২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হারিয়ে যাচ্ছে অর্গানিক পেয়ারা ‘কাঞ্চননগর’

-

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী অর্গানিক পেয়ারা চন্দনাইশের ‘কাঞ্চননগর’ হারিয়ে যাওয়ার পথে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এই জাতের পেয়ারা বাগান রক্ষণাবেক্ষণ করা না গেলে খুব দ্রুতই হারিয়ে যাবে অর্গানিক জাতের এই পেয়ারা। দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রয়োজনে পাহাড় ও পাহাড়ের মাটি কাটা এবং যত্রতত্র পেয়ারা বাগান কেটে মাছের খামার গড়ে তোলা এবং ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে একদিকে পেয়ারার ফলন যেমন কমছে অন্য দিকে আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে পেয়ারা বাগান। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, ‘ভিটামিন সি’ তে ভরা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যসম্মত (অর্গানিক) কাঞ্চন নগর জাতের পেয়ারা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যেও রফতানি হতো। এক সময়ে পেয়ারার মৌসুম শুরু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাটবাজারগুলো পাইকারী ও খুচরা পেয়ারা বিক্রেতাদের আনাগোনায় মুখর থাকত কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এসব কারণে পেয়ার বাগান ও ফলন হ্রাস পেতে শুরু করেছে। চলতি মৌসুমে এই প্রভাব আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। এবার পেয়ারার ফল গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এক সময় বছরের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে টানা ৪ মাস ধরে বাগানে উৎপাদিত এই পেয়ারা পাওয়া যেতো। সেই সাথে পেয়ারা বহন করে বাজারে আনা, খুচরা ও পাইকারি বিক্রির সাথে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতো।
এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে নতুন পলি জমার কারণে এখানকার মাটি খুব ঊর্বর। এর ফলে পেয়ারা চারা রোপণ থেকে শুরু করে গাছ বড় হওয়ার পর ফলন আসা ও পরিপক্ক পেয়ারা সংগ্রহ করা পর্যন্ত গাছের গোড়ায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ ও গাছে কোনো প্রকার কীটনাশক ছিটানো প্রয়োজন হয় না। এ কারণে এই পেয়ারাকে স্বাস্থ্যসম্মত বা (অর্গানিক) পেয়ারা বলে। তা ছাড়া চাষিরা ডাটা ও পাতাসহ পেয়ারা সংগ্রহ করে। এ কারণে ফরমালিন ও রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো ছাড়াই ৪-৫ দিন অনায়াসে এ পেয়ারা সংরক্ষণ করা যায়।
এক সময়ে মৌসুমে কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু হতো পেয়ারা চাষি ও শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা। শত শত শ্রমিক কয়েক মাইল পথ পাড়ি দিয়ে পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে তা বিশেষভাবে লালসালুর পুটলিতে মুড়িয়ে কাঁধে করে নিয়ে আসত বাজারে। এরপর লালসালু বাঁধা অবস্থায় থরে থরে সাজানো হয় পেয়ারার সারি। তা দেখে ক্রেতা-বিক্রেতারা সহজেই আকৃষ্ট হতো। স্থানীয় কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, পটিয়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, লোহাগাড়া ও বোয়ালখালী উপজেলায় অন্তত ১০-১২ হাজার একর পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে হাজার হাজার পেয়ারা বাগান ছিল। এখন তত পেয়ারা বাগান নেই। হেক্টর প্রতি গড়ে ১৫ থেকে ১৬ মেট্রিক টন করে পেয়ারা উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হতো।
কৃষি অধিদফতর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আকতারুজ্জমান বলেন, এ অঞ্চলের চাষিরা পেয়ারা গাছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দেন না। তা ছাড়া পেয়ারা সংরক্ষণেও কোনো প্রকার ফরমালিন বা কোনো মেডিসিন ব্যবহার করেন না। কৃষি অধিদফতরের পক্ষ থেকে উপজেলা পর্যায় চাষি ও বাগান মালিকদের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হয়।


আরো সংবাদ



premium cement