১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিরসরাইয়ের ২০ হাজার সবজিচাষির স্বপ্ন ধূলিসাৎ

মাঠ ভরা সবজি কিন্তু বাজারে নিলে ক্রেতা নেই। পাটশাক ক্ষেতের এ ছবিটি মিরসরাইয়ের পূর্ব দুর্গাপুর গ্রাম থেকে তোলা : নয়া দিগন্ত -

করোনাভাইরাস আতঙ্কে সারা দেশের মতো মিরসরাইয়েও পালিত হচ্ছে লকডাউন। এতে করে ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। স্থানীয় বাজারে ক্রেতা সঙ্কট আর মহাসড়কে গাড়ি না থাকায় বাইরে থেকেও আসছেন না ক্রেতারা। ফলে উৎপাদিত সবজি নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন কৃষক। মিরসরাইয়ে শীতকালীন শাকসবজিতে এখনো ভরে আছে কৃষকের ক্ষেত। করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাজারে ন্যায্য দাম না মিললেও সরকারি হিসেবে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। তবে এখনো বৃষ্টি শুরু না হওয়ায় পাহাড়ের শত শত হেক্টর জমিতে আবাদ শুরু হয়নি। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এখানকার প্রায় ২০ হাজার চাষি।
মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার কৃষক বিকাশ ভৌমিক ১৫ শতক জমিতে বরবটি চাষ করেছেন। দামও পাচ্ছিলেন ভালো। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে বরবটি তুলে বাজারে নিতে পারছেন না। এতে তার অনেক টাকা ক্ষতি হবে।
দুর্গাপুর ইউনিয়নের পূর্বদুর্গাপুর গ্রামের কৃষক কালাম উদ্দিন ১০ শতক জমিতে হাইব্রিড মরিচ রোপণ করেছেন। গেল সপ্তাহেও প্রতি কেজি মরিচ পাইকারি ৪০ টাকা বিক্রি করেছেন। মিঠাছড়া বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি করেছেন ২০ টাকা করে। বাজারে কোনো পাইকার না আসায় দাম অর্ধেক হয়ে গেছে।
কৃষক মোহাম্মদ হানিফ মৌসুমে ৪৪ শতাংশ জমিতে এবার দুই দফা শীতকালীন শাকসবজির আবাদ করেছেন। দ্বিতীয় দফা আবাদে বেশ ভালো লাভ হওয়ার কথা থাকলেও হঠাৎ করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্রেতা কমে যাওয়ায় শাকসবজির ঠিক দাম পাচ্ছেন না।
কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। টমেটো বিক্রি করার জন্য স্থানীয় মিঠাছড়া বাজারে নিয়ে গেলে প্রতি কেজি ৮-১০ টাকায় বিক্রি করতেও কষ্ট হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি টমেটো ২০ টাকা করে বিক্রি করেছি। এভাবে চললে চাষের খরচও উঠবে না।
এ দিকে মিরসরাই সদর ইউনিয়নের গড়িয়াইশ গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন জানালেন অন্য কথা। প্রতি বছর মার্চ মাসের দিকে ভরা বৃষ্টি শুরু হলে তিনি পাহাড়ের ঢালু জমিতে ঝিঙ্গা, শসা ও বরবটির আবাদ করতেন। এবার বৃষ্টির দেখা নেই, আবাদও শুরু করতে পারেননি। এতে তার দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ে চাষাবাদ ছাড়া আমাদের আর কোনো রুটি-রোজগারের পথ নেই। এবার কী করব ভেবে পাচ্ছি না।’
মিরসরাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের হিসাব মতে, এবার শীত মৌসুমে মিরসরাইয়ে সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। উপজেলায় দেড় শ’ হেক্টর জমিতে চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, ঢেঁড়স আবাদ করা হয়েছে। শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে ১৮৫০ হেক্টর জমিতে। শীতকালীন সবজি এখনো বাজারে আছে। এ দিকে শীতকালীন সবজি বিক্রি শেষ হওয়ার আগে লাগানো হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন সবজি। উপজেলায় আট শ’ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ করা হবে। মার্চ মাসের ১৬ তারিখ থেকে সবজি বীজ রোপণ করা হচ্ছে। আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে সবজি বিক্রির উপযোগী হবে। যেখানে শসা, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, বরবটি, পুইশাক উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া রবিশস্যের মধ্যে মুগডাল ২ হাজার ৬০০ হেক্টর, হেলন ডাল ২ হাজার ৪০০ হেক্টর, খেসারি ডাল ৮০০ হেক্টর, সরিষা ৪০ হেক্টর, ভুট্টা ৩৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। শীতকালীন সবজি ও রবিশস্যের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও শুধুমাত্র বোরো আবাদ পুরোপুরি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৪৬০ হেক্টর। চাষাবাদ হয়েছে এক হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে। এ দিকে চলতি বছর মিরসরাইয়ে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছর উপজেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হলেও এ বছর হয়েছে ৪০ হেক্টর জমিতে। যেখানে ৪৫ টন সরিষা উৎপাদন হয়েছে। কৃষকরা স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি সরিষা ৮০ টাকা বিক্রি করছেন বলে জানা গেছে।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা জানান, এবারের মৌসুমে সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ঠিকঠাকভাবে অর্জিত হয়েছে। কৃষকরা ভালো লাভবান হয়েছেন। তবে পানি সঙ্কটের কারণে বোরো আবাদ সামান্য কম হয়েছে। কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে পাহাড়ে আবাদ শুরু না হওয়া প্রসঙ্গে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আশা করছি এপ্রিল মাসের দিকে পুরোদমে বৃষ্টি শুরু হবে। কৃষকেরা ওই সময়ে আবাদ শুরু করতে পারলে ফলনও ভালো হবে।


আরো সংবাদ



premium cement