১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নওগাঁয় তিন ফসলি জমিতে দেদার পুকুর খনন : কৃষি উৎপাদনে বিপর্যয়

নওগাঁর বিভিন্ন এলাকায় এভাবে কৃষি জমি কেটে পুকুরে পরিণত করা হচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

দেশের উত্তরাঞ্চলের খাদ্যভাণ্ডার খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুরে ফসলি জমিতে অবাধে চলছে পুকুর খনন। ফলে দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমছে আবাদি জমি। মহাদেবপুর ধান ও সবজি চাষনির্ভর একটি উপজেলা। এখানে উৎপাদিত খাদ্যশস্য স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় খাদ্যভাণ্ডারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে এবং উপজেলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছে। কিন্তু এভাবে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খননের হিড়িক পড়ায় ধান ও সবজি উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এভাবে চললে এই শস্যভাণ্ডারে বিপর্যয় নেমে আসবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
এক শ্রেণীর পুকুর ব্যবসায়ী দিনরাত পুকুর খনন করে সেই মাটি আবার মহাদেবপুর, পতœীতলা, মান্দা ও নওগাঁ সদর উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করছেন। এতে কৃষকরা হারাচ্ছেন, তাদের উর্বর তিন ফসলি জমি। অন্য দিকে পুকুর ব্যবসায়ীরা আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন।
জানা যায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে প্রকাশ্যে এসকেবেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে জমি খনন করে পুকুর তৈরি করা হচ্ছে। এতে এক দিকে যেমন জমির শ্রেণী পরিবর্তন হচ্ছে। অন্য দিকে আবাদি জমিতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ব্যাহত হচ্ছে সেচব্যবস্থাও।
নদী-নালা খাল-বিল বাদে উপজেলায় প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। শ্রেণী ভেদে প্রায় সব জমিতেই সারা বছর কোনো না কোনো ফসল আবাদ হয়। গত দু’বছরে উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় প্রায় ৮০০ বিঘা জমি পুকুরে পরিণত হয়েছে। কৃষকরা প্রতি বিঘা জমি ১০-১২ হাজার টাকায় ৫-১০ বছর মেয়াদে চুক্তিনামা করে পুকুর খননের জন্য ব্যবসায়ীদের লিজ দিচ্ছেন। সেসব জমিতে খননযন্ত্র বসিয়ে চার দিকে বাঁধ দিয়ে ১০-১২ ফুট গভীর করে চলছে পুকুর খনন। আবার সেই জমির মাটি প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) ৪০০-৫০০ টাকায় বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন পুকুর ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহাদেবপুর সদর ইউনিয়নের খাপড়া মৌজার ছয় বিঘা তিন ফসলি উর্বর জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। উপজেলা সদরের কাচারীপাড়া এলাকার বাসিন্দা কালাম কাজী ও তার ছেলে সাঈদ কাজী ভূমি আইন উপেক্ষা করে ওই পুকুর খনন করছেন। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে পুকুর খননের বিষয়টি স্থানীয়রা গত ৩১ মে রোববার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার সরেজমিন গিয়ে খননকাজ বন্ধ করে দেন এবং এসকেবেটরের চাবি জব্দ করেন। কিন্তু ওই দিন সন্ধ্যায়ই কালাম কাজী ও তার ছেলে সাঈদ কাজী উপজেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে অদৃশ্য শক্তি প্রয়োগ করে আবারো দু’টি এসকেবেটর বসিয়ে দুর্বার গতিতে খননকাজ শুরু করেন। খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, এক শ্রেণীর মুনাফালোভী ব্যবসায়ী আবাদি জমির মাটি বিক্রির জন্য পুকুর খনন করছেন। গভীর করে পুকুর খনন করায় আশপাশের জমি ধসে ও দেবে যাচ্ছে।
পুকুর খননের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাঈদ কাজী বলেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পুকুর খনন করছি। গণমাধ্যমকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করলে প্রশাসন মন খারাপ করবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, পুকুর খননের ফলে ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। এতে ফসলের উৎপাদন কমছে। তিনি আরো বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুকুর খনন করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে কেউ মানছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান বলেন, সাঈদ কাজীকে তিন ফসলি জমিতে পুকুর কাটতে নিষেধ করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। শ্রেণী পরিবর্তন করে ফসলি জমিতে পুকুর কাটা যাবে না। তিনি আরো বলেন, ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোকে ফসলি জমিতে পুকুর খননকারীদের তালিকা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তালিকা হাতে পেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement