২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেতাগীর হাটবাজারে রাত অবধি আড্ডা নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেউ

-

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বরগুনার বেতাগী উপজেলা প্রশাসন সরকারের সব পদক্ষেপ নিলেও সচেনতনতার অভাবে সেসব মানছে না প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের মানুষ। যত্রতত্র গ্রামগঞ্জের মানুষের সাথে উৎসবমুখর পরিবেশে মেলামেশার ফলে এ এলাকায় মারাত্মক সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন সচেতন মানুষেরা।
বেতাগী উপজেলার একটি পৌরশহর ও সাতটি ইউনিয়নের দেড় লাখ লোকের বসবাস। পৌরশহরের সড়কগুলো জনশূন্য ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এর ঠিক উল্টো চিত্র গ্রাম পর্যায়ের হাটবাজারে। সেখানে প্রকাশ্যে চলছে চায়ের দোকানে আড্ডা। এ আড্ডা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এ জনপদের শহর থেকে লোকজন গ্রামে গিয়ে ভিড় জমাচ্ছে। খাবারের হোটেলসহ অপ্রয়োজনীয় অনেক দোকানই খোলা রাখা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে এক মিটার দূরত্ব রেখে চলাচলের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তা কাউকে মানতে দেখা যাচ্ছে না। জটলা পাকিয়ে চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়াসহ কাঁচাবাজার, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানে দেখা যাচ্ছে জনসাধারণের অবাধ বিচরণ। এর ফলে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি।
জানা যায়, টানা ১০ দিনের সাধারণ ছুটি থাকায় ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে স্থানীয়রা বাড়িতে আসায় এখানকার গ্রাম্য হাটবাজারগুলোতে যেন ঈদের আমেজ শুরু চলছে। চায়ের দোকানে চলছে টিভি দেখা, সংবাদ দেখা ও বিভিন্ন মুভি দেখার পর্ব। বিকেল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত চায়ের দোকানে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষসহ শহরফেরত মানুষেরা। উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ করোনাভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রচার-প্রচারণা চালালেও গ্রামের মানুষ তা কর্ণপাত করছেন না।
প্রায় প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানসহ পুলিশের কঠোর অভিযান সত্ত্বেও পুরোপুরি করা যাচ্ছে না জনসমাগম। বেতাগী উপজেলা প্রশাসন গত বুধবার (২৪ মার্চ) বিকেল থেকে ফার্মেসি ও কাচাবাজার ব্যতীত উপজেলার সব চা-স্টল,দোকানপাট বন্ধ ও সব ধরনের আড্ডা দেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ সচেতনতার লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণার জন্য শহর ও হাটবাজারে গত কয়েক দিন যাবৎ নিয়মিত মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ চলছে। কিন্তু সবাইকে সচেতন হওয়ার কথা বললেও এসবের কোনো তোয়াক্কা করছেন না অনেকেই। তা ছাড়া জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে ঘোরাফেরা না করার অনুরোধ জানানো হলেও বাস্তবে তা কোনো কাজে আসছে না। রাস্তাঘাটে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং একসাথে দল বেঁধে চলাচলের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেক যুবক ও কিশোররা তা মানছে না।
বাজারে আসা হোসনাবাদ ইউনিয়নের আব্দুল হালিম বলেন, ‘ঘর থেকে বের হওয়ার নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রয়োজনের তাগিদে হাটবাজারে আসতে হয়।’
থানা সূত্রে জানা যায় একের বেশি লোক সমাগম দেখলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের বাড়িতে পাঠাচ্ছে। এ ছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইকিং করা হচ্ছে। বেতাগী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, ‘পুলিশ সব সময় বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। জনসমাগমের খবর পাওয়া মাত্রই আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: তেং মং বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৪৬ জনের হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে। এখনো ১০ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছে। তাদের ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালে সাতটি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনা সন্দেহ হলে তাদের প্রথমে এখানে রাখা হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাজীব আহসান বলেন, প্রত্যেক দিন বিভিন্ন এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পৌর শহরসহ প্রত্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। যদি কেউ নির্দেশনা অমান্য করে তবে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement