১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢেউয়ে লণ্ডভণ্ড জনপদ : গ্রাম প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের দাবি হাওরবাসীর

বন্যা প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করায় নিরাপদে আছে জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক গ্রাম : নয়া দিগন্ত -

সুনামগঞ্জে গত এক মাসে তিন দফা বন্যায় হাওর পাড়ে বসবাসরত বিশাল জনগোষ্ঠী ঢেউয়ের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ঘরের বাইরে করোনাভাইরাসের ভয়, ঘরের ভেতরে বন্যার পানি আর হাওরের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে বাড়িঘর ভাঙতে থাকায় তাদের সব শান্তি উবে গেছে। পর পর বন্যা ও অতিবৃষ্টির সময় খুব নাজেহাল অবস্থায় রয়েছেন তারা। চোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই হাওরের জনবিছিন্ন অধিকাংশ গ্রামবাসী কতটা দুর্ভোগে আছেন। অনেক পরিবারে ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করায় দুঃসহ দিন কাটছে তাদের।
হাওরের উত্তাল ঢেউ থেকে বাঁচতে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় পরিবেশবাদী সংস্থা সিএনআরএস ও কেয়ার বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ২০০২ সালে ফেনারবাঁক, রাজাপুর, উদয়পুর, হঠামারা, নাজিমনগর, মাতারগাঁও-খুঁজারগাঁও বাজারসহ ৭-৮টি গ্রামে বন্যা প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করায় ওই গ্রামগুলোর বাসিন্ধারা ঢেউ ও আফাল থেকে রক্ষা পান। পার্শ¦বর্তী গ্রামের বাসিন্দারাও ঢেউ থেকে তাদের বসতভিটা বাঁচাতে বন্যা প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার কাছে জোর দাবি জানিয়েছে। হাওরের বিছিন্ন পল্লী উদয়পুরের বাসিন্দা রেজুয়া আহম্মদ জানান, বড় হাটিতে সিএনারএসের দেয়াল নির্মাণ করায় তারা ঢেউ থেকে নিরাপদ রয়েছে। ঢেউয়ের কারণে অনেকের ঘরের বেড়া ভেঙে গেছে, ঘরও যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে। হাওরের ঢেউ লাগে এমন গ্রামগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। ফেনারবাঁক ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের সমাজকর্মী আমির হোসেন প্রবাল মিয়া জানান, গজারিয়া নতুন হাটিতে চারদিক থেকেই ঢেউ লেগে অনেক বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। তারা গ্রাম প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণে কারের সুনজর প্রত্যাশা করছেন। এ অবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার লাখ লাখ মানুষ। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছেন তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, হাওরের পানি বৃদ্ধি আর ঢেউয়ের কারণে হাওর পাড়ের হাজরো ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। বসতঘর পানিতে ডুবে যাওয়ায় গবাদিপশু আর গোখাদ্য নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। বন্যার কারণে হাওর এলাকার বয়স্ক মানুষ, নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছেন। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ডুবে যাওয়ায় দুর্ভোগের শেষ নেই। নলকূপ ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। বন্যায় মানুষের ঘরবাড়ি, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, গাছপালা, রাস্তাঘাট, চাষ করা মাছ ভেসে গিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র্রে ও আত্মীয়-স্বজনদের উঁচু জায়গায় অবস্থান করছে। শ্রমজীবী মানুষরা বেকার হয়ে পড়ায় খাদ্যাভাবে খুব কষ্টে রয়েছেন।
গত ২৭ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ছিল বন্যার প্রথম ঢল। এরপর ধীরে ধীরে পানি কমতে থাকে। তবে ১১ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত আরেক দফা ঢলের কারণে বন্যার পানি বেড়ে যায়। পানি কমতে শুরু করার সময় ১৮ জুলাই রাত থেকে অঝোরে বৃষ্টির ঝরার কারণে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে।
জামালগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুস ছাত্তার বলেন, সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের নির্দেশনায় আমাদের একটি টিম হাওরের ঢেউয়ে ভাঙন কবলিত গ্রাম, কবরস্থান, শ্মশান ও গ্রাম্য রাস্তা পরিদর্শন করেছে। বেশি ঢেউয়ে আঘাতে যেসব গ্রাম, কবরস্থান, শ্মশান, গ্রাম্য রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসবের তালিকা করে প্রকল্প নির্মাণে ডিপিটি করা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, সুনামগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকা বিশাল হাওর নিয়েই। প্রত্যন্ত দুর্গম গ্রামগুলোতে বানবাসী মানুষের পাশে গিয়ে প্রতিদিনই খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিক প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বন্যাকবলিত মানুষ যাতে কোনো কষ্ট না করে সে দিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। আগামীতে হাওর এলাকায় বেশি ঢেউ আঘাত করে এমন সব গ্রামে ‘ভিলেজ প্রটেকশন ওয়াল’ বা গ্রাম প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের পরিকল্পনা করছি। বন্যায় মারা যাওয়া মানুষের দাফন ও সৎকার করার জন্য হাওর এলাকার কবরস্থান ও শ্মশানগুলো উঁচু করে নির্মাণ করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement