২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে মুক্ত তরিকুল ইসলামের পরিবার

-

অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে মুক্ত হলো নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুচিয়াবাড়ী গ্রামের তরিকুল ইসলামের পরিবার। গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের বাড়িতে পুলিশ গিয়ে বাঁশের বেড়া অপসারণ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শেখ ইমরান এবং লোহাগড়া থানার এসআই মিলটন কুমার দেবদাসসহ পুলিশের একটি দল। পুলিশের এ ধরনের ভূমিকায় খুশি তরিকুলের পরিবারসহ সচেতনমহল।
ভুক্তভোগী তরিকুল ইসলাম বলেন, বাড়ি ও ক্ষেতের জমি বিক্রির অপরাধে পাশের ঝিকড়া গ্রামের হাফিজুর রহমান ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে গত শনিবার সকাল ৮টার দিকে হঠাৎ করে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘরের তিন পাশ ঘিরে ফেলেন। ভয়ে এ অন্যায়ের প্রতিবাদও করতে পারিনি। একপর্যায়ে আমার মা, স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানসহ আমি ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ি। বিষয়টি সাংবাদিকেরা জানার পর ওই দিন বেলা ১১টার দিকে লোহাগড়ার ওসিকে অবগত করলেও তিনি কোনো গুরুত্ব দেননি। এ খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর রাতে পুলিশ এসে বাঁশের বেড়া অপসারণ করে। এখন আমার দুই শিশু সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারছে। এ জন্য নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
তরিকুল জানান, পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পর গ্রামবাসীও বিষয়টি মীমাংসার জন্য নড়েচড়ে বসেন। এ জন্য গত রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গ্রামবাসীর উদ্যোগে দু’পক্ষের মধ্যে তিন দফা আলোচনার ভিত্তিতে বিরাজমান দ্বন্দ্ব মিটে যায়। হাফিজুর রহমান জমিজমাসংক্রান্ত বিষয়ে তরিকুলের সাথে সহাবস্থান বজায় রাখবেন বলে আলোচনা সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া দু’পক্ষ আর কোনো দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না বলেও অঙ্গীকার করে।
এ দিকে নিপীড়িত তরিকুলের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সচেতনমহল। তারা বলেন, পুলিশের এ ধরনের ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। শুধু তরিকুল নয়, সব ক্ষেত্রেই পুলিশের এমন ভূমিকা প্রত্যাশা করেন ভুক্তভোগীরা। এতে সমাজে মারামারি, হানাহানি, দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও হতাহতের ঘটনা কমে আসবে। মানুষ ন্যায়বিচার পাবে।
প্রায় ২৫ বছর ধরে নিজের বসতভিটায় বসবাস করছেন তরিকুল ইসলাম। মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। তার বসতভিটায় প্রায় ৩০ শতক জমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৫ শতক নিজের কেনা জমি এবং পাঁচ শতক মায়ের কাছ থেকে পাওয়া জমি। পৈতৃকভিটা ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানার কামারগ্রামে বসবাস করার জন্য তরিকুল লোহাগড়ার তালবাড়িয়া গ্রামের জহিরসহ তার তিন ভাইয়ের কাছে প্রায় ৩০ শতক জমি বিক্রি করেন। ভূমি অফিসে জমির কাগজপত্র যাচাই-বাচাই শেষে গত ৩১ জুলাই ওই জমি লোহাগড়ায় রেজিস্ট্রি হয়। এ ছাড়া গত ৮ আগস্ট ক্ষেতের প্রায় ২১ শতক জমি তরিকুলের প্রতিবেশী শিমুল মোল্যা ক্রয় করেন। জমি বেচাকেনার বিষয়টি তরিকুলের মামা পাশের ঝিকড়া গ্রামের হাফিজার রহমান জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন। এ ঘটনায় হাফিজার গত শনিবার সকালে হঠাৎ করে তরিকুলের ঘরের তিন পাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকে দেন। এ ছাড়া হাফিজুর রহমান জমির ক্রেতাদের জমিতে আসতে দেবেন না বলেও হুমকি দেন।
তরিকুলের মা স্বরূপজান বলেন, গত শনিবার সকাল থেকে আমি, আমার ছেলে, বেটার বউ ও দুই নাতনী ঘর থেকে বের হতে পারছি না। বৈধ জমি বিক্রির পরও হাফিজুর আমাদের হুমকি দেয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান বলেন, পৈতৃকসূত্রে ওই জমিতে আমার অংশ রয়েছে। তাই আমি বেড়া দিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে কেন বেড়া দিলেন সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement