২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মিরসরাইয়ের মৃৎশিল্প পল্লীতে এখন শুধু হতাশা

-

বাজারে প্লাস্টিক সামগ্রীর ভিড়ে প্রায় বিলুপ্তির পথে দেশের চিরচেনা মৃৎশিল্প। দেশের অন্য এলাকার মতো চট্টগ্রামের মিরসরাইয়েও মৃৎশিল্পীদের ঘরে ঘরে নেমে এসেছে হাহাকার। মাটির তৈরি সামগ্রীর ব্যবহার কমে যাওয়ায় বদলে যাচ্ছে কুমারপাড়ার দৃশ্যপট। দুর্দিন নেমে এসেছে কুমারপাড়ায়। নতুন কর্মসংস্থানের খোঁজে অনেকে গ্রাম ছাড়ছেন।
মিরসরাইয়ের সবচেয়ে বড় কুমারপাড়া পূর্ব মলিয়াইশ গ্রামে। ওই পাড়ায় এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছে অর্ধশতাধিক কুমার পরিবার। সরেজমিন দেখা গেছে কুমার ও তাদের পরিবার পরিজনের কষ্টের কাহিনী। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। কুমারপাড়ার শিশুরা ঝরে পড়ছে বিদ্যালয় থেকে। এ ক্ষেত্রে যত না অভিভাবকদের অসচেতনতা, তার চেয়ে বেশি দায়ী অভাব-অনটন। এ ছাড়া প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়গুলো দূরে হওয়ায় সুযোগ পেলেও স্কুলে যাওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে শিশুরা। এমন পরিস্থিতিতে ওই পাড়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের দাবি অভিভাবকদের।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে ওই পাড়ায় মাটির সামগ্রী তৈরির কাজে ব্যস্ত পুতুল রানী পাল নামের এক গৃহবধূর সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, এখন কুমার পাড়ার আয় নেই বললেই চলে। আগে আমরা চরকা দিয়ে বিভিন্ন রকম বাসন-কোসন ও খেলনা তৈরি করতাম। কিন্তু এখন চরকা ব্যবহার হয় না। কারণ চরকা দিয়ে জিনিসপত্র তৈরি করে ভালো দাম পাওয়া যায় না। তা ছাড়া এখন মাটি কিনে আনতে হয়। আমরা শুধু সামান্য আয়ে সংসার টিকিয়ে রেখেছি।
বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন যখন আসে তখন প্রার্থীদের নানা প্রতিশ্রুতির জোয়ারে ভাসে পুরো কুমারপাড়া। সচেতন মানুষদের দেয়া বিভিন্ন দাবি দাওয়া পূরণেরও আশ্বাস দিয়ে থাকেন প্রার্থীরা। কিন্তু নির্বাচন গিয়ে নির্বাচন আসে, প্রার্থীরা বিজয়ী হন ক্ষমতা শেষ হয় কিন্তু কুমারপাড়ার ভোটারদের দেয়া প্রতিশ্রুতি কখনও পূরণ হয় না। আগের মতোই অবহেলিত মৃৎশিল্পীরা। ওই পাড়ার বাসিন্দারা আরও জানান, এ পেশাটি টিকিয়ে রাখার জন্য একাধিকবার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া এ পাড়ায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দরকার। পাড়ার মেয়েরা অনেক সময় বহিরাগত বখাটে যুবকদের স্পর্শকাতর কটূক্তির শিকার হয়। কিন্তু সমাজপতিদের দরবারে গিয়ে বিচার চেয়েও কোনো সুরাহা হয় না।
সরকারি-বেসরকারি অবহেলার কারণে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না এই পেশার মানুষেরা। ফলে অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এ পেশাটি। কেবলমাত্র পূর্ব পুরুষের পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্যই এখনো অনেকে শত কষ্টের মধ্যেও এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন।
মৃৎশিল্পী হারাধন পাল জানান, সরকারি-বেসরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধাই তারা পান না। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা শুধু নির্বাচনের সময় বিভিন্ন গরম গরম প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পরে সব ভুলে যান। এখানকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে শিক্ষা। কুমার পাড়ায় কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চবিদ্যালয় নেই। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অনেক দূরের বিদ্যালয়ে যেতে হয়। বর্ষাকালে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে পারে না।
আরেক মৃৎশিল্পী আশিষ পাল বলেন, অনেক সময় এলাকার বখাটেরা আমাদের পাড়ার নারীদের বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করে। তাদের ভয়ে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম রহমান চৌধুরী বলেন, এই গ্রামে স্কুল নেই সেটি আমাদের জানা ছিল না। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা সেখানে গিয়ে পরিদর্শন করব। তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করব।


আরো সংবাদ



premium cement