২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তাহিরপুরে শিমুল বাগানে সৌন্দর্যপ্রেমীদের ঢল

শিমুল বাগানে একদল সৌন্দর্যপিপাসু : নয়া দিগন্ত -

মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধে বসন্ত জানিয়ে দিচ্ছে, সত্যি সত্যি সে ঋতুর রাজা। বসন্ত তারুণ্যেরই ঋতু। স্বাগত বসন্ত। প্রাণ খুলে তাই যেন কবির ভাষায় বলা যায়, আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে এত বাঁশি বাজে এত পাখি গায়। এমনি প্রকৃতির সাথে মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছে মেঘালয় পাহাড় ও যাদুকাটা নদীর তীরে প্রকৃতির অপরূপ এক অনবদ্য কাব্যিক ভাবনায় প্রান্তর দেশের বৃহত্তর জয়নাল আবেদিন শিমুল বাগান। প্রতি বছরের মতোই শীতের শেষে ফাল্গুনের আবেশে মরহুম বৃক্ষপ্রেমী জয়নাল আবেদিনের হাতে লাগানো সারিবদ্ধভাবে সাজানো তিন হাজারের অধিক শিমুল গাছে সবুজের বৃতি ভেদ করে প্রতিটি গাছের ডালে ডালে শিমুল ফুলের পাপড়ি মেলেছে। যার ফলে বাগানটাকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় লাল ফুলের গালিচা বিছিয়ে ডাকছে দেশ-বিদেশের প্রকৃতিপ্রেমী, পর্যটক ও সৌন্দর্যপিপাসুদের। শিমুল বাগানে প্রকৃতিপ্রেমী, পর্যটক ও সৌন্দর্যপিপাসুদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
আগত দেশ-বিদেশের পর্যটক, দর্শনার্থী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের নিরাপত্তার সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি। তিনি জানান, আগত পর্যটকদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ও উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মাঝামাঝি স্থান মানিগাঁও গ্রাম সংলগ্ন শিমুল বাগানটির অবস্থান।
এদিকে আগতদের সুবিধার্থে সম্প্রতি বাগানের মালিকদের পক্ষ থেকে একটি খাবার হোটেল নির্মাণ এবং বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে করে আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীরা উপকৃত হবে বলে জানান, শিমুল বাগানের প্রতিষ্ঠাতা জয়নাল আবেদিনের ছেলে সাবেক বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাকাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি ও শুক্রবার সরকারি ছুটি থাকায় প্রকৃতিপ্রেমী আর দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছিল। এ ছাড়াও প্রতিদিনই আসছে দেশ-বিদেশী পর্যটকরা। বাবার রেখে যাওয়া এই দৃষ্টিনন্দন শিমুল বাগানটি দেখাশুনা করার পাশাপাশি আরও কিভাবে ভালো রাখা যায় এবং সৌন্দর্য বাড়ানো যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও বাগানে আগতদের খাবার সুব্যবস্থার জন্য হোটেল ও বসার স্থান নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে করে আগতদের কষ্ট করতে না হয়। এ ছাড়াও এই বাগানটিকে ঘিরে পর্যটকদের সুবিধার্থে জেলায় একটি আন্তর্জাতিকমানের রিসোর্ট করা যায় সে চেষ্টাও আমরা পারিবারিকভাবে করছি। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে আরও বেশি পর্যটক আসবে এখানে।
পর্যটক প্রীণিতা প্রিয়াঙ্কা বলেন, এই বাগানটি দেখতে অসাধারণ, এত বড় শিমুল বাগান দেশের কোথাও আর দেখিনি। যার ফলে বাগানের ভেতরটায় গেলে এক অন্য রকম ভালো লাগার জন্ম নেয়। হারিয়ে যাই অন্য এক অজানা ভুবনে। নদী, পাহাড় আর শিমুল বাগান প্রকৃতির এক অপূর্ব মিলনমেলা এখানে। চোখ বুজলেও টের পাওয়া যায় এসব দৃশ্যপট।
এই বাগানে বেড়াতে আসা স্থানীয় সোহেল আহমেদ সাজুসহ অনেকেই বলেন, দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা শিমুল বাগানে শীত বর্ষা বসন্তে সব সময় দল বেঁধে ছুটে আসে সৌর্ন্দয উপভোগ করতে। হাওর, পাহাড়, নদীর পাশেই শিমুল বাগান সব মিলেমিশে মানিগাঁও গ্রামটি গড়ে উঠেছে প্রকৃতির কাব্যিক ভাবনার প্রান্তরে।
জানা যায়, ২০০২ সালে বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম জয়নাল আবেদিন উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামে বালু আবৃত ৯৮ বিঘা অনাবাদি জমি ক্রয় করে বাণিজ্যিকভাবেই এই শিমুল বাগান তৈরি করার জন্য তিনি প্রাথমিকভাবে চিন্তা করেন। এই চিন্তা থেকেই তিনি এ বাগানে সারিবদ্ধভাবে তিন হাজারের অধিক শিমুল চারা রোপণ করেন।
কিভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে সরাসরি বিভিন্ন ধরনের বাসে সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জ আব্দুল জহুর সেতু থেকে সিএনজি বা মোটরসাইকেলে জনপ্রতি ১০০ টাকা লাউড়ের গড় বাজার। বাজার পার হয়ে যাদুকাটা নদী আর নদী পার হলেই শিমুল বাগান। আবার সুনামগঞ্জ আব্দুল জহুর সেতু পার হলে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি দিয়ে তাহিরপুর উপজেলা, এরপর বাদাঘাট ইউনিয়নের বাদাঘাট বাজার হয়ে শিমুল বাগান।

 


আরো সংবাদ



premium cement