২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাগমারায় যত্রতত্র পুকুর কমছে কৃষিজমি

বাগমারায় কৃষি জমিতে চলছে পুকুর খনন :নয়া দিগন্ত -

রাজশাহীর বাগমারায় ফসলি জমির প্রকৃতি (শ্রেণী) পরিবর্তন করে যত্রতত্রভাবে পুকুর খনন অব্যাহত রয়েছে। প্রভাবশালী একটি মহল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে আবাদি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন অব্যাহত রাখলেও স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে। এতে কৃষি জমির পরিমাণই কমে যাচ্ছে এবং হুমকির মুখে পড়ছে চাষাবাদ।
জানা যায়, একটি প্রভাবশালী মহল উপজেলার খাল-বিল ক্ষমতার জোরে দখল করে নিয়ে যত্রতত্রভাবে পুকুর খনন করে মাছ চাষের নামে জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে যাচ্ছেন। এতে বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমি অনাবাদি পড়ে থাকছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ রয়েছে জমির প্রকৃতি (শ্রেণী) পরিবর্তন করা যাবে না। আইনের তোয়াক্কা না করে ফসলি জমিতে চলছে হরদম পুকুর খনন। গত এক মাসে উপজেলার শুভডাঙ্গা, ঝিকরা, গোবিন্দপাড়া ও যোগীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালীরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে জমির প্রকৃতি (শ্রেণী) পরিবর্তন করে পুকুর খনন চালিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নীরব ছিল। বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পুকুর খনন কাজ চলছে বলে স্থানীয় কৃষকরা দাবি করেছেন।
হাট ঝিকরা এলাকার আবদুর রশিদ ও আবদুল মতিনসহ কয়েকজন কৃষক জানান, গত চার-পাঁচ দিন ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে মিজান নামে এক পুকুর ব্যবসায়ী ঝিকরা ইউনিয়নের পাইতা বিলে ৬০ বিঘা আবাদি জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে পুকুর খনন করছেন। কয়েক দিন আগে প্রভাব খাটিয়ে বাগমারা উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মরিয়ম বিবি মচমইল বিলে অবৈধভাবে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করেন। এ ছাড়া যোগীপাড়া ইউনিয়নের বীরকুৎসা এলাকার খাজাদ্দীন, গপিনাথপুর গ্রামের দুলাল ও শান্তিপুর গ্রামের খলিলুর রহমান দিনে-রাতে সমান তালে পুকুর খনন অব্যাহত রেখেছেন। ব্যবসার নামে ফসলি জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করলেও কেউ এগিয়ে আসছে না বলে কৃষকরা দাবি করেন।
কৃষকদের অভিযোগ প্রভাবশালীদের হাত থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও ফসলি জমিতে নিয়মবহির্ভূত অপরিকল্পিত পুকুর খনন বন্ধের জন্য দফায় দফায় ভুক্তভোগীরা একাধিকবার স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি বলে তারা দাবি করেন। পুকুর খননকারীরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে তাদের অভিযোগ। উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের সগুনা গ্রামের নুর মোহম্মাদ জানান, নন্দনপুর, বালানগর ও সগুনার মধ্য দিয়ে গোপালপুর হয়ে একটি খাল রানী নদীতে পড়েছে। বর্তমানে খাল-বিলে অপরিকল্পিত নতুন নতুন পুকুর খননের ধারাবাহিকতায় এলাকার কিছু প্রভাবশালী ফসলের এই নিচু জমিতে কিছু অংশ খুঁড়ে খননকৃত পুকুরের চার দিকে মাটি দিয়ে বাঁধ দিয়ে গভীর নলকূপ দিয়ে পানি জমা করে দেদার মাছ চাষ করছেন। লাভ পেয়ে মহল বিশেষে সর্বত্র এলাকায় এই ব্যবসা ছড়িয়ে ফেলছে। এতে হাতেগোনা কয়েকজন কৃষক লাভবান হলেও বেশির ভাগ জমির মালিক কৃষিকাজ করতে পারছেন না জলাবদ্ধতায়। তাদের অভিযোগ, গত কয়েকবার আষাঢ় মাসে অধিক বৃষ্টিতে নদ-নদী খাল-বিল ও পুকুর ভরে যায়। টানা বর্ষণে নদ-নদী খাল-বিল ও পুকুর পরিপূর্ণ হয়ে পানি নামার অব্যবস্থাপনার কারণে বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চলের পাট, পানবরজ, মরিচ ও শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য প্রশাসনে একাধিকবার জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
এ দিকে কৃষিজমিতে পুকুর বা দীঘি খনন না করার আবেদন জানিয়ে উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে জালাল উদ্দিন নামে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী রিট পিটিশন করেন। পরে আদালত এসব পুকুর খনন বন্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করে পুকুর বা দীঘি খনন বন্ধের ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয়ায় অবৈধ পুকুর খনন অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা আদালত অবমাননার শামিল বলে আইনজীবী জালাল উদ্দিন দাবি করেছেন।
বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বলেন, ফসলিজমির প্রকৃতি (শ্রেণী) পরিবর্তন করে পুকুর খনন করা যাবে না। কেউ তা করলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement