২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মধ্যবিত্ত পরিবারে চাপা কান্না

না পারছেন কাউকে বলতে না পারছেন ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতে

-

ঘরে খাবার নেই, কিন্তু বলতে পারছেন না কাউকে। যা খাবার সঞ্চয় করেছিলেন তাও শেষ। এখন ধার-দেনায় জর্জরিত হয়ে কী করবেন তার কূল-কিনারা পাচ্ছেন না। নিম্নবিত্তরা সরকারি-বেরসকারি সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে কোনোরকমে চলছেন, কিন্তু বন্ধ হয়ে গেছে মধ্যবিত্তের সংসারের চাকা। যাদের দিন চলত বেসরকারি চাকরির বেতন দিয়ে অথবা কোনো ছোটখাটো ব্যবসাবাণিজ্য করে দৈনিক আয় দিয়ে সংসার চালাতেন, তারা এখন খুব কষ্টে রয়েছেন। না পারছেন কাউকে বলতে, না পারছেন সইতে। লোকলজ্জার ভয়ে দাঁড়াতে পারছেন না ত্রাণের জন্য লাইনে। এই ১৬ দিনেই নাস্তানাবুদ অবস্থা। আরো কত দিন চলবে করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য অঘোষিত লকডাউন, সে কথাও বলতে পারছেন না কেউ। ১০ টাকা কেজি দরের চালও কিনতেও পারছেন না মধ্যবিত্ত মানুষ। আবার ঘরেও খাবার নেই। এই অবস্থা এখন দিনাজপুরসহ দেশের সব জেলার মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর। এই পরিবারগুলোতে চলছে চাপা কান্না।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব থমকে গেছে, বন্ধ হয়ে গেছে অর্থনীতির চাকা। দোকানপাট, ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ, ঘুরছে না আর শিল্প-কলকারখানা ও গাড়ির চাকা। করোনা নামের এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সারা বিশ্ব আজ স্তব্ধ। বাংলাদেশেও দেখা দিয়েছে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, বাড়ছে ঝুঁকির আশঙ্কা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ রাখার জন্য গণপরিবহন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। এমন অবস্থায় ঘরবন্দী মানুষ। সাধারণ কর্মজীবী মানুষ এখন কর্মহীন। ভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করলেও পরে তা বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল এবং আরো পরে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করায় দিন গুনছিলেন তারা। সর্বশেষ আরো ১১ দিন ছুটি বাড়ায় যেন অন্ধকার নেমে এসেছে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জীবনে। সামনে কী অনিশ্চিত জীবন অপেক্ষা করছে তা তারা জানেন না। করোনা আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও না খেয়ে কত মানুষের জীবন যাবে, কত অবুঝ শিশু দুধের অভাবে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করবে কেউ জানে না।
দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কর্মহীন হয়ে পড়ায় এসব মানুষের পক্ষে তাদের পরিবারের খাবার জোগাড় করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। লোকলজ্জার কারণে কারো কাছে সাহায্য চাইতেও পারছেন না, পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। কোথাও মুখ ফুটে বলতেও পারছেন না তাদের অসহায়ত্বের কথা। নি¤œবিত্তদের সরকার সহায়তা করছে, অনেক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। খাদ্য বিতরণে নিম্নবিত্তরা কিছুটা সুফল ভোগ করছে। কিন্তু ভালো নেই মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। লোকচক্ষুর ভয়ে তারা লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণও আনতে পারছেন না। আত্মসম্মানবোধ তাদের বাধা দিচ্ছে। ফলে ঘরে না খেয়ে থাকলেও বের হচ্ছেন না তারা।
দিনাজপুর শহরের একটি কাপড়ের শোরুমে চাকরি করেন এক ব্যক্তি। বেতন যা পান তাতে মোটামুটি সংসার চলে। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে শোরুম বন্ধ। এ অবস্থায় চিন্তায় তার কপাল কুঁচকে গেছে। কী করবেন, কী করা উচিত ভেবে উঠতে পারছেন না। সংসার চালাতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে, চক্ষু লজ্জায় কারো কাছেই কষ্টগুলো প্রকাশ করতে পারছেন না। একইভাবে একজন ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, নিম্নবিত্তরা সরকারি ত্রাণ পাচ্ছে, বেসরকারি সহায়তা পাচ্ছে, কিন্তু মধ্যবিত্তের কী হবে? দোকান বন্ধ, ঘরে খাবার শেষ হয়ে আসছে। দুই-একদিনের মধ্যেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপদে পড়তে হবে। আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠলেও দোকান খোলার সাথেই আছে ব্যাংক সুদের জ্বালা। ঠিক কী করবেন তা এই মুহূর্তে ভেবে কূল পাচ্ছেন না। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের কথা অন্যের উদাহরণ দিয়ে তুলে ধরছেন, মধ্যবিত্তদের কথা, তাতে কী! কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না, তবুও কষ্টের কথা চেপে রেখে কোনো রকমে কান্নাটাকে আড়াল করে লোকের সামনে হাসির অভিনয় করে যাচ্ছেন তারা। একজন বেসরকারি শিক্ষক জানিয়েছেন, পুরো মাস একটি মুদিরদোকানে তিনি বাকিতে বাজার করতেন, এক মাসের টাকা পরের মাসে বেতন তুলে দিতেন দোকানিকে। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের বেতন হয় শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু বর্তমানে প্রতিষ্ঠান বন্ধ, তাই বেতনও পাচ্ছেন না শিক্ষক-কর্মচারীরা। ফলে বাকির দোকানিকে কী বলবেন? তা ছাড়া ওই দোকানিরও তো সমস্যা। না পেরে আত্মীয়স্বজনের কাছে ধার নিয়ে এক মাসের টাকা দোকানিকে দিলেও পরে নগদ টাকায় কিনতে হচ্ছে সদাই। ফলে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের কাছে ধারদেনায় পড়েছেন। শেষমেশ আত্মীয়স্বজনও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। পেছনে নানা কথাও বলছেন আত্মীয়স্বজন। প্রচণ্ড হতাশা নিয়ে একইভাবে এক এনজিওকর্মী বলেন, ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে কিছুই জানি না। স্বপ্ন ছিল একটি সুন্দর আগামী দিনের। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ করোনা নামের এক প্রাণঘাতী ভাইরাস ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়তো খাবার জন্যই মরতে হবে। এ পরিস্থিতির শিকার পেশাজীবী অনেক মানুষ।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক জানান, করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি রোধে সরকার ঘোষিত বন্ধের কারণে শ্রমজীবীদের পাশাপাশি পেশাজীবী মধ্যবিত্তদের কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। এই বাস্তবতায় মধ্যবিত্তদের সম্মানের দিক বিবেচনা করেই তাদের সহায়তা দেয়া হবে। তিনি বলেন, যদি কোনো মধ্যবিত্ত পরিবারের কেউ যোগাযোগ করেন তাহলে সম্মানের দিক বিবেচনা করে গোপনে তাদের বাড়িতে সহায়তা পাঠিয়ে দেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দূত হলেন উসাইন বোল্ট ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৭ বাংলাদেশে নতুন করে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা হিট অ্যালার্ট নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের নতুন বার্তা ভান্ডারিয়ায় পিকআপ চাপায় বৃদ্ধ নিহত হোচট খেল লিভারপুল, পিছিয়ে গেল শিরোপা দৌড়ে যোদ্ধাদের দেখতে প্রকাশ্যে এলেন হামাস নেতা সিনওয়ার! ফের পন্থ ঝড়, ঘরের মাঠে গুজরাটকে হারাল দিল্লি ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ আরো বেড়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্নীতি, পুতিনের নির্দেশে গ্রেফতার রুশ উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী! 

সকল