২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দুর্বিষহ পরিবেশ

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডক্টরস কর্ণার ও ব্লাড ব্যাংকের সামনে চেয়ারে ঘুমাচ্ছে কুকুর : নয়া দিগন্ত -

হাসপাতালে রোগী বহনকারী ট্রলির নিচ দিয়ে একটি কুকুর হেঁটে যাচ্ছে। ওয়ার্ডে বাচ্চা তুলে রীতিমতো সংসার পেতেছে বিড়াল। এ যেন কুকুর-বিড়ালের নিরাপদ আবাসন। ওয়ার্ডে কুকুর-বিড়ালের উৎপাতে অতিষ্ঠ রোগী ও স্বজনেরা বার বার এই সমস্যার কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালেও এখনো মেলেনি কোনো প্রতিকার। এ দিকে কর্তৃপক্ষ কুকুর-বিড়ালের উৎপাতের কথা স্বীকার করে লোকবল স্বল্পতার অযুহাতে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, বিজ্ঞানীরা এমন একটি পরজীবী জীবাণু খুঁজে পেয়েছেন, যা থেকে মানুষ সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আশঙ্কার বিষয় হলো বেশির ভাগ বিড়ালের শরীরেই এই জীবাণু থাকতে পারে। এ ছাড়া কুকুর থেকেও বিভিন্ন মারাত্মক রোগ ছড়াতে পরে।
সরেজমিন দেখা যায়, ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দা ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে শুয়ে থাকা রোগীদের আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুর-বিড়াল। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নিত্যদিনের এ দৃশ্য এখন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। এ নিয়ে রোগীদের হাজারো অভিযোগ থাকলেও মাথাব্যথা নেই কারো।
হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক দিন আগে প্রসব করা বিড়ালের দু’টি বাচ্চা দিব্যি হাসপাতালের ওয়ার্ডে লাফালাফি করে বেড়াচ্ছে। মজা করে খেলছে তারা। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, শয্যার পাশে যে র্যাকে রোগীর জন্য খাবার ও অন্যান্য জিনিস রাখা, বিড়ালের বাচ্চা দু’টি ওই র্যাকে উঠে বসে আছে। এর কিছুক্ষণ পর বাচ্চা দু’টি অস্ত্রোপচার করা রোগীর শয্যার নিচে যে থলেতে রক্ত-পুঁজ জমা হচ্ছে, সেই ব্যাগের ওপরে গিয়ে বসে। এমনটাই দেখা গেছে হাসপাতালে গিয়ে।
প্রতি বিভাগে গড়ে ২-৫টি করে কুকুর-বিড়ালের দেখা মেলে। এসব বিড়াল দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে থাকছে। তবে বিড়ালের উপদ্রব কমানোর জন্য কোনো উদ্যোগ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেই। রাত হলেই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কুকুরের উৎপাতে অতিষ্ঠ রোগীরা। এতে রোগীদের অস্বস্তির পাশাপাশি হাসপাতালের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। এমনকি রোগীর জন্য রাখা খাবারগুলোতেও মুখ দিচ্ছে বিড়াল, যা অত্যন্ত ঝুঁকির বিষয়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, নিজেরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি, বিষয়টি সমাধান করার জন্য। সরকারি কোনো ওয়ার্ড বয় না থাকায় সমস্যা বেড়েই চলছে।
সোহেল নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, দুই দিন ধরে অসুস্থ ছোট ভাইকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন তিনি। দিনের বেলা হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে বিড়ালের অবাধ বিচরণ লক্ষ করা যায়। আবার রাতে কুকুরের উপদ্রব। রোগীর বিছানাতেই থাকছে এসব কুকুর-বিড়াল। দিনে সমস্যা কম হলেও রাতে উৎপাত বেড়ে যায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন সাদিয়া ইসলাম বলেন, মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে আসেন। কিন্তু এই হাসপাতালে কুকুর-বিড়ালের উৎপাতে রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে হাসপাতালের কর্মচারী, নার্স ও আয়াদের বেশ উদাসীন মনে হয়েছে। রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে বলার কিছুই নেই। কিছুটা পরিষ্কার থাকলেও যেভাবে ওয়ার্ডের ভেতরে-বাইরে কুকুর-বিড়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেটা যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।
হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার সার্জারি (পুরুষ) ওয়ার্ডে দায়িত্বরত এক সেবিকা বলেন, বিড়াল শুধু রোগীদের যন্ত্রণা বাড়ায়নি, আমাদেরও অশান্তিতে রেখেছে। বিড়ালগুলো যেখানে-সেখানে পায়খানা করে হাসপাতাল নোংরা করছে। যেখানে সেখানে বাচ্চা উঠাচ্ছে। এত বিড়াল হয়ে গেছে, ভয় পাই কখন এসে আঁচড় কেটে দেবে। যখন-তখন এসে বেডে শুয়ে পড়ছে। চারদিকে লোম উড়ছে। এতে নিজেরাও বিড়াল ও কুকুর বাহিত রোগ নিয়ে চিন্তিত।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা: শামীম কবীর বলেন, আমিও লক্ষ্য করেছি হাসপাতালে কুকুর-বিড়ালের উৎপাত বেড়েছে। এতে জীবাণু ও বিড়ালের পশম ছড়াচ্ছে। নিজেরা থাকাকালীন সময়ে তাড়িয়ে দিই। তবে সরকারি ওয়ার্ড বয় থাকলে এত সমস্যা হতো না। আপাতত রোগী ও স্বজনদের সচেতন থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, অভয়ারণ্য বাংলাদেশ এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কুকুর নিধন বন্ধে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ডিভিশন কুকুর নিধন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এ জন্য কুকুরগুলো আমরা মারতে পারছি না।
এ প্রসঙ্গে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা: এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, আমি এর আগে হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় কুকুর ও বিড়ালের উৎপাতের বিষয়টি লক্ষ করি। সেই সময় আমি বিকেলের মধ্যে হাসপাতালের পেছনের গেট ও রান্নাঘরের গেট বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেই। তার পর থেকে অনেক উৎপাত কমেছে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের নতুন ভবনে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। তাই দুই জায়গায় চিকিৎসা দেয়ায় লোকবলের কিছুটা ঘাটতি হচ্ছে। আর সব সময় হাসপাতালের মেইন গেট খোলা রাখতে হচ্ছে। এ জন্য কুকুর-বিড়াল ঢুকে পড়ছে। এ ছাড়াও হাসপাতালের প্রতিটা ওয়ার্ডের জানালাতে নেট দেয়া হবে, যেন বিড়াল ঢুকতে না পারে। আমরা এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement