১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মানবেতর অবস্থায় বেনাপোল স্থলবন্দরের শ্রমিকরা

সুমসাম নীরবতা বেনাপোল বন্দরে : নয়া দিগন্ত -

করোনাভাইরাস আতঙ্কে বেনাপোল স্থলবন্দর যেন থেমে গেছে। নেই কোনো কোলাহল ও কর্মচাঞ্চল্য। কাজকর্ম বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বন্দরের হ্যান্ডেলিং শ্রমিকরা। ভারতের লকডাউন ঘোষণার পর গত ২৩ মার্চ থেকে ভারতের পেট্টাপোল দিয়ে সব ধরনের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাংলাদেশ সরকার ২৬ মার্চ থেকে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে একটানা ছুটি ঘোষণা করায় বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কর্মচঞ্চল এই বন্দরে আমদানি-রফতানি ও পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় এখন সুনসান নীরবতা। বেকার হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন নো ওয়ার্ক নো-পে ভিত্তিতে কর্মরত প্রায় এক হাজার ২০০ হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ও আড়াই হাজার কর্মচারী।
বেনাপোল স্থলবন্দরে দু’টি নিবন্ধিত শ্রমিক হ্যান্ডেলিং ইউনিয়ন ও একটি স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ও কর্মচারীরা এখন পুরোপুরি অসহায়। করোনাভাইরাস যাতে ছড়াতে না পারে সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতো তারা বড়িতে অবস্থান করছেন। খুব প্রয়োজন ছাড়া তারা বাড়ির বাইরে যান না বলে জানিয়েছেন বেনাপোল হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি রাজু আহম্মেদ।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় অনেকেরই নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু কাজ না থাকায় তারা এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন। কিভাবে সংসার চালাবেন তার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। এমনকি সরকারি কোনো সহযোগিতা তারা পাননি এবং খোঁজখবর নিতে আসেননি কেউ।
বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জানে বলেন, অনেকের ঘরে এখন হাহাকার চলছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এসব শ্রমিকের পরিবারে এখন পর্যন্ত কোনো খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হয়নি। সামান্য চাল, ডাল, আলু ও তেলের চাহিদা থাকলেও অসহায় এসব দরিদ্র শ্রমিকদের জন্য কাউকে কোনো কিছু নিয়ে আসতে দেখা যায়নি। তবে ফটোসেশন করে মাস্ক, সাবান ও ব্লিচিং পাউডার বিতরণ চলছে।
বেনাপোল স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানি ও পণ্য খালাসের জন্য নিয়োজিত কর্মচারী সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। করোনাভাইরাসের কারণে বন্দরের সব কর্মকাণ্ড স্থগিত হওয়ায় একই সাথে সরকারি ছুটি ঘোষণার কারণে ৮৫ শতাংশ কর্মচারী অসহায় হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের পাশে আজো কেউ আসেনি। খোঁজখবর নেয়া তো দূরের কথা।
শার্শার লাউতাড়া গ্রামের ইমান আলী, হাসান আলী, নাসির উদ্দিন, মিজানুর রহমান, সাদেক আলী, ওহিদুল, রুহুল আমিন, আবদুল কুদ্দুস, ইদ্রিস আলী ও ফজর আলী প্রত্যেকেই বেনাপোল বন্দরে হ্যান্ডেলিং শ্রমিক। তারা বলেন, ২৫ মার্চ আমরা শেষ কাজ করেছি। এর পর থেকে আমরা বাড়িতেই রয়েছি। প্রতিদিন যে টাকা মজুরি পাই, তা দিয়েই আমাদের সংসার চলে। তা ছাড়া ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে এনজিওদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। তাদের কিস্তি দেয়া ও সংসার চালাতে গিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছি। মাঠে তেমন কোনো কাজ নেই, হাতে কোনো টাকাও নেই। ধারদেনা করে কত দিন চলা যায়? সরকারি সহযোগিতা পেলে পরিবার পরিজন নিয়ে আমার বাঁচতে পারতাম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মণ্ডল বলেন, হ্যান্ডেলিং শ্রমিকদের জন্য আলাদাভাবে সরকারি কোনো বরাদ্দ আসেনি; যা আসছে ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় দুস্থ পরিবারের জন্য এ পর্যন্ত ২৪ টন চাল, আলু, সাবান মাথা পিছু এক কেজি করে ডাল দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আবারো চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। শ্রমিকদের বিষয়টি পৌর মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে বলা হবে।
ভারপ্রাপ্ত বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) আবদুল জলিল বলেন, শ্রমিকদের জন্য অনুদান বা সাহায্য,দেয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে বেনাপোল কাস্টমস যখন চাইবে তখনই পণ্য খালাসের বিষয়ে আমরা প্রস্তুত আছি।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতা মিজানুর রহমান বলেন, বন্দর শ্রমিকরা হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ করে প্রতি মাসে ঠিকাদারের মাধ্যমে আড়াই হাজার টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মজুরি পেয়ে থাকেন। বন্দর থেকে পণ্য ডোলিং-আনলোডিংয়ের সময় আমদানি-রফতানিকারক প্রতিনিধির মাধ্যমে সামান্য বখশিশ পান। এভাবে দিন শেষে হিসাব করে প্রতেকে আয় করেন আড়াই শ’ থেকে সাড়ে তিন শ’ টাকা। এখন বন্দরের সব কাজকর্ম বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি জসিম উদ্দিন জানান, বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দেশের ১১টি বন্দরের সব কর্মকাণ্ড একটানা বন্ধ থাকায় ৫০ হাজার হ্যান্ডেলিং শ্রমিক অসহায় হয়ে পড়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে দুঃখকষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছেন। এ সঙ্কটময় মুহূর্তে অসহায় শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল