ এক কেজি চিনি উৎপাদন করতে খরচ হয় ২০৮ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে দক্ষ শ্রমিকের অভাব কারখানায় লোকসানের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া চিনি উৎপাদন করতে যেসব প্রয়োজনীয় প্রসেসিং দ্রব্যাদি লাগে তার দামও দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু চিনির দাম কমছে তো বাড়ছে না। চিনির দাম বাড়ানো খুবই প্রয়োজন।
ভারপ্রাপ্ত জিএম (প্রশাসন) শেখ সাহাব উদ্দীন জানান, গত পাঁচ বছরে ডিস্টিলারির উৎপাদিত পণ্য থেকে সরকারি কোষাগারে ভ্যাট দেয়া হয়েছে ৩৪৭ কোটি ৫৩ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং আয়কর দেয়া হয়েছে ১৮ কোটি ৬৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
কেরুজ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাইদ জানান, অপার সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি কমপ্লেক্সের সামগ্রিকভাবে কোনো লোকসান নেই। মহামারী করোনার মধ্যেও প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা অর্জন করেছে। ডিস্টিলারিতে অটোমেশিনের কাজটি সম্পন্ন হলে স্পিরিটজাত পণ্যের বিপণনে বৈচিত্র্য আসবে, বাজারে চাহিদা বাড়বে। এ ছাড়া চিনি কারখানায় সুগার ড্রায়ার স্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিএমআর প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে কারখানার সমস্যার সমাধান হবে। ইতোমধ্যে উন্নত জাতের আখ এনে চাষিদের মধ্যে দেয়া শুরু হয়েছে। খামারগুলোকে লাভে আনার জন্য সদর দফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement