মিঠাপুকুরে ২০ সুদখোরের জালে আটকা ২ গ্রামের মানুষ
- শাহীন মণ্ডল মিঠাপুকুর (রংপুর)
- ২০ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের বুজরুক সন্তোষপুর ও ময়েনপুর ইউনিয়নের গেনারপাড়া গ্রামের মানুষ ২০ জন সুদখোরের পাতানো জালে জড়িয়ে পড়েছেন। ওই গ্রামের এমন কোনো সাধারণ পরিবার নেই যারা সুদের জালে আটকা পড়েনি। এদের মধ্যে একজনের ইতোমধ্যে আত্মহনন ও বেশ কয়েকজনের এলাকা ছাড়ার ঘটনাও ঘটেছে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অর্থ লগ্নিকারী ২০ সুদখোরের কয়েকজনের বাড়ি ওই গ্রামেই। পাশের গ্রামে আছে আর কয়েকজন। এরা মানুষের অর্থনৈতিক সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে টাকা দাদন দেয়। এক হাজার টাকায় বছরে দুই মণ ধান সুদ হিসেবে দিতে হয়। এ ধানের দাম কমপক্ষে ২ হাজার ৮০ টাকা। এর এক কিস্তি দিতে হয় ইরি ধান উঠলে জ্যৈষ্ঠ মাসে, অপর কিস্তি দিতে হয় আমন ধান এলে অগ্রহায়ণ মাসে। কোনো কারণে এক কিস্তি দিতে না পারলে সেটা আসলে পরিণত হয়ে পরের কিস্তিতে তার ওপর সুদ হয়। হিসাব করে দেখা গেছে সুদখোরের পাতানো টাকার সুদহার বার্ষিক শতকরা ৯০ টাকা।
সরেজমিন জানা গেছে, দাদনগ্রহীতারা কোনোভাবেই মুখ খুলতে রাজি নয়। কারণ এ নিয়ে ইতঃপূর্বে গ্রামে সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনা থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত সুদখোরদের পেশিশক্তির কাছে পরাস্ত হয়েছেন গ্রামের শোষিতরা। দু-একজন মুখ খুললেও অনুরোধ করছেন তাদের নাম প্রকাশ না করতে। গ্রামের এক বৃদ্ধা একবার সুদখোরদের বিরুদ্ধে কথা বলে জীবনের নিরাপত্তার অভাবে থানায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। গেনারপাড়া গ্রামের আউয়াল মিয়া (মাস্টার) সুদখোরদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে শোধ করতে না পেরে আট বছর আগে আত্মহত্যা করেছেন। টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার ওপর মানসিক নির্যাতন শুরু হয়। একপর্যায়ে মহাজনের লোকেরা টাকা না দিলে মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দেয়। দেনার দায়ে নিজের মেয়ের সম্ভ্রমহানি চোখে দেখতে পারবেন না বলে তিনি আত্মহত্যা করেন।
আর একজন চক দুর্গাপুর গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক দাদনের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সুদখোরকে ভিটেমাটি লিখে দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন। সন্তোষপুর গ্রামের বেলকোলা গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন দাদন নিয়েছিলেন ২০ হাজার টাকা। তা সুদ বেড়ে হয় ৮০ হাজার টাকা। হাঁস-মুরগি, ভিটেবাড়ি বেচেও শোধ না হওয়ায় তিনি গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। আরো পালিয়েছেন সেকেন্দার, রুহুল, আজগার, কেতা মিয়াসহ অনেকে।
সুদখোররা বলে, মানুষের অভাবের সময় টাকা দিয়ে আমরা উপকার করছি। ব্যাংক এবং বিভিন্ন এনজিও প্রকল্প থাকতে সুদখোরদের কাছ থেকে দাদন নেয়ার কারণ জানতে চাইলে গ্রামের লোকজন জানান, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বালুয়া মাসিমপুর ও শুকুরেরহাট শাখাসহ বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা নিতে অনেক ঝামেলা করতে হয়। হাঁটাহাঁটি করতে জীবন শেষ হয়ে যায়। এনজিওর ঋণের সাপ্তাহিক টাকা জোগাড় করা অনেক কষ্টের ব্যাপার। তাই আমরা সুদখোরদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে থাকি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা