পতিত জমিতে মিষ্টিকুমড়ায় কোটি টাকার স্বপ্ন
- গোলাম কবির ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)
- ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আম, ধান ও রেশম এই তিনটি ফসল ছাড়াও কৃষিতে সমৃদ্ধ চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রান্তিক উপজেলা ভোলাহাট। কৃষিই এখানকার মানুষের প্রধান পেশা। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এ উপজেলার কৃষকরা যুগ যুগ ধরে আম চাষ করে আসছেন। একমাত্র আম এখানকার কৃষির প্রধান অর্থকারী ফসল। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে ফলন কম ও বাজারমূল্য ধসে আমচাষিদের মুখে হাসি নেই। ফলে অনেক আমচাষি বাগান কেটে ফেলা শুরু করেছে। ঠিক এমন সময়েই কৃষকের আলোকবর্তিকা হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর হাজির হয়ে আম বাগানের পতিত জায়গায় মিষ্টিকুমড়া চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। ফলে উপজেলায় মিষ্টিকুমড়া চাষের হিড়িক পড়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু আমবাগানের পতিত জমিতে মিষ্টিকুমড়ার প্রদর্শনী করা হয়। বাম্পার ফলন হওয়ায় ২০২২ সালে প্রায় ২শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ হয়। ২০২৩, ২০২৪ সালে উপজেলা পরিষদের এডিপি থেকে প্রকল্প নিয়ে প্রায় ৫শ’ কৃষককে বীজ সহায়তা দেয়া হয়। প্রায় ১৫০০ কৃষককে প্রশিক্ষণসহ কৃষক সমাবেশ করে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ বছর ভোলাহাটে এক হাজার ৬০০ হেক্টরে মিষ্টিকুমড়া চাষ হয়েছে।
এ বিষয়ে মিষ্টিকুমড়া চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা আম চাষ করে লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম না। প্রতিবেশী আমবাগানে মিষ্টিকুমড়া চাষ করে অনেক লাভ করেছে। তাই দেখে আমিও এ ফসলের আবাদ শুরু করেছি। চাষি বেলাল বলেন, বাগানের পতিত জমি স্বল্পমূল্যে তিন-চার মাসের জন্য লিজ নিয়ে মিষ্টিকুমড়া চাষ করেছি। আশা করছি এ বছর ১০০ বিঘা জমি থেকে ৫০ লাখ টাকার মিষ্টিকুমড়া বিক্রি করতে পারব।
কৃষক আজম আলী বলেন, বিঘা প্রতি লিজসহ ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। ফলন ভেদে বিঘাপ্রতি ৮০-৯০ মন ফলন হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সুলতান আলী জানান, মিষ্টিকুমড়া মাত্র ৯০ দিনের ফসল। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে লাগানো হয়। আমবাগানে আগে মাসকালাই, খেসারি চাষ করা হতো। তিনি জানান, এ বছর ১৬০০ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। বিঘাপ্রতি ৭৫ মন ফলন ধরলে উৎপাদন হবে ৩৬ হাজার ৪০০ মেট্রিক টনের ওপর। ৮০০ টাকা মন বিক্রি হলে এ বছর প্রায় ৭৩ কোটি টাকার মিষ্টিকুমড়া চাষ থেকে আয় হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়। এ সব বাগানের যদি মাত্র ৩০ ভাগ জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ করা যায় তাহলে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার মিষ্টিকুমড়া উৎপাদন করা সম্ভব। এ স্বপ্নই দেখাচ্ছে ভোলাহাটের কৃষক ও কৃষি বিভাগ। যে আম গলার কাঁটা হয়েছে সেখানেই এখন আমের পাশাপাশি মিষ্টিকুমড়া চাষ করে কৃষক হচ্ছে লাভবান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এ উদ্যোগ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা