১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভাঙনে ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে কুয়াকাটা

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের বর্তমান চেহারা : নয়া দিগন্ত -

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা। এখানে রয়েছে একই স্থান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার বিরল সুযোগ। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারা বছরই পর্যটকের ভিড় থাকে কুয়াকাটায়। তবে শীতকালে বনভোজন ও শিক্ষা সফরের জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার দেশী-বিদেশী পর্যটকের সমাগম ঘটে। তবে প্রচণ্ড ঢেউয়ের আঘাতে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে কুয়াকাটা সৈকত। ভাঙনে নিশ্চিহ্নহ্ন হয়ে যাচ্ছে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্পটগুলো। গত ১৩ বছরে কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যানসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি বিলীন হয়ে গেছে।
অব্যাহত ভাঙনের কবল থেকে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রক্ষায় তিন বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিলেও আজো বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। এ দিকে ‘কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়ার পর ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম কুয়াকাটার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙনের ভয়াবহতা বিস্ময় প্রকাশ করেন। মন্ত্রী সৈকতের ভাঙন রোধ করার পদক্ষেপ নেয়ার কথা বললেও কুয়াকাটা ভাঙন রোধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতকে ১৯৯৮ সালে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণার পর সারা বিশ্বের পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কুয়াকাটা। বিনিয়োগকারীরা হোটেল-মোটেল নির্মাণ করে কুয়াকাটাকে সৌন্দর্যের নগরী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু সাগরের অব্যাহত ভাঙনে সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সৈকত লাগোয়ো সংরক্ষিত বনাঞ্চল। একসময় সৈকতঘেঁষা নারকেল বাগান, তালবাগান ও ঝাউবাগান পর্যটকদের আকৃষ্ট করত।
উপকূলীয় বন বিভাগ পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে সৈকতঘেঁষা ১০ হাজার হেক্টর ভূমির ওপর ঝাউবাগান গড়ে তোলা হয়। কুয়াকাটা বনের আয়তন প্রায় দুই হাজার ১৬৫ একর। তবে ২০০৭ সালে সিডরের পর থেকে ভাঙনের মুখে পড়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। প্রতি বছর অন্তত ১০০ একর বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। গত ১৩ বছরে কুয়াকাটা সংরক্ষিত বনের ১২৩৫ দশমিক ৮০ একর বনাঞ্চল সাগরে বিলীন হয়ে গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ম্যানগ্রোভ বনের আকর্ষণীয় স্থানগুলো ভেঙে যাচ্ছে। জোয়ারের সময় উত্তাল সাগরের বিশাল বিশাল ঢেউয়ের আঘাতে উপড়ে পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। গত পূর্ণিমা ও অমাবস্যার জোতে সমুদ্রের প্রচণ্ড ঢেউয়ে অব্যাহত বালু ক্ষয়ে ১৮ কিলোমিটার বিস্তৃত সৈকত লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। গত এক যুগের ব্যবধানে লতাচাপলী ও কুয়াকাটার মৌজার অন্তত ১১ হাজার একর জমি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছে সৈকতঘেঁষা সবুজ বেষ্টনী, জেলা প্রশাসক কর্তৃক নির্মানধীন সি বিচ, ট্যুরিস্ট পার্ক ও মসজিদ। ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে জাতীয় উদ্যান (ইকোপার্ক), এলজিইডির বায়োগ্যাস প্লান্ট ও বনবিভাগের কয়েক হাজার হেক্টর বনভূমি। সৈকতের কোলঘেঁষে অবস্থিত ছিল প্রকৃতপ্রেমী ফয়েজ মিয়ার নারকেল বাগান। এ বাগানটির প্রতি ছিল ভ্রমণপিপাসু মানুষের বাড়তি আকর্ষণ। ১০ বছর আগেও কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের জিরো পয়েন্টের পশ্চিম পাশে ছিল বিশাল শালবাগান। পূর্ব পাশের প্রায় ২০০ একর জমিতে ছিল নারকেল বাগান। কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করত বাগান দু’টি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঢেউয়ের ঝাপটায় বালু ক্ষয়ে আস্তে আস্তে সাগরে বিলীন হতে থাকে বাগানের এক একটি অংশ। গত বছরের বর্ষা মৌসুমেও ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে বাগানের একটি ক্ষুদ্র অংশ টিকে ছিল, কিন্তু এ বছরের শুরু থেকেই ফয়েজ মিয়ার শখের নারকেল বাগান প্রায় বিলীন হওয়ার পথে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৬০ সালে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা ১৯৭ একর সরকারি জমি ৯৯ বছরের লিজ নিয়ে বাগানটি করেছিলেন ফয়েজ মিয়া। ‘ফার্মস অ্যান্ড ফার্মস’ নামকরণ করে তিনি এ বাগানে নারকেল গাছ ছাড়াও অন্যান্য জাতের গাছ রোপণ করেছিলেন। বাগানে পেয়ারা, কাজু বাদাম, লেবু, কুল, গর্জন বাগানসহ বিভিন্ন জাতের ফলদ ও ঔষধি গাছ ছিল। নারকেল গাছ সংখ্যায় বেশি ছিল বলে বাগানটি নারকেল বাগান নামে পরিচিতি পায়। সকাল-সন্ধ্যা নানা জাতের পাখির কলরব মুখরিত থাকত বাগানটি। গহিন বনে প্রবেশ করতে বন্য হিংস্রপ্রাণী ও অজগরের ভয় ছিল। জোসনা রাতে গাছে গাছে বানর ও বাদুরের দাপাদাপি, শেয়ালের ডাকাডাকি এসব এখন আর নেই।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমতিয়াজ রহমান তুষার বলেন, কুয়াকাটা এখন যেভাবে ভাঙছে তাতে এলাকার লোকজন ও বিনিয়োগকারীরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র বারেক মোল্লা বলেন, সাগর ধেয়ে আসছে। কুয়াকাটা থাকবে কি থাকবে না, জানি না। কুয়াকাটা রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি; যাতে এ ভাঙন রোধ করা যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো: ওয়ালিউজ্জামান জানান, কুয়াকাটার ভাঙন রোধের ব্যাপারে আইআইডব্লিউএম প্রকল্প প্লানিং-২ জমা হয়েছে ৩০ জুন। তা হাতে এলে তারা কাজ শুরু করতে পারেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিসিডিপি গঠন করা হবে : পরিবেশমন্ত্রী অননুমোদিত জমি ভরাট কার্যক্রমের সন্ধান পেলে দ্রুত ব্যবস্থার নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা ইসরাইলকে পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাতের ব্যাপারে সতর্ক করলো আইআরজিসি সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের ১২৮তম প্রয়াণ দিবসে স্মরণ সভা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শূন্য পদ দ্রুত পূরণের নির্দেশ ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে ঝুলন্ত নারীর লাশ উদ্ধার মধুর প্রতিশোধে সিটিকে বিদায় করে সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ রাজশাহীতে ভুয়া তিন সেনা সদস্য গ্রেফতার ডেঙ্গুতে আরো একজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ২৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণ, প্রতিদ্বন্দ্বী আ'লীগ নেতাকে ইসির শোকজ

সকল