১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফেনীতে বাখরাবাদের অবৈধ গ্যাস সংযোগ থামছেই না

অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে পুনঃসংযোগ
-

কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেই, নেই আবেদনও। এরপরও ফেনী শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বাখরাবাদ গ্যাসের অবৈধ সংযোগ। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও অসাধু কর্মকর্তা আর একশ্রেণীর ঠিকাদারদের যোগসাজশে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে অনুমোদন ছাড়াই অবাধে পুনরায় অবৈধ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন অবৈধ সংযোগ ও অবৈধ জ্বালানি রোধে অভিযান চালানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় কিছু ব্যক্তি আবার অবৈধ সংযোগ দেয়া শুরু করেন।
মঙ্গলবার শহরের শাহীন একাডেমি সড়কে বাখরাবাদের অভিযানে স্বর্ণকমল নামে ৬ তলার একটি ভবনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ফেরদৌস আরা বেগমের মালিকানাধীন ওই ভবনে অনুমোদিত দুই চুলার বিপরীতে জ্বালানো হয় ১০টি চুলা। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সংযোগ বিচ্ছিন্নের পর অনুমোদিত দু’টি চুলার সংযোগ পাইয়ে দিতে কিছু ঠিকাদার লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা আদায়ের পর ওই ভবনে বিচ্ছিন্ন হওয়া ১০টি চুলায় অবৈধভাবে সংযোগ দেয়া হয়। শুধু স্বর্ণকমলই নয়, শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবনে অবৈধভাবে গ্যাসের সংযোগ দিয়ে মাসিক হারে বিল আদায় করছেন কিছু ঠিকাদার।
সূত্র আরো জানায়, মহিপাল হাউজিং সোসাইটির রাজ্জাক ম্যানশন, চৌধুরী বাড়ি সড়কের ফরাজি বাড়ি সম্মুখস্ত উদয়ন ভবন, ফেনী ইউনিভার্সিটি সম্মুখস্ত জসিম সমিলের পেছনের ভবন, পাঠানবাড়ী রোডের মমিন জাহান মসজিদ সংলগ্ন ভবন, সালাহউদ্দিন মোড় এলাকার ভবন, রয়েল হাসপাতাল সংলগ্ন ভবন, ফেনী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট সংলগ্ন বস্তি, বোগদাদিয়া মীর বাড়ির রাস্তার মাথায় লিজা ফুড ফ্যাক্টরি, বোগদাদিয়া চানাচুর ফ্যাক্টরিসহ আবাসিক এমনকি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও অনুমোদন ছাড়াই ব্যবহার হচ্ছে গ্যাস। এ ছাড়া পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর কামার বাড়ির দরজা, ছাগলনাইয়া পৌর শহরের বাঁশপাড়া এলাকার বেলাগাজী মজুমদার বাড়ি, পশ্চিম বাঁশপাড়া এলাকা, সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের ফতেহপুরে শত শত ফুট লাইন নির্মাণ করা হয়। জেলার পাঁচ উপজেলা ও নোয়াখালীর বসুরহাট এলাকায় সর্বমোট ৩০ হাজার ৫১৯ জন গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ৩৩৩ ও ২৭ জন শিল্প গ্রাহক রয়েছেন।
বাখরাবাদ সূত্র জানায়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত দেড়শতাধিক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। একাধিক অভিযানে গিয়ে বাখরাবাদের প্রধান কার্যালয়ের ভিজিলেন্স টিমও বিস্মিত হয়। একাধিক অভিযানে দেখা যায় একটি কিংবা দু’টির অনুমোদন নিয়ে জ্বালানো হচ্ছে ১৮ থেকে ২০টি চুলা।
জানা গেছে, অভিযানের পর থেকে যেসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে সেসব বাসাবাড়িতে পুনরায় অবৈধ সংযোগ নেয়া হয়েছে।
অফিস সূত্র জানায়, ৯ সেপ্টেম্বর বাখরাবাদের প্রধান কার্যালয় থেকে অবৈধ গ্যাসসংযোগ ও বিল খেলাপি গ্রাহকদের গ্যাসসংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ফেনী জেলায় ৮ সদস্যের দু’টি টিম গঠন করা হয়। সূত্র জানায়, টিম সদস্যদের কেউ কেউ অবৈধ সংযোগ দেয়ার সাথে জড়িত রয়েছেন। তাদের সাথে কিছু ঠিকাদার ও ঠিকাদার সহকারী (ফিটার) রয়েছেন।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বাখরাবাদ গ্যাসের নোয়াখালী আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মেহাম্মদ সোলায়মানকে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাখরাবাদের ফেনী এরিয়া অফিসের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জানান, অবৈধ গ্যাসসংযোগের খবর পেলেই অভিযান চালিয়ে বিচ্ছিন্ন করা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে জেলার বেশ কিছু অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে সরকার গ্যাসসংযোগ বন্ধ করে দেয়।
এ দিকে সরেজমিন ঘুরে ফেনীতে গ্যাসের গ্রাহকদের দুর্ভোগের অনেক তথ্য জানা গেছে। সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া বাজার সংলগ্ন মোল্লা বাড়ির বাসিন্দা। গত প্রায় দেড়যুগ আগে বাখরাবাদের দুই চুলার সংযোগ নেন। দীর্ঘদিন বিল বকেয়া থাকায় গ্যাসসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। এরপর বকেয়া বিল পরিশোধের পর বাখরাবাদের নিয়মমাফিক পুনঃসংযোগ পেতে আবেদন করেন। এখান থেকেই শুরু হয় হয়রানি। আবেদনের পর ৫-৬ ঘুরেও অফিসের রাজস্ব ও হিসাব শাখায় সংরক্ষণে থাকা নুরুল হকের নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে তাকে নতুন নথিপত্র তৈরির জন্য অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়।
বাখরাবাদ গ্যাসের ফেনী এরিয়া অফিসের হয়রানির এ দৃশ্য প্রতিদিনকার। ৩০ হাজার ৫১৯ জন নিবন্ধিত গ্রাহক থাকলেও প্রয়োজন অনুযায়ী কারো নথিপত্র পাওয়া যায় না। নথিপত্র সংরক্ষণ না থাকার অজুহাতে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে কিছু ঠিকাদার ও অফিসে কর্মরতরা নতুন নথি তৈরি করেন। গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ সংস্থার কার্যক্রম কারো নজরদারিতে না থাকায় বাখরাবাদের কিছু লোকজন গ্রাহকদের কাছ থেকে যাচ্ছেতাই টাকা আদায় করে থাকেন। এ ছাড়া নতুন বিল বই সংগ্রহ করতেও টাকা গুনতে হয়।
বাখরাবাদের ফেনী এরিয়া অফিসের রাজস্ব ও হিসাব শাখার ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান জানান, অফিসে কোনো ধরনের লেনদেনের সুযোগ নেই। রসিদ দিয়েই ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা আদায় করা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
কাঁঠালিয়ায় মাঠে ছাগল আনতে গিয়ে বজ্রপাতে কিশোরে মৃত্যু সালমান খানের বাড়িতে গুলির ঘটনায় গ্রেফতার ২ আরো দুই সদস্য বাড়িয়ে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন রাবির নতুন জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রণব কুমার পাণ্ডে অপরাধ না করেও আসামি হওয়া এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানোৎসবে নেমে শিশুর মৃত্যু ধূমপান করতে নিষেধ করায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বড় বোনের বৌভাতের গিয়ে দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্র নিহত কোটালীপাড়ায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত চুয়াডাঙ্গা দর্শনায় রেললাইনের পাশ থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবার রহমানের কবর জিয়ারত করলেন জামায়াত আমির

সকল