২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চায়ের দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ভয়াবহ ঝুঁকিতে আমতলীবাসী

-

বরগুনার আমতলী উপজেলায় যত্রতত্র চরম ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। অগ্নিনির্বাপক ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়াই লাইব্রেরি, চায়ের দোকান, কাপড়ের দোকান, মুদিমনোহারি, ক্রোকারিজ ও ইলেকট্রোনিকস দোকানসহ যেখানে সেখানে খোলা স্থানে এগুলো বিক্রি হচ্ছে। এতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে আমতলী। যেকোনো সময় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা থাকেলেও এ ব্যাপারে কারো কোনো নজর আছে বলে মনে হয় না।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলায় চারজন গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ডিলার রয়েছেন। কিন্তু ওই চারজন ছাড়া উপজেলা শহরের শতাধিক স্থানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। এসব দোকানে গ্যাস বিক্রির সরকারি কোনো অনুমোদন নেই। নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও বিস্ফোরক লাইসেন্স। এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্যে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করছেন না ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা। তারা তাদের ইচ্ছামাফিক দামে গ্যাস বিক্রি করছেন। সরকারনির্ধারিত সাড়ে ১২ কেজি এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য ৬০০ টাকা। কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানির ডিলাররা বিক্রি করছেন ৭০০ থেকে ৭৮০ টাকায়। আর লাইসেন্সবিহীন খুচরা বিক্রেতারা তা বিক্রি করছেন ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়।
উপজেলা শহরের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সরকারনির্ধারিত মূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে না। আমতলীর দোকানগুলোতে লাফস, জি-গ্যাস, ফ্রেস, টোটাল, নাভানা, জেএমআই, সেনাকল্যাণ, বেক্সিমকো, ওমেরা, ওরিয়ন ও বিএম কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। বেশি দামে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে খুচরা বিক্রেতারা বলেন, ডিলারদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হয় বলে নির্ধারিত দামে বিক্রি করা যায় না। সরকার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম কমালেও ডিলাররা দাম কমাচ্ছেন না। এ দিকে ডিলাররাও জানান, তাদেরকেও কোম্পানির কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হয় বলে খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি দাম রাখতে হয়। তারা বলেন, সরকার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম কমালেও কোম্পানিগুলো কমাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমতলীতে বসুন্ধরা কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডারের ডিলার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, লাফ্স জি-গ্যাস, ফ্রেস ও নাভানা কোম্পানির ডিলার আনিচুর রহমান বাচ্চু, সেনাকল্যাণ ও বেক্সিমকো কোম্পানির ডিলার রেজাউল কবির ও টোটাল ও জেএমআই কোম্পানির ডিলার জব্বার সিকদার। এ চারজন ডিলার ছাড়াও অগ্নিনির্বাপক ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া উপজেলায় দুই শতাধিক বিভিন্ন দোকানে গ্যাস ডিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা তাদের ইচ্ছামাফিক গ্যাস বিক্রি করছেন। সরকারি মূল্যের সাথে কোনো সমন্বয় নেই। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য তালিকা নির্ধারত করে দেয়। ওই তালিকায় দেয়া আছে ১২.৫ কেজির গ্যাস সিলিন্ডার ৬ শ’ টাকা মূল্যে বিক্রি হবে।
গ্যাস ক্রেতা মাঈনুল ইসলাম রাজু বলেন, টোটাল কোম্পানির গ্যাস ৮ শ’ টাকায় কিনেছি। তিনি আরো বলেন, সরকার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম কমালেও আমতলীর গ্যাস বিক্রেতারা দাম কমাচ্ছেন না।
ডিলার আনিচুর রহমান বাচ্চু বলেন, লাফস, জিগ্যাস, ফ্রেস ও নাভানার সিলিন্ডার ৭ শ’ টাকায় বিক্রি করছি। গ্যাসের সিলিন্ডার বেশি দামে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, কোম্পানির কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হয় তাই আমরাও বেশি দামে বিক্রি করছি। তিনি আরো বলেন, অগ্নিনির্বাপক ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া যত্রতত্র স্থানে গ্যাস বিক্রি হচ্ছে।
আমতলীর সচেতন নাগরিক আনোয়ারুল কবির বলেন, রাস্তাজুড়ে ও যত্রযত্র গ্যাস বিক্রি করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও অন্যায়। দ্রুত যত্রতত্র স্থানে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধের দাবি জানাই।
আমতলী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার তামিম হাওলাদার বলেন, গ্যাসের ডিলারদের অগ্নিনির্বাপক লাইসেন্স দেয়া আছে। কিন্তু লাইব্রেরি, চায়ের দোকান, কাপড়ের দোকান, মুদিমনোহারি ও ক্রোকারিজের দোকানে গ্যাস বিক্রির জন্য কোনো অগ্নিনির্বাপক লাইসেন্স দেয়া হয়নি। এসব দোকানে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করা বেআইনি ও ঝুঁকিপুর্ণ।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, অনুমোদিত ডিলারের দোকান ছাড়া যত্রতত্র গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করা যাবে না। অবৈধভাবে যারা গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement