২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

নবীনগরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ

-

ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট অমর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাময়িক বহিষ্কার হওয়া প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফান্ডের এক কোটি ২৯ লাখ টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি অডিট কমিটি তদন্ত করে বিভিন্ন খাত থেকে তার বিরুদ্ধে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়-ছয় করার প্রমাণ পেয়েছে।
জানা যায়, ১৯১৩ সালে নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট গ্রামে বাবু অমর চন্দ্র ভট্টাচার্য বিদ্যাকুট অমর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘ দিন প্রধান শিক্ষকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দায়িত্বে থাকায় সরকারি নিয়মানুযায়ী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর ২০১৬ সালে নিয়োগ পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েও প্রভাব খাটিয়ে রফিকুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক হন। তিনি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন ঘটনায় হয়েছেন আলোচিত সমালোচিত। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে নবম শ্রেণীর ছাত্র রিফাত ক্লাসে ইংরেজি পড়া না পাড়ায় শিক্ষকের বেত্রাঘাতে চোখ নষ্ট হওয়ার ঘটনায় ২৩ এপ্রিল দৈনিক নয়া দিগন্তে সংবাদ প্রকাশের পর ২৪ এপ্রিল প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কার ও তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এরপর ৮মে ২০১৯ পুলিশ তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশন থেকে গ্রেফতার করে। পরে তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে আসেন। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ হতে থাকে।
২০১৯ সালের বিদ্যালয়ের পাঁচ সদস্যর অভ্যন্তরীণ অডিট প্রতিবেদন ও ২০২০ সালের নবীনগর উপজেলা প্রশাসন গঠিত অডিট কমিটির প্রতিবেদনে বেড়িয়ে আসে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র। ম্যানেজিং কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকাররম হোসেন ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা গোলাম মহিউদ্দিনকে নিয়ে গঠিত অডিট কমিটি ২০১৬ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের অডিট শেষে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম মোট এক কোটি ২৯ লাখ ৩২১ টাকা অনিয়ম/আত্মসাৎ করেছেন বলে বিল ভাউচার যাচাই-বাছাই শেষে প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয় মসজিদ খাতের তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা দুই বছর পর কমিটির চাপে জমা দিলেও অনান্য খাতের টাকা জমা দেয়ার জন্য বারবার কমিটির পক্ষ থেকে বলা হলেও জমা দেননি রফিকুল ইসলাম।
প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের এক কোটি ২৯ লাখ টাকার অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সফিকুর রহমান বলেন, প্রশাসন কর্তৃক গঠিত বিদ্যালয়ের অডিট প্রতিবেদনে যেসব অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের বিষয় উঠে এসেছে, সেসব বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে শত বছরের পুরনো বিদ্যালয়টিকে কলঙ্কমুক্ত করা হবে।
সাময়িক বহিষ্কার হওয়া প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে (০১৭১৫-১৮৩১৯০) একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও অডিট কমিটির সদস্য মোকাররম হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতে প্রধান শিক্ষকের অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম ও আত্বসাতের সত্যতা পেয়েছে অডিটে। অডিট প্রতিবেদনটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়ার পর তিনি যাচাই-বাছাই করে একমত পোষণ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement