২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হোসেনপুরে সুঁই সুতা ও চুমকি পাথরে ভাগ্য বদল

-

বড় স্বপ্ন ও আশা নিয়ে হাতে মেহেদি পড়ে বধূবেশে স্বামীর ঘরে আসে রহিমা। এসেই দেখে দিনমজুর স্বামীর অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। যেদিন স্বামী কাজে যান সেদিন উনুনে পাতিল বসলেও অন্য দিন উপবাসে দিন কাটত তাদের। এর মধ্যেই কোলজুড়ে আসে এক কন্যা সন্তান। বেড়ে যায় সংসারের আরো টানাপড়েন।
অভাবের সংসারে কালো মেঘ ঘিরে ধরে রহিমার স্বামী দ্বীন ইসলামের চারপাশ। একদিন ঠিক করলেন পাশের ভাবির কাছ থেকে হাতের কাজ শিখবেন। সুঁই সুতা আর চুমকি পাথর দিয়ে শাড়িতে নকশার কাজ শিখে রহিমা। পরে মহাজনের কাছ থেকে এক রঙের শাড়ি নিয়ে এসে শুরু করে নকশার কাজ। এরপর থেকে আর তার পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন সে শাড়ি কারখানার ম্যানেজার। তার মাসিক মজুরি ১০ হাজার টাকা। ওই কারখানায় তার মতো আরো ৭০ জন নারী শাড়িতে কাজ করেন। কাজের তদারকি ও দেখাশোনার দায়িত্ব এখন রহিমার ওপর।
কাজ করে নিজের জমানো টাকায় পৌরসভায় তিন শতক জমি কিনে বাসাও তৈরি করেছেন রহিমা। এখন তার সংসারে অভাব নেই। স্বামীর রোজগার ও তার উপার্জিত অর্থ দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলছে সংসার। মেয়েটা স্কুলে পড়ছে।
রহিমার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার দ্বীপেশ্বর গ্রামে। হোসেনপুর উপজেলায় ৩০টি গ্রামে রহিমার মতো সালেহা, আছিয়া, সেলিনাসহ সহস্রাধিক নারী ও শিশুরা শাড়িতে কাজ করে ভাগ্য পরিবর্তন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এখন তাদের কারো সংসারে আর সঙ্কটের দেখা নেই।
সরেজমিন উপজেলার শাহেদুল, কুড়িমারা, রহিমপুর, আশুতিয়া, দ্বীপেশ্বরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাড়িতে পুরোদমে শাড়িতে পুঁথি ও সুতা দিয়ে বিভিন্ন নকশার বাহারি রঙের শাড়ির কাজে ব্যস্ত নারীরা। এসব শাড়ি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ী ও মহাজনদের কাছ থেকে এক রঙয়ের ডিজাইন আঁকা অবস্থায় নামমাত্র মজুরির চুক্তিতে নিয়ে আসেন তারা। এরপর শাড়িতে দরিদ্র পরিবারের নারীরা শাড়ির ডিজাইন মতো সুতা ও পুঁথি দিয়ে নকশা করেন। যেসব শাড়িতে ডিজাইন থাকে বেশি সেসব শাড়িতে নকশা তৈরিতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। একেকটা শাড়ির ডিজাইন ও প্যাটার্ন ভিত্তিক মজুরি ভিন্ন হয়। বেশি ডিজাইনকৃত শাড়িতে নকশার মজুরি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।
খুচরা বিক্রেতারা শাড়িগুলো আট হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন নামি দামী মার্কেট ও বাজারে। নকশাকার রহিমা জানান, সংসারে দিনমজুর স্বামীর পক্ষে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ ও খাবার জোগাড় করা কষ্টসাধ্য ছিল। ফলে বাড়তি কিছু উপার্জনের জন্য শাড়ির নকশার কাজ করে আজ স্বাবলম্বী হতে পেরেছেন। অপর নকশা কর্মী সালেহা বলেন, শাড়িতে কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্যে ভালোভাবে সংসার চালাতে পারছি। তারা বলেন, মহাজনরা যদি আরো বেশি মজুরি দিতো, তাহলে ভালোভাবেই সংসার চালাতে পারতাম। এ জন্য তারা সুঁই, সুতার কারিগরদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান।
ঢাকার শাড়ি ব্যবসায়ী আবদুল কালাম জানান, পুঁথি-সুতার মূল্য বেশি। পরিবহন খরচ ও আনুষঙ্গিক ব্যয় বাদে তাদের খুব বেশি লাভ থাকে না। তাই সুঁই সুতার কারিগরদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও বর্তমান বাজারে সম্ভব নয় বলে তিনি জানিয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement