২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
প্রভাবশালীদের যত্রতত্র পুকুর খনন

ফুলবাড়ীতে জলাবদ্ধতায় ২২০০ বিঘা জমির ধান নষ্ট

ফুলবাড়ীতে পানিতে ডুবে থাকা ধান কাটার চেষ্টা করছেন কৃষকরা : নয়া দিগন্ত -

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে যত্রতত্র পুকুর খনন করায় কৃষিজমির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় কৃত্রিম জলাবদ্ধতার মাশুল দিচ্ছেন কৃষকেরা। ঘূর্ণিঝড় আমফান ও গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কয়েক শ’ বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের মাধায় হাত পড়েছে। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে মাঠের পর মাঠের প্রায় ঘরে তোলার উপযোগী ধান। সেই সাথে শ্রমিক সঙ্কট কৃষকের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে ফসল ঘরে তোলা নিয়ে রীতিমতো শঙ্কায় পড়েছেন ফুলবাড়ীসহ অত্র এলাকার কৃষকেরা।
কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে উপজেলার খয়েরবাড়ী, শিবনগর ও দৌলতপুর ইউনিয়নের ১০-১৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে কয়েক শ’ বিঘা জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে।
সরেজমিন গিয়ে যায় উপজেলার খয়েরবাড়ী, শিবনগর ও দৌলতপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় পাকা ধানের জমি পানির নিচে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পাকা ধান দিয়ে শিকড় বের হচ্ছে। কৃষকেরা কোমর পানিতে নেমে ধান কাটছেন। আবার কেউ কেউ নৌকা ও কলার ভেলা দিয়ে ধান কেটে সড়কে নিয়ে এসে মাড়াই করছেন। আবার যেসব কৃষকের ধান পুরোপুরি তলিয়ে গেছে তারা ফসলের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। সোনার ফসল হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। অনেক কৃষক পুঁজি হারানোর দুঃখে কপাল চাপড়াচ্ছেন। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় কৃষকরা পড়েছেন সর্বনাশের মুখে। এই এলাকায় উজান থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি স্বাভাবিকভাবে খাল দিয়ে পাশের ছোট যমুনা নদীতে প্রবাহিত হয়। কিন্তু গত দুই বছর ধরে এলাকার একটি প্রভাবশালী চক্র পানি নিষ্কাশনের পথ রোধ করে পুকুর খনন করছে। এতে পানি নেমে যেতে পারছে না। ফলে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের মহদীপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় ভারী বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তার পাঁচ বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। একইভাবে তলিয়ে গেছে তার ভাই হাফিজুর রহমান ও সিরাজুলের ধানও। বারাইপাড়া বাচ্চু মিয়া বলেন, তার দেড় বিঘা জমি তলিয়ে গেছে। একইভাবে তলিয়ে গেছে মহদীপুর গ্রামের রুহুল আমিন, আলম মিয়াসহ লালপুর, মহেষপুর, পুর্ব নারায়ণপুর, কিসমতলালপুর গ্রামের দেড় থেকে দুই শ’ কৃষকের ধান। শিবনগর ইউনিয়নের রামভদ্রপুর, শিবনগর, মহেষপুর প্রভৃতি গ্রামের ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
কৃষকেরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ৩০ মণ করে বোরো ধান উৎপাদন হলেও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শতকরা ৩০ ভাগ ধানও তারা ঘরে তুলতে পারছেন না। কৃষকরা বলেন, পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে ধান কাটার শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে তাদেরকে তিন হাজারের বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এতে করে তাদের মাথায় হাত পড়েছে।
খয়েরবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের মণ্ডল বলেন, গত কয়েক বছর থেকে পানি নিষ্কাশনের পথ রোধ করে ঘোনাপাড়া মৌজায় পুকুর খনন করায় খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব নারায়ণপুর, লালপুর, মহদীপুর, মহেষপুর, কিসমত লালপুর, উত্তর লক্ষ্মিপুর ও অম্রবাড়ী এবং দৌলতপুর ইউনিয়নের গড়পিংলাই ও বারাইপাড়া মৌজার প্রায় ২২ শ’ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। এসব জমির ৬০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে, বাকি ৪০ ভাগ জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এ জন্য তিনি পানি নিষ্কাশনের পথ সৃষ্টি করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ টি এম হামীম আশরাফ বলেন, ইতোমধ্যে অনেক জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। এসব এলাকায় ২০ ভাগ জমির ধান তলিয়ে গেছে। এতে করে ১০ ভাগ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement