১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কলাপাড়ায় ১৩ বছর ধরে মৃত্যুকূপে ৬ হাজার পরিবার

কলাপাড়ায় চম্পাপুর বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নেয়া একটি পরিবার : নয়া দিগন্ত -

সাগরমোহনা সংলগ্ন কলাপাড়ায় টানা ১৩ বছর ধরেই মৃত্যুকূপে ওদের বসবাস। প্রতিটি ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ে ওরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। ঝড় পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিটি তালিকায় তাদের নাম সবার আগে থাকলেও এই দুর্যোগ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের রক্ষায় কোনো পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না।
উপজেলার লালুয়া, ধুলাসার, মহীপুর, ধানখালী ও চম্পাপুর ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরে ও বাঁধসংগলœ এবং চাড়িপাড়া, উত্তর দেবপুর, দক্ষিণ দেবপুর, ধনজুপাড়া ও নিজামপুর এলাকায় ভাঙা বাঁধের পাশে ১৩ বছর ধরে মৃত্যুকূপে বসবাস করছে ছয় হাজার পরিবার। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর ২০০৮ সালে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস, ২০০৯ সালে আইলা, ২০১৩ সালে মহাসেন, ২০১৫ সালে কোমেন, ২০১৬ সালে রোয়ানু, ২০১৭ সালে মোরা, ২০১৯ সালে ফণী ও বুলবুল এবং ২০২০ সালে আমফান। একের পর এক ঘূর্ণিঝড় এসব পরিবারের সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে প্রায় ছয় হাজার পরিবার বেড়িবাঁধের বাইরে জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটা মোকাবেলা করে বসবাস করছেন। পূর্ণিমা-অমাবস্যার জোর অস্বাভাবিক জোয়ারে ভাসছে কলাপাড়ার ছয় হাজার পরিবারের ২০ হাজার মানুষ। এদের জীবনের গল্প ট্র্যাজেডিকেও হার মানায়। জীবিকার পথও যাচ্ছে রুদ্ধ হয়ে। গবাদিপশু থেকে শুরু করে হাঁসমুরগি পালন-কিছুই বেশি দিন করে থিতু হওয়া যায় না। এমনকি সন্তানদের লেখাপড়াও চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সঙ্কট রয়েছে বিশুদ্ধ পানির। লালুয়া, চম্পাপুর, মহীপুর, ধুলাসার ইউনিয়নে নিশ্চিহ্ন নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষের দিন কাটছে চরম উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যে। মহিপুর, লালুয়া, চম্পাপুর, ধুলাসার ইউনিয়নে ভয়াবহ ভাঙন ও তীর রক্ষা বাঁধ ধসে যাওয়ায় ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় তাদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আমফানের আঘাতে ভেঙে যাওয়া লালুয়া ও নিজামপুর তীরবর্তী কলাপাড়া উপজেলার ১২ ইউনিয়নের ১০ কিলোমিটার বাঁধই ক্ষতিগ্রস্ত।
চাড়িপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব রমেশ সরদার এক সময়ে প্রায় ৪০ কড়া সম্পত্তির মালিক থাকলেও এখন বাঁধের কোণে ঝুপড়ি ঘরই তার শেষ আশ্রয়। ২০০৭ সালের সিডরে তার শেষ সম্বল বসতঘরটি লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার পর থেকে গত ১৩ বছরে চারবার ঘর ভেঙেছে। রাবনাবাঁধ নদীর ভাঙনে বাঁধের পাশেই ঝুপড়ি করে আশ্রয় নিয়েছেন। ঝড়ের সিগন্যাল পেলে কিংবা ঝড়ো বাতাস হলে ঝুপড়ি ছেড়ে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিতে হয়।
লালুয়া গ্রামের কৃষক সিদ্দিক বলেন, ‘তিনবার ঘর ভাঙছে নদীতে। আবার উডাইছি। কিন্তু কয়েক দিন ধইর্যা যে পানি বাড়তেছে মনে হয় আর রক্ষা নাই।’ আমফান কলাপাড়ায় আঘাত না করলেও আতঙ্কে তার মতো তিন সহস্রাধিক ভূমিহীন পরিবার নিরাপদে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। তার কথায়, ‘জোয়ার হইলেই ঘরে পানি ওডে। গত জোবায় (অমাবশ্যায়) তো ঘরের মাচায় উইট্টা বইয়া থাকতে হইছে রাইতে। ঘরে ছোড মাইয়া। রাইতে জোয়ার হইলে বড় বড় চাঙ্গইল লইয়া বান্দের মাডি পড়ার শব্দ হুনি। বুকের মধ্যে তহন ধরফর শুরু হয়। আরতো দশ হাতও নাই বান্দের। সামনের জোবায় মনে হয় আর এইহানে থাকতে পারমু না।’
কলাপাড়ার দুর্যোগকবলিত কাওয়ার চর। ২০০৭ সালের সিডরের জলোচ্ছ্বাসে খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে নিয়েছিল এ চরের বসতঘর ও মানুষ। ঘটেছিল প্রাণহানি। আইলার জলোচ্ছ্বাসেও অনেক ক্ষতি হয়। সাগরের বুকে জেগে ওঠা এই চরে এখন প্রায় সহস্র পরিবারের বাস। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হলেই এই গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিন-চার ফুট পানি বাড়লেই সাগরের জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় বাড়িঘর। কিন্তু সেই মৃত্যুর বালুকূপেই ভূমিহীন পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে।
নিজামপুর বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে আশ্রাফ বিশ্বাস দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, আন্ধারমানিক নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের তাণ্ডবে ঘরে থাকা দায়। তখন যাওয়ার আর কোনো জায়গা থাকে না। এজন্য এই বেড়িবাঁধের ওপর ঝুপড়ি বেঁধে বসবাস করতে হয়।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধের বাইরে ও বাঁধের পাশে যে পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে, ঝড় হলে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু বিকল্প বসবাসের জায়গা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নিশ্চিত মৃত্যু বা ভয়াবহ ক্ষতি জেনেও সেই মৃত্যুকূপেই বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। এ কারণে ঝড় হলেই এরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কলাপাড়ার চাকামইয়া ও চম্পাপুর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশির ভাগ ঘর বর্তমানে খালি পড়ে আছে। অনেক পরিবার ঘর ছেড়ে অন্য স্থানে চলে গেছে। সরকার ভূমিহীন পরিবারগুলোকে এই দু’টি প্রকল্পে পুনর্বাসন করলে শতাধিক পরিবার রক্ষা পেত।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, যাদের জমিজমা নদীতে ভেঙে গেছে তারাই বেশির ভাগ বেড়িবাঁধের ওপরে বসবাস করছে। বন্দোবস্ত এখন বন্ধ। বন্দোবস্ত শুরু হলে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
সখীপুরে সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী সেই আ'লীগ নেতা কারাগারে ফরিদপুরে দুর্ঘটনায় মা-ছেলে নিহত, আহত বাবা-মেয়ে দিরাইয়ে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম গ্রহণের আহ্বান রাষ্ট্রপতির বগুড়ায় পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকভর্তি কলা ছিনতাই : গ্রেফতার ৪ ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থী নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ, চুক্তি বাতিল স্নান করতে গিয়ে দূর্গাসাগর দীঘিতে ডুবে একজনের মৃত্যু ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে লালন করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে : শ্রিংলা মানবতার কল্যাণে জীবন বাজি রেখে আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে হবে : জামায়াত আমির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৭ ফিট তামিমকে যেকোনো ফরম্যাটের দলে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক

সকল