২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নলকূপ অকেজো চিতলমারীতে খাবার পানির সঙ্কটে ৩১ হাজার শিক্ষার্থী

চিতলমারী হাসিনা বেগম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে অকেজো নলকূপ হনয়া দিগন্ত -

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নলকূপ ও পানির ফিল্টার দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের ৩১ হাজার শিক্ষার্থী ক্লাস চলাকালীন খাবার পানির অভাবে তৃষ্ণা মেটাতে আশপাশের জলাশয়ের নোংরা ও দূষিত পানি পান করে নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ১৯৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে চারটি কলেজ। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩১টি, নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয় একটি ও আলিয়া মাদরাসা সাতটি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১১১টি। কিন্ডারগার্টেন ২৩টি, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি তিনটি, উচ্চ মাদরাসা সাতটি ও এনজিও পরিচালিত স্কুল একটি। এর মধ্যে কলেজশিক্ষার্থী এক হাজার ৬০০ জন। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আলিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী ১২ হাজার। প্রাথমিক পর্যায়ে জরিপকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭ হাজার ৮৭৯ জন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ নলকূপের মাথা (হেড) চুরি হয়ে গেছে অনেক আগেই। বাকিগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। তা ছাড়া পানির ফিল্টারগুলোও নষ্ট। আর যে নলকূপগুলো ঠিক আছে তার বেশির ভাগই আর্সেনিকযুক্ত। তাই দিনের পর দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলাকালীন প্রায় ৩১ হাজার শিক্ষার্থী পানির অভাবে তৃষ্ণা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর দফতর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ১৭৭টি গভীর ও এক হাজার ৮৮২টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। এর শতকরা ৮০ ভাগ নলকূপের পানিতে রয়েছে অতিমাত্রায় আর্সেনিক। ফলে এগুলোর পানি পান করার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সুরশাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অমিত বিশ্বাস, অরিণ গোলদার, সুরাইয়া আক্তার, তারিফ শেখ, তানজিল শেখ ও সাদিয়া আক্তার জানায়, তাদের স্কুলের নলকূপ অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। খাবার পানির প্রয়োজনে তাদেরকে আশপাশের বাড়িতে যেতে হয়।
কুরমনি গ্রামের অভিভাবক রেজাউল দাড়িয়া, বুদ্ধ দেব বসু ও পরিমল মজুমদার জানান, স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে পানির সমস্যা চলে আসছে। কিন্তু সুপেয় পানির জন্য কার্যকর কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।
৫৯ নং পশ্চিম কীর্তনখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়ন্তী রানী মুখার্জী জানান, তার স্কুলে কোনো নলকূপ বা পানির ফিল্টার নেই। তাই বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়েরা এবাড়ি ওবাড়ি ছুটে বেড়ায়।
চিতলমারী সরকারি এস এম মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমেন্দ্র নাথ মল্লিক জানান, তার বিদ্যালয়ে ৮১২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের জন্য সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা অস্বাস্থ্যকর পানি পান করছে। বিষয়টি নিয়ে খুবই সমস্যায় আছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, বিশুদ্ধ পানি শিক্ষার্থীর জন্য অপরিহার্য। তাই সমস্যাটি সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
তবে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো সমাধানের জন্য ওপর মহলে জানানো হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement