২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেতাগীতে ২ শতাধিক অবৈধ ওয়েল্ডিং কারখানা : কাজ করছে শিশুরা

বেতাগীতে ওয়েল্ডিং কারখানায় কাজ করছে শিশু শ্রমিক : নয়া দিগন্ত -

বরগুনার বেতাগীতে যত্রতত্র সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে অনুমোদনহীন অসংখ্য ওয়েল্ডিং কারখানা। এসব কারখানার অতিআলোক রশ্মির বিচ্ছুরণ ও উচ্চশব্দে শিশু, শিক্ষার্থী, পথচারী, ও বয়স্করাই বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। সেইসাথে এসব কারখানার অতিবেগুনি আলোকরশ্মিতে দৃষ্টি হারাতে বসেছে সড়কে যাতায়াতকারীরা। যত্রতত্র এসব কারখানা নির্মাণে পরিবেশ আইনও মানা হয়নি।
উপজেলার পৌরসভা ও ইউনিয়নের বাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিবিচিনি বাসস্ট্যান্ড, দেশান্তরকাঠী, ফুলতলা, পুটিয়াখালী, ঝোপখালী, বেতাগী পৌরসভা বাসস্ট্যান্ড ও বাজার সড়কের দু’পাশে, হাসপাতাল সড়ক, বেইলি ব্রিজ বাজার, বাসণ্ডা পুলেরহাট, জলিসা বাজার, বটতলা, মোকামিয়া বাজার, মোকামিয়া মাদরাসা বাজার, কাজিরহাট, কাউনিয়া, বদনীখালী, কুমড়াখালী, মায়ার হাট, চান্দখালী বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে অপরিকল্পিতভাবে দুই শতাধিক ওয়েল্ডিং কারখানা গড়ে উঠেছে। আর সবচেয়ে উদ্বেগের কথা হলোÑ এসব কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজে নিয়োজিত রয়েছে অসংখ্য শিশুশ্রমিক। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সড়কের দু’পাশ দখল করে বাস-ট্রাকের জোড়াতালি ও ওয়েল্ডিং, গাড়ির পার্টস কাটা-ছেঁড়া ও জোড়া লাগানো, ঝালাই দেয়া, ফিটনেস ঠিক করা, ঝালাই, রঙ করাসহ সব কাজই করা হচ্ছে এসব অনুমোদনহীন কারখানায়।
বেতাগী বাসস্ট্যান্ডের ওয়েল্ডিং ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম বলেন, প্রতিরোধক ছাড়া খোলাভাবে কাজ করলে চোখের ক্ষতি হয় সেটা আমরা বুঝি। কিন্তু কেউ কালো কাঁচ ব্যবহার করছে না বলে আমিও খুলে রেখেছি।
বেতাগী সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তন্বীর বাবা মন্টু মিয়া বলেন, প্রশাসন সচেতন হলে কারখানার মালিকরা এ ধরনের কাজ করতে পারবে না। এসব কারখানার কারণে ফুটপাথ বেদখল হয়ে গেছে। আমরা চাই প্রশাসনের মাধ্যমে ফুটপাথ দখলমুক্ত করা হোক।
পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানুর রহমান বলেন, রাস্তার পাশে ওয়েল্ডিং কারখানার আসবাবপত্র না রেখে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইন না মানলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেখা যায়, খোলা জায়গায় ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করায় পথচারীদের যেমন সমস্যা হচ্ছে তেমনি চলাচলকারীদের চোখের দৃষ্টিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া কোনো প্রকার প্রতিরোধক ব্যবহার না করেই ওয়েল্ডিং কারখানাগুলোতে শিশু শ্রমিকরা কাজ করছে।
বেতাগী স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: তেন মং বলেন, ওয়েল্ডিংয়ের অতিবেগুনি আলোকরশ্মি সরাসরি চোখের ভেতরে প্রবেশ করলে রেটিনা ও লেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে দৃষ্টির ব্যাপ্তি হ্রাস পেয়ে ধীরে ধীরে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া চোখে পানি পড়া, যন্ত্রণা অনুভব করা, জ্বালাপোড়াসহ আরো নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। জানা যায়, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না থাকলেও প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় দিনে দিনে এই ওয়েল্ডিং কারখানাগুলো আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব আহসান জানান, তিনি ইতোমধ্যে ওয়েল্ডিং কারখানাগুলোর বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযুক্তদের বিষয়ে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement