১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত

অর্থ সঙ্কটে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তামজিদ হাসান

পুলিশের গুলিতে আহত কলেজছাত্র তামজিদ হাসান : নয়া দিগন্ত -

হোমনাবাদ আদর্শ ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তামজিদ হাসান (আপন)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগদান করতে গিয়ে ১৯ জুলাই বিকেল ৫টার দিয়ে ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায় কদমতলী থানার সামনে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন। খুব কাছে থেকে পুলিশ তার দিকে গুলি চালায়।
পুলিশের গুলি তার বাম হাতের মাংস বের হয়ে বুকে বিদ্ধ হয়। পরে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে ঢাকার মেরুল বাড্ডার এআইএমএফ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। সেখানে এ পর্যন্ত তার তিনটি অপারেশন করা হয়। আহত তামজিদ হাসান কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের গোপদুয়া গ্রামের মৃত আবুল বাশারের ছেলে। তামজিদ পিতার মৃতুতে পরিবারের খরচ জোগাতে লেখাপড়ার পাশাপাশি ঢাকার নবাবপুর আল জাফর মার্কেটে মেসার্স শৈবাল এন্টারপ্রাইজে চাকরি করতেন।
তামজিদ হাসান বলেন, ১৯ জুলাই শুক্রবার দিনটা ছিল আমার অনেক খারাপ একটা দিন। ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে ঢাকার কদমতলী থানার সামনে রায়েরবাগ এলাকায় মিছিলে যোগ দিতে বাসা থেকে বের হই। এক পর্যায়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সামনে পড়ে গেলে তারা আমাকে ঘেরাও করে রাখে। পরে পুলিশ সামনে থেকে আমার বাম হাতে একের পর এক শর্ট গানের গুলি করে। গুলি আমার বাম হাতের মাংস ছিঁড়ে বুকে বিদ্ধ হয়। এক পর্যায়ে আহত অবস্থায় আমি হাঁটু গেড়ে বসে যাই। তার পরও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আমাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। পরে অনেক কষ্টে নিজেকে দাঁড় করিয়ে পুলিশের কাছ থেকে দূরে পালিয়ে যাই। এ সময় আমার হাত থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।
ঘটনার স্থান থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর আমার মামাতো ভাইয়েরা খবর পেয়ে আমাকে নিয়ে ওই দিন রাতে ঢাকার ১৩টি হাসপাতাল ঘুরে কোথায়ও ভর্তি করাতে পারেননি। এমনকি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ৭ বার নেয়া হলেও আমাকে ভর্তি করা হয়নি। এক পর্যায়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অজ্ঞান অবস্থায় চিকিৎসকরা মৃত ভেবে আমাকে হাসপাতাল মর্গে ফেলে রাখে। পরে পরিচিত এক মামার মাধ্যমে ২০ জুলাই সকালে মেরুল বাড্ডার এআই এমএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে আমার হাত ও বুকে অপারেশন করা হয়। এতে ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে। চিকিৎসক বলেছেন, এখনো আমার বুকে প্রায় আড়াইশ’ ছররা গুলি রয়েছে।
দীর্ঘ এক মাস সাত দিন চিকিৎসা নিয়ে আমি হাসপাতাল থেকে রিলিজ পাই। এখনো আমার বুকের ও হাতের রগের অপারেশন বাকি রয়েছে। সেটা আরো দেড় মাস পরে করতে হবে। এতে ব্যয় হবে আরো ৪ লক্ষাধিক টাকা। জানি না এ টাকা আমি কোথা থেকে কিভাবে জোগাড় করব।
তামজিদ আরো বলেন, এ পর্যন্ত আমার চিকিৎসা বাবদ সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাইনি। এমনকি কোনো সমন্বয়ক পর্যন্ত আমার সাথে দেখা করেননি। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের তালিকায় আমার নাম আছে কি না এটাও জানি না।’
তামজিদের মা নাছিমা বেগম বলেন, আমার স্বামী নেই। তার পরও ছেলের চিকিৎসায় ধারদেনা করে ইতোমধ্যে অনেক টাকা ব্যয় করেছি। সামনে আরো অনেক টাকার প্রয়োজন। সরকারি বা বেসরকারিভাবেও এ পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাইনি। এ অবস্থায় ছেলের পরবর্তী চিকিৎসার টাকা কিভাবে জোগাড় করব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে।’


আরো সংবাদ



premium cement