২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুনামগঞ্জে বন্যায় অভ্যন্তরীণ সড়ক লণ্ডভণ্ড : শত কোটি টাকার ক্ষতি

সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের উজ্জ্বলপুর রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় এখন নৌকায় পারাপার হতে হয় : নয়া দিগন্ত -

সুনামগঞ্জে সম্প্রতি পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক- দোয়ারা, দিরাই উপজেলাসহ সব উপজেলাতেই অভ্যন্তরীণ পাকা সড়ক, গ্রামীণ সড়কপথ ভেঙে বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার কারণে সড়ক বিভাগের শত কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। সড়ক ভেঙে যাওয়ার কারণে জেলা শহরের সাথে কয়েকটি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় জনসাধারণ চলাচলের ক্ষেত্রে খুব দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিভিন্ন সড়ক ভেঙে যাওয়ার কারণে খেয়া-ফেরি-নৌকা দিয়ে পারাপারের মাধ্যমে জেলা শহর ও উপজেলার সাথে যাতায়াত চালু রাখা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ১১টি উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলায় দোয়রাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কের কাটাখালী নোওয়াগাঁও এবং জামালগঞ্জ-কাঠইর সড়কের উজ্জ্বলপুর অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়াসহ তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুরসহ ১১ উপজেলায় ১৫০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থান বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ৮০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও জেলা সদরের সাথে অন্যান্য উপজেলার সড়ক ব্যাপকভাবে ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, টানা বর্ষণে বন্যার সৃষ্টি হওয়ায় রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। আর পাহাড়ি ঢলের চাপে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কসহ বিভিন্ন স্থানের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সড়কসহ জেলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে করে ২০ কোটি টাকারো বেশি ক্ষতি হয়েছে। যেসব ভাঙা সড়ক দিয়ে কোনো রকমে চলাচল করা যায় সেসব সড়ক দিয়ে যোগাযোগ চালু রাখার জন্য বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সড়কপথে যে কাজ করেছে তার মান খুবই খারাপ বলে অভিযোগ উঠেছে সচেতন মহলে। এ কারণে কাজ করার পরেই গর্ত হয়ে প্রায় সবখানেই ভেঙে যায় আর বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তার কার্পেটিং নষ্ট হয়ে যায়। এসব সড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ও হেঁটে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ে। পাহাড়ি ঢলে যাতে করে সড়ক ডুবে না যায় সে জন্য সড়ক উঁচু করে, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি দাবি করেছে সচেতন মহল।
সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কে চলাচল করেন এমন যাত্রীরা জানান, কাঠইর নামক স্থানে যেমনতেমন করে রাস্তার কাজ করা হয়। বৃষ্টি হলেই জীবন বাজি রেখে চলতে হয়। সম্প্রতি বন্যায় জামালগঞ্জের উজ্জ্বলপুরের সামনে যে ভাঙন দেখা দিয়েছে তা কল্পনাই করা যায় না। এখন সেখানে ফেরিতে পার হতে গিয়ে ভাড়ার নামে চাঁদাবাজিও হচ্ছে। এই অংশে এখন নৌকা দিয়ে হোন্ডা ও মানুষ পারাপার চলছে। এই সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালি এবং সঠিকভাবে কাজ না করে নয়ছয় করার কারণে দুর্ভোগ যেন শেষ হয়নি।
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, সড়কের ভাঙনে প্রথমে পারাপারে কিছু সমস্যা ছিল। এটা সমাধানের জন্য উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির পরামর্শে ১৫ দিনের জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে সাময়িক লিজ দেয়া হয়েছে। ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি। পরবর্তী সময়ে লিজ নেয়া ব্যক্তিকে ডেকে বলা হয়েছে, এখন উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে মিটিং করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম জিলানী অফিন্দী রাজু বলেন, উজ্জ্বলপুর ভাঙনের পরই আমরা পরিষদ থেকে চেষ্টা করেছিলাম পরিষদের খরচে জনগণকে ফ্রি পারাপার করতে। পরে সবার সম্মতিতে ১৫ দিনের লিজ দেয়া হয়েছে। ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগ শুনেছি। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন সমন্বয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব জনগণকে সুবিধা দিয়ে দুঃসময়ে তাদের পাশে থাকতে।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, চলতি বন্যায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এক শ’ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় এক শ’ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মর্মে ধারণা করছি। গুরুত্বপৃর্ণ সড়কগুলো ভেঙে যাওয়ায় জেলা সদরের সাথে কয়েকটি সড়কের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, বন্যায় সুনামগঞ্জে অভ্যন্তরীণ সড়কের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো পরিদর্শন করছি এবং সংশ্লিষ্টদের দ্রুত কাজ করতে বলা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement