২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ধানক্ষেতে মিনি পুকুর : ভূগর্ভস্থ পানি ও সেচ খরচ দুটোতেই সাশ্রয়

-

ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে ধানক্ষেতে ছোট ছোট পুকুর খনন করেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের চাষিরা। পুকুরে জমে থাকা পানি থেকে জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর যেমন স্বাভাবিক থাকছে তেমন ক্ষেতে সেচ বাবদ খরচ কমেছে। এ ছাড়া পুকুরপাড়ে চাষ হচ্ছে সবজি আর পুকুরে মাছ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কৃষক সুবল ঘোষের একদাগে ৩৩ শতক জমি, যার সাড়ে ৩১ শতকে চাষ হয় ধানের। জমির এক কোণে দেড় শতক জায়গায় মিনি পুকুর। পুকুরে মাছের চাষ, পুকুরপাড়ে আছে নানা রকমের শাকসবজি। এই পুকুরের পানি দিয়ে ধানক্ষেতে সেচ দিচ্ছেন সুবল ঘোষ। বৃষ্টির পানি ধরে রেখে সেই পানি সারা বছর সেচে ব্যবহার করছেন। পুকুর এমনভাবে খনন করা হয়েছে যেন বৃষ্টি হলে পুরো জমির পানি পুকুরের দিকে গড়িয়ে আসে। জমিতে সেচ দেয়ার পর কিছু পানি চুঁইয়ে আবার পুকুরে আসে। এভাবে একই পানি বারবার ব্যবহার করা যায়।
সুবল ঘোষ একা নন, কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ও নিয়ামতপুর ইউনিয়নে এ রকম শতাধিক মিনি পুকুর রয়েছে। যেগুলো ধানের জমির এক কোণে খনন করা হয়েছে। এই পুকুর কাটায় কৃষকদের সহযোগিতা করেছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সোনার বাংলা ফাউন্ডেশন।
ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শিবুপদ বিশ্বাস জানান, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানোর জন্য তারা এই পুকুর খনন কার্যক্রম শুরু করেছেন। জাপানের শেয়ার দ্য প্লানেট অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায়, জাপান ফান্ড ফর গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টের (জেএফজে) অর্থায়নে পানি সাশ্রয়ী কার্যকর কৃষি অনুশীলন প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম দফায় তারা কালীগঞ্জের দু’টি ইউনিয়নে এক শ’ কৃষকের ধানের জমিতে এক শ’টি পুকুর খনন করে দিয়েছেন। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্প বর্তমানে চলমান। শিবুপদ বিশ্বাস আরো জানান, তারা প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয় করে প্রতিটি পুকুর খনন করে দিয়েছেন। সেই সাথে পুকুরের পানি কিভাবে ক্ষেতে ব্যবহার করতে হবে, কিভাবে পুকুরের মাছ চাষের পাশাপাশি পাড়ে সবজি চাষ করতে হবে সে বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। শিবুপদ বিশ্বাস আরো জানান, তারা বিষমুক্ত রবিশস্য চাষ নিয়ে কাজ করছেন। কৃষকরা যেন ভার্মি কম্পোস্ট ও বালাইনাশক দিয়ে চাষ করতে পারেন সে বিষয়েও প্রশিক্ষণসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
প্রকল্পের সমন্বয়কারী তোফায়েল হোসেন জানান, তারা সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়নের সুন্দরপুর, দুর্গাপুর, মহাদেবপুর, আলাইপুর, কমলাপুর, ইছাপুর, পাইকপাড়া, ভাটপাড়া ও বেজপাড়া এবং নিয়ামতপুর ইউনিয়নের কুড়লিয়া, বারোপাখিয়া, নরেন্দ্রপুর, নিয়ামতপুর, মহিষাডেরা, দাপনা, হরিগোবিন্দপুর ও আড়–য়াশলুয়া গ্রামের মাঠে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছেন। কৃষকের ৩৩ শতক জমির মাত্র দেড় শতক জমিতে পুকুর হচ্ছে। এতে তার ফসলের খুব বেশি ক্ষতি হচ্ছে না। এতে তাদের সেচ খরচ খুবই কম হচ্ছে। পুকুরের মাছ ও সবজি তার সংসারের প্রয়োজন মিটিয়ে বিক্রিও করছেন। তোফায়েল হোসেন জানান, এসব পুকুর থেকে তারা এক মৌসুমে প্রায় ছয় হাজার টাকার সবজি, দুই লাখ টাকার মাছ পেয়েছেন।
বেজপাড়া গ্রামের এক কৃষক জানান, বোরো ও আমন মৌসুমে তারা ধান চাষ করে থাকেন। বিঘাপ্রতি বোরো মৌসুমে ২২ মণ ধান হয়। এই ধান চাষ করতে কমপক্ষে দুই হাজার টাকা সেচ খরচ হয়। ২২ মণ ধান বিক্রি করে পান ১৪ হাজার টাকা। আর আমন মৌসুমে এক বিঘায় ধান হয় ১৬ মণ। পুকুর খনন পদ্ধতিতে সেচ বাবদ প্রায় তিন হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। কৃষক আবদুস সাত্তার জানান, এখন আর পানি সেচের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। প্রয়োজন হলেই পুকুরে শ্যালো মেশিন বসিয়ে সেচ দিয়ে দেন। এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ অবশ্যই ভালো। তবে এটা বারো মাস কিভাবে চালানো যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement