১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

সোনারগাঁওয়ে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু : ক্লিনিক ভাঙচুর

-

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ভুল চিকিৎসায় আমান্তিকা নামে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক ভাঙচুর করেছে রোগীর স্বজনেরা। গতকাল দুপুরে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় সোনারগাঁও জেনারেল হাসপাতাল নামে একটি ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিক্ষুদ্ধ স্বজনেরা ক্লিনিকের পরীক্ষাগার, মেশিনপত্র, গ্লাস, দরজা জানালাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। ঘটনার পর ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে সোনারগাঁও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ স্বজনদের বিচারের আশ^াসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী মো: পিন্টু মিয়া বাদি হয়ে সোনারগাঁও থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। সোনারগাঁ জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কাউকে পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বড় সাদিপুর গ্রামের পিন্টু মিয়ার স্ত্রী আমান্তিকা গর্ভবতী হলে সিজারের জন্য গত শুক্রবার বিকেলে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকার সোনারগাঁও জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা: নূরজাহান বেগম ওই দিন রোগীকে সিজার করার পরামর্শ দেন। তিনি নিজেই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তার সিজার করান। এ সময় আমান্তিকার একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়।
তাড়াহুড়া করে সিজারের পর ওই রোগীর পেটে গজ কাপড় রেখেই ডা: নূরজাহান কাটা স্থান সেলাই করে দেন। সিজারের পর রোগীর অব্যহত বমি ও পেটে অস্বস্থি তৈরি হলে পেট ফুলে যায়। পুনরায় ওই ডাক্তারের কাছে নিয়ে এলে সে নারায়ণগঞ্জ কেয়ার হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। ডাক্তার নূরজাহান কেয়ার হাসপাতালে গিয়ে পুনরায় ওই রোগীর সিজার করিয়ে জরায়ু কেটে ফেলেন। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে কেয়ার হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকার গেন্ডারিয়া আজগর আলী হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে গতকাল সোমবার ভোরে সে মারা যান।
এ ঘটনায় রোগীর স্বজনেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে দুপুরে সোনারগাঁ জেনারেল হাসপাতালে এসে ক্লিনিকের পরীক্ষাগার, মেশিনপত্র, গ্লাস, দরজা জানালাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। ঘটনার পর ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ স্বজনদের বিচারের আশ^াসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
সরেজমিন দেখা যায়, নিহত আমান্তিকার লাশ একটি এম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসে সোনারগাঁ জেনারেল হাসপাতালে সামনে। এ সময় রোগীর বিক্ষুব্ধ স্বজনেরা ক্লিনিকে গিয়ে হাসপাতালের পরীক্ষাগার, মেশিনপত্র, গ্লাস, দরজা জানালাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।
নিহত আমান্তিকার স্বামী মো: পিন্টু মিয়া জানান, বন্দর উপজেলার কল্যাণদী গ্রামের সোহেল মিয়ার মেয়ে আমান্তিকার সাথে ২০১৮ সালের ৩ আগস্ট তার বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছরের মাথায় ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার জন্য তার স্ত্রীকে হারাতে হয়েছে। তিন দিনের মাথায় তার কন্যা সন্তান এতিম হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের তিনি বিচার দাবি করেছেন। দোষী ডাক্তারকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করেন।
নিহতের বাবা সোহেল মিয়া জানান, গত শুক্রবার আমার মেয়েকে সোনারগাঁ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ডাক্তার সিজার করার পরামর্শ দেন। জরুরি সিজার না করলে মা ও পেটের সন্তান মারা যাবে বলে জানিয়েছেন। ডাক্তারের কথা অনুযায়ী আমরা সিজারের সিদ্ধান্ত নেই। ওই দিন ডাক্তার নূরজাহান আরো চারটি সিজার করেছেন। পাশাপাশি রোগীর দীর্ঘ লাইন। ডাক্তার তাড়াহুড়া করে সিজারের পর পেটে গজকাপড় রেখে সেলাই করায় আমার মেয়ের মৃত্যু হয়। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীকে গ্রেফতার করে বিচার দাবি করি।
সোনারগাঁও থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল ভাঙচুর হয়েছে। বিক্ষুব্ধ স্বজনদের পুলিশ বিচারের আশ^াস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement