২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ধ্বংসের পথে কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান

কুয়াকাটা ইকোপার্কের নয়নাভিরাম দৃশ্যপট দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলো এখন ধ্বংসের মুখে : নয়া দিগন্ত -

পর্যটননগরী কুয়াকাটার সৌন্দর্যমণ্ডিত নারিকেল বাগানের পর এবার বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে ‘কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান’। আগত পর্যটকদের বিনোদনকেন্দ্র জাতীয় উদ্যানের অন্যতম আকর্ষণ ঝাউবাগান। কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে পূর্ব দিকে সৈকতঘেঁষা চার দিকে ঝাউবাগানে ঘেরা ছিল ইকোপার্কের অবস্থান। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নে কুয়াকাটার সৈকতঘেঁষা সংরক্ষিত বনাঞ্চল দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সাগরের ঢেউয়ের ঝাপটায় মূল থেকে বালু সরে বাগানে গাছ উপড়ে পড়ছে। সৈকতে ভাঙনের কারণে বিলীন হচ্ছে বনের গাছ।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় রয়েছে একই স্থান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার পৃথিবীর একমাত্র সৈকত। তাই কুয়াকাটায় দেশীÑবিদেশী পর্যটকদের আগমন চোখে পড়ার মতো। ১৯৯৮ সালে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণার পর সারা বিশ্বের পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কুয়াকাটা। বিনিয়োগকারীরা হোটেল-মোটেল নির্মাণ করে কুয়াকাটাকে সৌন্দর্যের নগরী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
উপকূলীয় বন বিভাগের পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটা বনের আয়তন প্রায় দুই হাজার ১৬৫ দশমিক ৮০ একর। ২০০৫ সালে সরকার একে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে। ২০০৭Ñ২০০৮ অর্থবছরে প্রাকৃতিক বনসংলগ্ন এ সৈকত ঘেঁষে ১০ হাজার হেক্টর ভূমির উপর ঝাউবাগান গড়ে তোলা হয়। ২০১০ সাল থেকে এই বনে নতুন বাগান করা হয়। তবে ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সামুদ্রিক ঢেউয়ের ঝাপটায় ভাঙনের মুখে পড়ে বনাঞ্চল। প্রতি বছর অন্তত ১০০ একর বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। গত ১২ বছরে কুয়াকাটা সংরক্ষিত বনের এক হাজার ২৩৫ দশমিক ৮০ একর বনাঞ্চল সাগরে বিলীন হয়ে গেছে।
সম্প্রতি সৈকত ঘুরে দেখা যায়, সিডর আইলার মতো সুপার সাইক্লোন কিংবা বর্ষা মৌসুমের অস্বাভাবিক জোয়ারে জলোচ্ছ্বাসে ইকোপার্কটি কয়েক দফায় বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে অভ্যন্তরীণ মনোরম সাজানো লেকটির ছোট ছোট স্থাপনা। লেকটির সেতু, ঘাটলা, গোলঘর, শোভাবর্ধনের বাগান, বেঞ্চি, স্থায়ী ছাতাÑ সব সাগর গিলে খেয়েছে। কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরা এখানে এসে খুঁজে পেত প্রকৃতির বর্ণিল সুন্দরকে। যদিও এখন এটি শ্রীহীন হয়ে গেছে। তারপরও প্রতিদিন শত শত পর্যটক-দর্শনার্থী কুয়াকাটার ইকোপার্কের খণ্ডিত অংশের ঝাউবাগানে ঘুরে বেড়ায়।
বনাঞ্চল ছাড়াও বিশাল বনভূমি ইকোপার্কের এরিয়ায় ছিল। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বন অধিদফতরের উদ্যোগে প্রাথমিক পর্যায়ে দুই কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করা হয়। প্রথম দফায় ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরে ২১টি ধাপের মধ্যে ২০টির কাজ সম্পন্ন করতে করা হয়। পরবর্তী ধাপে করা হয় কাঠের ব্রিজ। ওই সময়ে প্রধান ফটক নির্মাণ, মেঠোপথ প্রশস্তকরণ, বক্স ও পাইপ কালভার্ট, ভূমির উন্নয়ন, গোলঘর ও জেটি নির্মাণ, ফিডার রোড, কার পার্কিং-সুবিধা, পিকনিক শেড, টিকিট কাউন্টার, অ্যাপ্রোচ রোড, বিশুদ্ধ পানির সংস্থান, অভ্যন্তরীণ পানি সরবরাহ, সিটিং বেঞ্চ, লেক-পুকুর খনন ও বাইরের বিদ্যুতায়ন। এ ছাড়া ম্যানগ্রোভ ও ননম্যানগ্রোভ এবং শোভা বর্ধনকারী বাগান, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়নে বাগান সৃজনসহ ৪৭ হেক্টর বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির লক্ষাধিক গাছের চারা রোপণ করা হয়। এর বাইরে এক হাজার ৬৬৭টি নারিকেল চারাও লাগানো হয়। এসব এখন শুধু হারানো এবং স্বপ্নের অতীত।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্ট অনুষদের ডিন প্রফেসর ডা: আমিনুল হাসান বলেন, বাংলাদেশে জন্মে এমন প্রতিটি উদ্ভিদ প্রজাতিই দেশের জীববৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বর্ধিত জনসংখ্যার প্রয়োজন মেটাতে প্রতিনিয়ত এ দেশের জীববৈচিত্র্যের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে অনেক উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে এবং সেগুলো বিলুপ্তির সম্মুখীন হচ্ছে। নানাবিধ মনুষ্যসৃষ্ট কারণে (যেমন নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস, মাত্রাতিরিক্ত প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও উদ্ভিদের আবাসস্থলের পরিবর্তন) এবং প্রাকৃতিক কারণে (যেমন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি) বাংলাদেশের অনেক উদ্ভিদ প্রজাতির অস্তিত্ব বর্তমানে হুমকির মুখে পড়ছে। এ অবস্থায় সৈকতে ভাঙন প্রতিরোধের উদ্যোগের পাশাপাশি নতুন করে বনায়ন করতে হবে। এ জন্য জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধী ও লবণসহিষ্ণু গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে অপরূপ সৌন্দর্যের বেলাভূমি কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্যের পাশাপাশি রক্ষা পাবে বনাঞ্চল।
রাজশাহী থেকে কুয়াকাটা ঘুরতে আসা পর্যটক উম্মে কবির হাবিবা জানান, সূর্যোদয়-সুর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য অবলোকনের সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় আকর্ষণীয় ইকোপার্কটি ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সরকারের উচিত কুয়াকাটায় আকর্ষণীয় ইকোপার্কটি রক্ষা করা; এখনো সময় আছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমতিয়াজ রহমান তুষার বলেন, কুয়াকাটা এখন যেভাবে ভাঙছে তাতে এলাকার লোকজনসহ বিনিয়োগকারীরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। সৈকত রক্ষা করার জন্য ঝাউগাছসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ রোপণ করা উচিত।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র বারেক মোল্লা বলেন, গত বছর ভাঙন রোধের জন্য তালিকা পাঠিয়েছি; সরকারের কোনো খবর নেই। আমি আবার কালকে ঢাকা যাচ্ছে দেখি কী অবস্থায় আছে। এ বছর সাগরে রোলিং ও জলোচ্ছ্বাসের চাপ বেশি।
পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: আমিনুল ইসলাম জানান, বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের কারণে গাছের গোড়া ক্ষয়ে বালু বের হয়ে যাচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইকোপার্কটির দুই তৃতীয়াংশ সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কয়েকবার জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো: ওলিউজ্জামান বলেন, পরিকল্পনা-২-এর অধীনে আইডব্লিউএম, সম্ভবত যাচাই সমীক্ষা শেষে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডিপিপি প্রণয়ন করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে: পাটমন্ত্রী মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেও নেতাকর্মীরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে : সালাম নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার : পরিবেশ সচিব সৌরশক্তি খাতে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় জার্মানি ‘সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই বিচার প্রক্রিয়ার ধীর গতি’ মোদি কি হিন্দু-মুসলমান মেরুকরণের চেনা রাজনীতিতে ফিরছেন? টাঙ্গাইলে বৃষ্টির জন্য ইসতেসকার নামাজ ফুলগাজীতে ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু দোয়ারাবাজারে শিশু হত্যা মামলার আসামিসহ গ্রেফতার ২ কাউখালীতে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু চুয়েট শিক্ষার্থীদের সড়কে অবস্থান অব্যাহত, ঘাতক বাসচালক গ্রেফতার

সকল