২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
করোনাভাইরাসের প্রভাব

মিরসরাইয়ে ক্ষতির মুখে পোলট্রি দুগ্ধ খামারি ও মৎস্য চাষীরা

মিরসরাইয়ে অবস্থিত নাহার ডেইরি ফার্ম : নয়া দিগন্ত -

মহামারী করোনাভাইসের প্রভাবে সারা দেশের মতো চট্টগ্রামের মিরসরাইয়েও অঘোষিত লকডাউন চলছে। মানুষ বাইরে বের না হয়ে ঘরেই অবস্থান করছে। এতে জনমানব শূন্য হয়ে পড়েছে রাস্তাঘাট ও হাটবাজার। এ জন্য দোকানপাট বন্ধ থাকায় পচনশীল পণ্য সংরক্ষণের কোনো সুযোগ না থাকায় ক্ষতির মুখে পোলট্রি, দুগ্ধ খামারি ও মৎস্য চাষিরা। এতে দৈনিক প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে সে নিশ্চয়তা না দেখতে পেয়ে চাষি ও সমবায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
মিরসরাই উপজেলা পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলা উদ্দিন জানান, উপজেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৯০০ খামারি রয়েছে। এমনিতে এবছর খামারিদের অবস্থা ভালো না। রোগবালাই লেগেই আছে। মেডিসিনের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি। এখন মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে অচলাবস্থা থাকায় হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বিয়েসহ অনুষ্ঠানাদি বন্ধ থাকায় খামারিরা মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
উপজেলার মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার খামারি মো: মোশারফ হোসেন বলেন, এত দিন মুরগির মূল্য কম ছিল, এখন লকডাউন অবস্থায় মুরগি নিয়ে কোথায় যাবো? খরচ তোলা তো দূরে থাক, কিভাবে শ্রমিকদের বেতন দেবো বুঝতে পাচ্ছি না।
মিরসরাই ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো: হেদায়েত উল্লাহ বলেন, দেশের এমন পরিস্থিতিতে আমাদের মরণের অবস্থা হয়েছে। উপজেলায় ছোট বড় প্রায় ১০০ ডেইরি খামার রয়েছে। এসব খামারে প্রতিদিন ৪ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। বেশির ভাগ খামারি উৎপাদিত দুধ মিষ্টির দোকানে বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু করোনার কারণে অন্যান্য দোকানেও মতো মিষ্টির দোকানও বন্ধ। তাই খামারিরা দুধ বিক্রি করতে পারছেন না। খুচরা যারা দুধ কিনত তারাও কিনছে না। এতে খামারিরা চরম বিপাকে পড়েছেন। অন্য দিকে খামারের প্রাণী খাদ্য শ্রমিক পরিচালনায় প্রতিদিন টাকা খরচ হচ্ছে। এ দুর্যোগের সময় প্রাণী খাদ্যের দামও বেড়ে গেছে। এ ছাড়া দুধ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন দেশের অন্যতম ডেইরি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নাহার ডেইরি ফার্ম। কোম্পানির ম্যানেজার (প্রশাসন) ফাইম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আমাদের ফার্মে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়ে থাকে। এখন অচলাবস্থার কারণে বিভিন্ন স্থানে দুধ সরবারহ বন্ধ রয়েছে।
এ ছাড়া ক্ষতির মুখে পড়েছে চট্টগ্রামের মৎস্য জোন হিসেবে পরিচিত মুহুরী মৎস্য প্রকল্পের পাঁচ শতাধিক মৎস্য চাষি। চট্টগ্রামের মাছের চাহিদার ৭৫ ভাগ মাছ সরবরাহ করা হয় এখান থেকে। বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। করোনাভাইরাসের কারণে মাছ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে চাষিদের।
আনোয়ার এগ্রো মৎস্য প্রকল্পের স্বত্বাধিকারী মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে প্রকল্প থেকে মাছ তোলা বন্ধ রয়েছে। কারণ মাছ তুলে কোথায় নিয়ে যাবো? কার কার কাছে বিক্রি করবো? অনেক প্রজাতির মাছ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তুলে ফেলতে হয়, তা নাহলে রোগ বালাই দেখা দেয়।
মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শতাধিক ডেইরি ও ৮০০ ছোট-বড় পোলট্রি খামারি। সব কিছু বন্ধ থাকার কারণে ডেইরি খামারে উৎপাদিত দুধ ও পোলট্রি খামারে উৎপাদিত মুরগি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও নাহার এগ্রো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুর রহমান টুটুল জানান, দেশে গার্মেন্ট শিল্পের পরেই পোলট্রি শিল্পের অবস্থান। গ্রামভিত্তিক শিক্ষিত যুবকরা পোলট্রি ফার্ম করে তারা যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন, তেমনি দেশের পুষ্টির চাহিদা মেটাচ্ছেন। বর্তমানে মুরগির একদিন বয়সী বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ কেউ দুই থেকে ৫ টাকায় বিক্রি করতে চেয়েও ব্যর্থ হচ্ছেন। যেহেতু বিক্রি নেই, তাই উৎপাদকরা বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ করে দেবেন। আগামীতে দেশে মুরগির সঙ্কট দেখা দেবে। বর্তমানে যে অচল অবস্থা চলছে, তা একমাস চললে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা এই খাতে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। মৎস্য ও ডেইরি খাতও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement