২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বুড়িমারীতে পাথরভাঙা শ্রমিকদের জীবন বিপন্ন : আরও একজনের মৃত্যু

-

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন আরও এক শ্রমিক। এবার মারা গেলেন মমিনুর রহমান (৪০)। তিনি বুড়িমারী স্থলবন্দর পাথর ভাঙা শ্রমিক সুরক্ষা কমিটির সভাপতি। কয়েক বছর ধরে তিনি সিলিকোসিস রোগে ভুগছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত শনিবার রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। তিনি বুড়িমারী ইউনিয়নের উফারমারা গ্রামের বাসিন্দা। মমিনুরসহ বুড়িমারীতে সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৬১ জন শ্রমিক মারা গেলেন। চিকিৎসকদের মতে ধুলোবালু মুখের ভেতরে ঢুকে ফুসফুস আক্রান্ত করায় মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। সঠিক সময় ও উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।
মমিনুরের পরিবার জানায়, প্রায় আট বছর আগে তার সিলিকোসিস রোগ ধরা পড়লে ঢাকার বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে বাড়িতে রেখে তার চিকিৎসা করানো হয়। এতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দুই সপ্তাহ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার তিনি বাড়িতে আসেন। কিন্তু শনিবার আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে স্থানীয় এবং পরে রংপুর হাসপতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান।
মমিনুরের ভাই আসাদুল বলেন, আমরা গরিব মানুষ, পেটের দায়ে কাজ করি। প্রায় ২০ বছর আগে মমিনুর বুড়িমারীর পাথরভাঙা মেশিনে কাজ নেন। প্রথমে তার সর্দি জ্বর কাশি হয়। ২০১২ সালে তার সিলিকোসিস ধরা পড়ে। এরপর তিনি কাজ বাদ দিলেও আর সুস্থ হতে পারেননি। অবিবাহিত মমিনুরের শরীর হাড্ডিসার হয়ে পড়ে।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাথরভাঙা শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন দাবিতে মমিনুরের নেতৃত্বে পাথরভাঙা শ্রমিক সুরক্ষা নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়। সংগঠনটির সদস্যরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) মাধ্যমে ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পান। তবে এ রোগে একবার কেউ আক্রান্ত হলে আর সুস্থ হতে পারেননি।
বুড়িমারী বাজারের পার্শ্ববর্তী ও লালমনিরহাট-বুড়িমারী প্রধান সড়কের দুই পাশে শত শত পাথরভাঙা মেশিনের শব্দে সেখানকার মানুষের ঘুম ভাঙে। এসব মেশিনে শত শত শ্রমিক কাজ করেন। এদের না আছে কোনো চিকিৎসাসেবা, না আছে জীবনের নিরাপত্তা। দিন শেষে যে মজুরি পান তা দিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে। এরা সামান্য মজুরিতে পাথরভাঙার কাজ করলেও কখন যে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তা নিজেরাও জানেন না। এ দিকে পাথরভাঙার ধূলিকণায় সবসময় একাকার থাকে বুড়িমারী স্থলবন্দর ও বাজারসহ আশপাশের আবাসিক এলাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুড়িমারীর মতো জনবহুল এলাকায় এভাবে যত্রতত্র পাথর ভাঙা হলেও তাদের জন্য নেই কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। এ ছাড়া অধিকাংশ পাথরভাঙা ব্যবসায়ীর নেই পরিবেশ অধিদফতরের কোনো ছাড়পত্র। মাঝে মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও পরে আবার আগেরই মতোই তারা দিব্বি ব্যবসা চালিয়ে যায়।
বুড়িমারী স্থলবন্দর পাথরভাঙা শ্রমিক সর্দার ও শ্রমিক সুরক্ষা কমিটির সভাপতি মমিনুরের অধীনে ২০০৫ সালে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করতেন। এর ২-৩ বছরের মাথায় তার অধীনস্থ কামাল নামের এক শ্রমিক সিলিকোসিসে আক্রান্ত হলে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মারা যান। এ পর্যন্ত এ রোগে ওই দলেরই ২৩ জন শ্রমিক মারা গেছেন এবং আরও দু’জন ভুগছেন। বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু নেওয়াজ নিশাত বলেন, পাথরভাঙা শ্রমিকদের অনুকূল কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য শ্রম মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদফতরে আবেদন জানিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। এমনকি অসুস্থ শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তার জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও ৭০ জন শ্রমিক এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় রয়েছেন। তবে আক্রান্তদের কাউকে ঢাকার ফিফটি অ্যান্ড রাইটস নামের একটি সংগঠন সহযোগিতা করছে। তারা সংশ্লিষ্ট দফতরে দৌড়ঝাঁপও করছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না। এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে কথা বলতে পারেননি।

 


আরো সংবাদ



premium cement