১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুহুরী প্রকল্পে অবাধে কয়েক শ’ প্রজাতির মাছ নিধন

-

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে চিংড়িপোনা আহরণে কোনো নিষেধাজ্ঞাই মানছে না এক শ্রেণীর মৎসজীবী। চিংড়ি উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে দেশী ও সামুদ্রিক প্রজাতির অন্যান্য মাছও। মিরসরাই উপজেলার উপকূলীয় জোন ও ফেনীর সোনাগাজীর মধ্যবর্তী এলাকার সমুদ্র উপকূলীয় ফেনী নদীর বিভিন্ন স্থানে ও সাগরের মোহনায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গলদা-বাগদা চিংড়ির রেণু আহরণ করার অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।
সরেজমিন দেখা যায়, নিষিদ্ধ মশারি ও নেট দিয়ে জেলেরা চিংড়ি রেণু আহরণ করে স্থানীয় বেপারীদের কাছে বিক্রি করছে। দ্বিগুণ থেকে কয়েকগুণ দামে সেসব পোনা বেপারীরা বিক্রি করছে খুলনা, বাগেরহাট ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন চিংড়ি ঘের মালিকদের কাছে। ফেনী নদীর মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকা থেকে শুরু করে সাহেরখালী, ডোমখালী, ইছাখালী, বানচন্দ খাল পর্যন্ত এবং ছোট ফেনী নদীর কাজীর হাট স্লুইস গেট থেকে দক্ষিণে সন্দ্বীপ চ্যানেল, ফেনী নদীর মুহুরী রেগুলেটরের দুই পাশে জেলেরা পোনা আহরণ করছে। একইভাবে চর খোন্দকার, সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের জেলেপাড়া, সুজাপুর, থাক খোয়াজ লামছি, ছোট স্লুইস গেট, ভাঙ্গাবেড়ী, চর খোয়াজের লামছিসহ বেশ কিছু স্থানে গিয়ে চিংড়ি রেণু আহরণ ও অন্যান্য মৎস্য পোনা ধ্বংস করছে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা।
দেখা যায়, প্রজনন মৌসুমের এ সময়টায় নদীতে মাছ ধরার প্রতি রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। তারপরও বিস্তৃত উপকূলীয় এলাকায় প্রতিদিনই লাখ লাখ চিংড়ি পোনা আহরণ করা হচ্ছে। তাতে প্রতিদিন অংশ নিচ্ছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, মীরসরাই ও সোনাগাজী উপকূলীয় অঞ্চলের কয়েক শ’ মানুষ।
মুহুরী প্রজেক্ট থেকে চিংড়ি পোনা আহরণ করতে আসা খুলনার আকাশ ও সাগর নামে দুই জেলে জানান, চিংড়ির রেণু পোনা আহরণ করতে দুই মাসের জন্য এ এলাকায় এসেছে। নদী থেকে মশারির জাল দিয়ে অন্য পোনাসহ চিংড়ির পোনাগুলো আহরণ করে তারা। পরে চিংড়িটা রেখে অন্য জলজ প্রাণীগুলো তারা ফেলে দেন। স্থানীয় মহাজনের মাধ্যমে নদী থেকে এ পোনা আহরণ করে প্রতিটি রেণুপোনা দুই টাকা ধরে বিক্রি করেন। দৈনিক জনপ্রতি এক হাজার পর্যন্ত চিংড়ি পোনা আহরণ করেন বলেও জানান তারা। স্থানীয়রা জানান, চিংড়ির রেণু সংগ্রহ করার সময় কোরাল, কাঁকড়া, বাইলা, মলা, ডেলা, চেউয়া, তফসে, বাটা, চাপিলা, কুচিয়া, টেংরা, পোয়া, লইট্টা, ভেটকি, ইলিশ, কাঁচকিসহ আরো অনেক প্রজাতির পোনা জেলেদের জাল বা নেটে উঠে আসে। তারা শুধু চিংড়ি পোনা আহরণ করে বাকিগুলো ফেলে তীরে ফেলে দেয়। যেসব পোনা মুহূর্তের মধ্যে মরে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ করেন, প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই তারা অবাধে মৎস্য পোনা আহরণ ও নিধন করছে স্থানীয় ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা জেলেরা।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, একটি গলদা বা বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা আহরণ করতে গিয়ে অন্য ৪৬৩ প্রজাতির মাছের রেণু পোনা ধ্বংস হয়। আর সাথে নদীর পানিতে বাস করা ক্ষুদ্র জীব কণা ধরা হয় তাহলে তার সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ৭৬৩টি। যা বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ। জরুরি কোনো পদক্ষেপ না নেয়া হলে বাংলাদেশের নদীগুলো ধীরে ধীরে মাছ শূন্য হয়ে যাবে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, চিংড়ির রেণু পোনা ধ্বংস করা অবৈধ, যদি কেউ এভাবে করে থাকে, তাহলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। জনবল সঙ্কট থাকলেও আমরা শিগগিরই এই বিষয়ে মিরসরাই উপকূল ও মুহুরী নদীর মোহনায় অভিযান পরিচালনা করব। তবে পোনা আহরণের অধিকাংশ অংশ ফেনী এলাকায় হওয়ায় ফেনী মৎস্য বিভাগের জরুরি পদক্ষেপ বেশি প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement