০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,
`

ইবির হল ফান্ড থেকে নিয়মিত চাঁদা নিতো ছাত্রলীগ

কেউ বিরোধিতা করলে বিভিন্নভাবে হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হতো
-

গণঅভ্যুত্থানের আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিভিন্ন দফতর থেকে চাঁদাবাজি করতেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বিভিন্ন দিবস ও প্রোগ্রামের নামে তারা হল ফান্ড থেকে চাঁদা নিতেন। হল সূত্র জানায়, বিশ^বিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের মাধ্যমে হল ফান্ড থেকে চাঁদা প্রদানে প্রভোস্টদের নির্দেশনা দেয়া হতো।
দীর্ঘদিন কমিটিশূণ্য থাকার পর ২০২২ সালে জুলাই মাসে ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতকে সভাপতি ও নাসিম আহমেদ জয়কে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ সদস্যের কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এই কমিটি গঠনের কয়েকমাস পরেই বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও দিবসের নামে হল ফান্ড থেকে চাঁদা নেয়া শুরু হয়। এমনকি প্রভোস্ট কাউন্সিলের মিটিংয়ে ছাত্রলীগকে হল ফান্ড থেকে চাঁদা দিতে প্রভোস্টদের নির্দেশনা দেয়া হতো। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মিটিংয়ে রেখে এ নির্দেশনা দেয়া হতো। ফলে সরাসরি বিরোধিতা করতে পারতেন না প্রভোস্টরা। এ ছাড়া কেউ বিরোধিতা করলে বিভিন্নভাবে হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সাবেক প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল হকের পদত্যাগের দাবিতে গত বছরের জানুয়ারিতে আন্দোলন করে ছাত্রলীগ। এ ঘটনার এক সপ্তাহ আগে হলের বিভিন্ন বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের চাপে পড়ে প্রশাসনের কাছে পদত্যাগপত্র দেন ড. মঞ্জুরুল। তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন কাজে ছাত্রলীগের সাথে মতবিরোধ হয়। বিশ^বিদ্যালয়ের টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর খেলোয়াড়দের হুডি বানানোর দায়িত্ব ও অতিরিক্ত হুডি বানাতে চায় ছাত্রলীগের নেতারা। তাদের কথা না রাখায় তাদের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে তাদের চাওয়া পূরণ না করায় আমার প্রতি তাদের ক্ষোভ ছিল। পরে বিভিন্ন সময়ে ডাইনিংয়ে খাবারে পাথর, কাঁচ পাওয়া যেতে শুরু হয়। এটা নিয়ে আন্দোলন করে তারা। সর্বশেষ এক কর্মকর্তার সমস্যাকে কেন্দ্র করে আমার পদত্যাগ দাবি করে তারা।
একাধিক প্রভোস্ট জানান, অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি হওয়ার পর ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ায় এ চাঁদাবাজির পরিমাণ বেড়ে যায়। প্রভোস্ট কাউন্সিলের মিটিংয়ে ছাত্রলীগকে হল ফান্ড থেকে চাঁদা দিতে সরাসরি নির্দেশনা দিতেন তিনি। পরে অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি হওয়ায় তিনিও একই কাজ করতেন।
লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, দিবস ও বিভিন্ন প্রোগ্রামের নামে ছাত্রলীগকে টাকা দিতে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতির মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হতো। শেষের দিকে আমি টাকা দেয়া বন্ধ করে দিই।
হল ফান্ড থেকে ছাত্রলীগকে চাঁদা দেয়ার বিষয়ে অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে এমন ঘটনা ঘটতে পরে। কিন্তু প্রভোস্ট কাউন্সিলের মিটিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এমন কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মিজানূর রহমান বলেন, যদি এমন কিছু করে থাকে তাহলে সেটি অনৈতিক। হলের ফান্ড শুধু শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যয় করার নিয়ম আছে। এই টাকা কোনো রাজনৈতিক দলের ফাংশনে দেয়া উচিৎ নয়।


আরো সংবাদ



premium cement