১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মনসুর আলী রেলস্টেশনে যাত্রীর চেয়ে আসন কম : টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ

সিরাজগঞ্জের শহীদ মনসুর আলী স্টেশনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। সিট না পেয়ে ট্রেনের ছাদেও ভ্রমণ করছে অনেক যাত্রী : নয়া দিগন্ত -

বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকা চলাচলকারী ট্রেনগুলো সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন ছুঁয়ে যাওয়ার সুবাদে সিরাজগঞ্জবাসী ট্রেন যোগাযোগসুবিধা বেশি পেয়ে থাকেন। কিন্তু এ স্টেশনে যাত্রী সংখ্যার তুলনায় আসন ও প্লাটফর্মের স্পেস কম থাকায় প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহান যাত্রীরা। এ স্টেশন থেকে ঢাকা পর্যন্ত আসন বাড়িয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমানোর দাবি সিরাজগঞ্জবাসীর। এ ছাড়া যাত্রী সেবার জন্য স্টেশনের লোকবলসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর তাগিদ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। অপরদিকে ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী হওয়ায় এ স্টেশনে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ উঠেছে।
সিরাজগঞ্জ শহর, বেলকুচি, চৌহালী, এনায়েতপুর, কাজীপুর, রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার ট্রেনযাত্রীরা শহীদ এম মনসুর আলী (কড্ডার মোড়) রেলস্টেশন ব্যবহার করেন। এ ছাড়া বগুড়ার ধুনট, শেরপুর উপজেলার অনেক যাত্রীও এ স্টেশনের মাধ্যমে যাতায়াত করেন। এতে সারা বছরই এ স্টেশনে যাত্রীদের চাপ থাকে। তবে ঈদ উপলক্ষে যাত্রীর চাপ অস্বাভাবিক বাড়ে। এবার ঈদের তিনদিন আগে থেকে সাতদিন পর পর্যন্ত মোট চারটি স্পেশাল ট্রেন দেয়া হয়েছে, তবুও চাপ কমছে না। এ সুযোগে স্টেশনে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ট্রেনের টিকিটের কালোবাজারি করেন। অভিযোগ আছে, ঈদের কয়েক দিন আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রির শুরুতেই স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থানীয় কিছু লোককে টিকিট কাউন্টারের লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট দিয়ে দেন। পরে তাদের সাথে যোগাযোগকারী যাত্রীদের কাছে টিকিট সরবরাহ করে বেশি টাকা আদায় করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, স্টেশন ইনচার্জ বুকিং সহকারী হাফিজুর রহমান হিরা অভিযোগ অস্বীকার করে স্টেশনের আসন স্বল্পতার কথা জানান। তার দেয়া তথ্য মতে, শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশনে ঈদের সময় প্রতিদিন বিনা আসনের টিকিট বিক্রির সংখ্যা সহস্রাধিক। স্টেশনের তথ্য মতে, ১৯ জুন বিনা আসনে টিকিট বিক্রির সংখ্যা ১১৬৭ ও ঈদের পর ১০ দিন পর্যন্ত এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়বে। একদিনে বিনা আসনে ১৫০০ যাত্রীর কাছে টিকিট বিক্রির রেকর্ড আছে। এ ছাড়া অনেক যাত্রী ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে যাতায়াত করছেন।
এ বিষয় জানতে চাইলে স্টেশনে নিয়োজিত আনসার বাহিনীর প্রধান আবদুল কুদ্দুছ বলেন, আমরা কাউকেই ট্রেনের ছাদে উঠতে দেই না এবং আগে মই ব্যবহার করলেও এখন পারে না। তবে আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দু’একজন ছাদে উঠলে আমাদের করার কিছু থাকে না।
রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, এ রেলস্টেশন হয়ে সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকা প্রতিদিন মোট সাত জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে থাকে। এসব ট্রেনে এ স্টেশনের জন্য যে পরিমাণ টিকিট বরাদ্দ আছে প্রতিদিন যাত্রী থাকে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। বরাদ্দ সব ট্রেনের এসি-ননএসি, শোভন চেয়ার মিলে আসন সংখ্যা মাত্র ২৮৩টি। এর মধ্যে আন্তঃনগর সিল্কসিটি ট্রেনে শোভন চেয়ার আসন ৬০টি, এসি আসন ছয়টি, আন্তঃনগর চিত্রা ট্রেনে শোভন চেয়ার ১৫টি, এসি আসন চারটি, আন্তঃনগর পদ্মা এক্সপ্রেসে শোভন চেয়ার ৪৫টি, এসি আসন চারটি, আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেসে শোভন চেয়ার ১০টি, এসি তিনটি, আন্তঃনগর ধুমকেতু এক্সপ্রেসে শোভন চেয়ার ১২টি, এসি দুইটি, আন্তঃনগর লালমণি এক্সপ্রেসে শোভন চেয়ার সাতটি, এসি চেয়ার বরাদ্দ নেই। সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসে ১০৫ এসি চেয়ার ১০টি।
এ স্টেশনের কর্মকর্তারা জানান, এ স্টেশন ছুঁয়ে ঢাকাগামী ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে পদ্মা ও চিত্রা এক্সপ্রেসে কমপক্ষে ১০০ করে শোভন চেয়ার ও ২০টি করে এসি চেয়ার বাড়ানো দরকার। এখানে প্রতিদিন আসনবিহীন ২৫০ থেকে ৬০০ টিকিট বিক্রি হয়। মাসে আয় হয় ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টাকা। অথচ এ স্টেশনের যাত্রীসেবার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ওয়েটিং রুম নেই। নেই নিরাপত্তা প্রহরী। রাতে পর্যাপ্ত লাইট জ্বলে না, ভুতুরে অবস্থা বিরাজ করে। রাত ১০টার পর বাইরে বের হওয়া যায় না। জনবল ঘাটতির কারণে প্রতিদিন কাজে হিমশিম খেতে হয়। তিনি এই স্টেশনের জন্য কমপক্ষে ২০০ শোভন চেয়ার ও ৫০টি এসি আসন বাড়ানোর দরকার বলে জানান। কামারখন্দ মহিলা কলেজের প্রভাষক ড.আবদুস সবুর জানান, যাত্রীর চাপ সামলাতে আসন সংখ্যা ও স্টেশনের পরিধি বাড়ানো দরকার। প্রয়োজনে বিদ্যমান স্টেশনের উত্তর পাশে আরো একটি ভাসমান স্টেশন নির্মাণ করা যেতে পারে।
এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ জেলা স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির টানা কয়েক বছর আন্দোলনের মুখে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন চালু হয়। যা সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাতায়াত করে। সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস যাতায়াতে সুফল পাচ্ছেন সিরাজগঞ্জবাসী। তবে জামতৈল স্টেশন ঘুরে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছতে অতিরিক্ত এক ঘণ্টা সময় লাগে। অথচ সিরাজগঞ্জ শহর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলস্টেশনে যেতে ১৫ মিনিটের পথ। এভাবে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকা পৌঁছতে সময় লাগে কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা।
সিরাজগঞ্জ ট্রাক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ও চেম্বারের পরিচালক নুর কায়েম সবুজ সিরাজগঞ্জের বাজার স্টেশন থেকে রায়পুর স্টেশন হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলস্টেশনে সংযোগ স্থাপন করে দেয়ার জন্য দাবি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement