২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খাঁচায় মাছচাষে নতুন সম্ভাবনা

-

বরিশালের মুলাদী নদী দ্বারা বেষ্টিত একটি বদ্বীপস্বরূপ। মুলাদীতে কিছু রাস্তাঘাট ছাড়া অধিকাংশ জায়গা নিচু জমি। ধান আর পাটের মতো কিছু অর্থকরী ফসল এলাকাবাসীর অন্ন বস্ত্রের সংস্থান করে। কিন্তু মুলাদীতে বিরাট সেক্টর রয়েছে যেখানে মৎস্য চাষ করে অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে মুলাদীবাসী।
মুলাদী উপজেলায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার নদী এবং ৪১৫০টি পুকুরসহ আরো অনেক বিলঝিল রয়েছে। সেখানে বর্ষার সময় ৪-৬ মাস পর্যন্ত ৩-৪ ফুট পানি থাকে। এ সব জলাশয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে এলাকার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব, অন্য দিকে অর্থনৈতিক দিক দিয়েও স্বাবলম্বী হওয়া যায়। প্রতিটি গ্রামের পাশ দিয়েই নদী বয়ে গেছে। এ সব এলাকায় বসবাসরতরা অনায়াসেই নদীতে বিভিন্ন পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারেন।
খাঁচায় মৎস্য চাষ : নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ করলে প্রতিটি খাঁচার আয়তন হবে এক ঘনফুট। প্রতিটি খাঁচায় ২৫০-৩০০ পোনা চাষ করা যায়। পোনার আকার হবে ৩-৫ ইঞ্চি। এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ খাবারই বাহির থেকে সরবরাহ করতে হবে।
পেন কালচার : মুলাদীর তিনটি বড় নদী হলো, আড়িয়াল খাঁ, জয়ন্তী ও নয়া ভাঙ্গলী। নদীর অনেক বাঁক রয়েছে। যেখানে পেন কালচার করা যায়। তা ছাড়া অনেক প্রশাখা রয়েছে। সেখানেও পেন কালচার করা সম্ভব। নদীর প্রশাখার যে অংশ শুকিয়ে গেছে সেখানে ভালোভাবে বাঁধ দিতে হবে। অন্য অংশে বাঁশের চালি বা গড়া দিয়ে বন্ধ করতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাছ ছেড়ে দিয়ে বর্ষার আগে হারভেস্টিং করলে অনেক লাভ পাওয়া যাবে। মুলাদীতে ছোট বড় প্রায় ৪১৫০টি পুকুর রয়েছে। যার আয়তন ১১০২ একর। ওই জলাশয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে প্রায় ৩৩০ টন মাছ উৎপাদন হতে পারে। যেখানে বর্তমানে ১২০ টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। এমতাবস্থায় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীকে মাছ চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে।
কিছু বিল রয়েছে যেখানে চিংড়ি চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। তা ছাড়া নদীর তীরে চিংড়ি ঘের করার মতো বিশাল জলরাশি রয়েছে। চরপদ্মা আদর্শ মৎস্য খামার একটি উদাহরণ। এ ধরনের ঘের করে শুধু ফিন ফিশাই নয়, চিংড়িও অনায়াসে চাষ করা সম্ভব। এখানে চিংড়ির পোনার রয়েছে বিশেষ প্রাচুর্যতা। ফলে ভালো চিংড়ি পোনা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করে একজন চাষি বছরে এক একর জমি থেকে এক লাখ টাকা আয় করতে পারবে। আড়িয়াল খাঁ নদীর মীরগঞ্জ ঘাটের পূর্ব অংশ মরে গেছে। এখানে অনায়াসেই একটি অভয়াশ্রম করে পাতারচর নদীর অভয়াশ্রমের পুনরাবৃত্তি করা যায়। এ ধরনের অভয়াশ্রম শত শত মানুষের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করে, অন্য দিকে মাছের প্রাচুর্যতাও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
উপজেলায় রয়েছে ৩৫টি বিশাল খাল। যার আয়তন ২০ কিলোমিটার। ওই খালের অধিকাংশগুলোতে কোনো নৌ চলাচল করে না। খালগুলোতে জোয়ারভাটার পানি ওঠানামা করে। ফলে খালে পেন কালচার করে লাভবান হওয়া সম্ভব। এসব ক্ষেত্রে মাছকে কোনো সম্পূরক খাবার দিতে হবে না। প্রাকৃতিক খাবারের যে প্রাচুর্যতা রয়েছে, তা থেকেই প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ৫-৭ মণ মাছ উৎপাদন করা যায়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, আড়িয়াল খাঁ ও জয়ন্তী নদী ও এর সাথে সংযুুক্ত খালগুলোর গতি প্রকৃতি খাঁচায় মাছ চাষ ও পেনে মাছ চাষ করার অত্যন্ত উপযোগী। নদীতে অনেক মরা খাল আছে যেগুলোতে কোনো নৌযান চলাচল করে না এবং সারা বছরই ৬-৭ ফুট পানি থাকে। তাই স্থানীয়ভাবে বা বৃহৎ পরিসরে প্রকল্প গ্রহণ করে খাঁচায় ও পেনে মাছ চাষ সম্প্রসারণের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যেতে পারে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।


আরো সংবাদ



premium cement