২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
সারা দেশে করোনা চিকিৎসার প্রস্তুতি

ফমেকে করোনা শনাক্তের ব্যবস্থাও নেই

-

করোনাভাইরাসের কারণে নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে উদ্বেগে রয়েছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। সাধারণ রোগীদের দেখতেও তারা অনেকটা বিব্রত। সরকারি হাসপাতালেও রোগীদের সেই ভিড় নেই। অসুস্থ রোগীদের কাছে যেয়ে চিকিৎসা দিতেও ইতস্তত বোধ করছেন তারা। অনেক চিকিৎসক নোটিশ টানিয়ে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব হাসপতালেই একই দশা।
ফরিদপুরের ৫০০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্বাভাবিক সময়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়ে যেত। অনেক রোগী বেড না পেয়ে করিডোর ও সিঁড়ি বারান্দাতেও অবস্থান করত। অথচ গত শনিবার এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল মাত্র ২৬৬ জন। আর ১০০ শয্যার ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে শনিবার ভর্তি ছিল মাত্র ৩০ জন। উপজেলা হাসপাতালগুলোতেও একই পরিস্থিতির কথা জানা গেছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে অন্য রোগে আক্রান্তরাও এখন চিকিৎসাবঞ্চিত হয়ে পড়েছেন।
এ দিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে করোনা মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সুব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। এখানে একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থাকলেও নেই করোনা শনাক্তের ব্যবস্থা। ফমেক হাসপাতালে এ পর্যন্ত তিনজন রোগীকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করার পর তাদের দু’জনই নিজেদের উদ্যোগে ঢাকায় চলে যান। এখন মাত্র একজন সন্দেহভাজন রোগী ফমেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখে এই আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়।
ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: সাইফুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত তিনজন রোগীকে এখানে ভর্তি করা হয়। তবে তারা এলেই করোনা আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত নই। এখানে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা এখনো করোনা পরীক্ষার কিট পাইনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা জানান, শুধুমাত্র কিট এলেই করোনা সন্দেহভাজনদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হবে না, এ জন্য পৃথক ল্যাবরেটরি ও আইসিআর মেশিন দরকার। কিন্তু সেই মেশিনই নেই এখানে। আর এই মেশিন চালাতে প্রয়োজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান। সেই টেকনিশিয়ানও নেই। তবে মেশিন পেলে নিপাহ ভাইরাস টেস্টের ক্ষেত্রে যে টিম প্রশিক্ষণ নিয়েছিল তাদের থেকে একজনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগানো যাবে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়ার উপসর্গ নিয়ে যারা গুরুতর অবস্থায় আসছেন তাদেরই আইসোলেশনে পাঠানো হচ্ছে। এসব সাধারণ রোগীকে ভর্তি না করে দূর থেকে দেখে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া প্রাইভেট চেম্বারেও রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন এসব চিকিৎসক। অনেকে তাদের চেম্বারের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য রোগী দেখা বন্ধের নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছেন। সরকারের নির্দেশনা তারা মানছেন না।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ রোগীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। সদর উপজেলার গোলডাঙ্গির চরের কাশেম মোল্যা নামে এক রোগী পায়ে পুরনো ক্ষতের চিকিৎসা নিতে শনিবার সকালে জেনারেল হাসপাতালে যেয়েও কোনো চিকিৎসক পাননি। পরে তাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। তবে দূর থেকে দেখেই চিকিৎসক তাকে ব্যথানাশকের ওষুধ দিয়েছেন। ওই রোগীর স্বজনেরা জানান, তার পায়ে গ্যাংরিনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কিন্তু অপারেশনের কথা বলছেন না চিকিৎসক। কাছে এসেও দেখছেন না।
এ ছাড়া দুই হাত ভেঙে ঘরে পড়ে থাকা সাংবাদিক নুরুল জানান, একটি প্রাইভেট হাসপাতালে তার অপারেশন করানোর কথা ছিল। কিন্তু চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছেন ওটি বন্ধ থাকায় অপারেশন এখন আর হচ্ছে না।
ফরিদপুরের চিকিৎসক নেতা ও ডায়বেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা: আসম জাহাঙ্গীর হোসেন টিটো চৌধুরী ডাক্তারদের অবহেলার তথ্য সঠিক নয় দাবি করে বলেন, চিকিৎসকেরা তাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ইতোমধ্যে তাদের পিপিই (পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট) দিয়েছেন। পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে উন্নত হচ্ছে। তিনি বলেন, যানবাহন চলাচল খুবই সীমিত হওয়ায় দূরদুরান্ত থেকে আসা যাচ্ছে না বলে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা: সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোকে আমরা করোনা সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা গুরুত্বের সাথে করার নির্দেশ দিয়েছি। কেউ যাতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত না থাকেন সে বিষয়টি তদারক করা হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার পর্যন্ত ১৬ শ’ ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩৩ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়। আর ছাড়পত্র দেয়া হয় ২৪ জনকে। জেলার দু’টি সরকারি হাসপাতালে ৮৫টি বেড প্রস্তুত রয়েছে করোনা রোগীদের জন্য। একই সাথে দু’টি অ্যাম্বুলেন্স ও ৩৫টি আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement