১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আরো মসজিদে হামলার পরিকল্পনা ছিল ক্রাইস্টচার্চ হামলাকারীর

ব্রেনটন টেরেন্ট - ছবি : সংগৃহীত

গত বছর নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে হামলা করে ৫১ জনকে হত্যায় অভিযুক্ত ব্রেনটন টেরেন্টের যে আরো মসজিদে হামলার উদ্দেশ্য ছিল সেই তথ্য বেরিয়ে এলো চলমান শুনানিতে।

চার দিন ধরে এই শুনানি চলবে।

মসজিদে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ‘যত বেশি সম্ভব মানুষকে হতাহত’ করার পরিকল্পনাও ছিল তার।

অস্ট্রেলিয়ান ওই নাগরিক ৫১ জনকে হত্যা, ৪০ জনকে হত্যার চেষ্টা এবং সন্ত্রাসবাদের একটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।

ঊনত্রিশ বছরের ব্রেন্টন টেরেন্টকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হতে পারে, যেখানে কোনোরকম প্যারোলের সুযোগ থাকবে না। নিউজিল্যান্ডে এর আগে কাউকে এরকম সাজা দেয়া হয়নি।

এই সাজার রায় দেখার জন্য হতাহতদের অনেক স্বজন বিদেশ থেকেও এসেছেন, যাদের নিউজিল্যান্ডে এসে কোয়ারেন্টাইনেও থাকতে হয়েছে।

গত বছরের ১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চের দুইটি মসজিদে বন্দুক নিয়ে গুলি করতে শুরু করে ওই হামলাকারী। গুলি করার দৃশ্য সে সরাসরি অনলাইনে সম্প্রচার করে।

শুক্রবারের নামাজের সময় আল নূর মসজিদে তিনি প্রথম হামলা করেন। এরপর গাড়ি চালিয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরের লিনউড মসজিদে গিয়ে আবার হামলা করে আরো মানুষ হত্যা করেন।

এই হামলায় পুরো বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে যায়। এরপর নিউজিল্যান্ডের অস্ত্র আইনেও তড়িৎ পরিবর্তন আনা হয়।

সেই সময় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা ক্রাইস্টচার্চে অবস্থান করছিল। দলের কয়েকজন সদস্য এমনকি হামলার শিকার হওয়া একটি মসজিদে নামাজও পড়তে গিয়েছিল।

সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তারা।

সাজার শুনানিতে যা বলা হচ্ছে
ক্রাইস্টচার্চে সোমবার থেকে শুরু হওয়া সাজার শুনানি চার দিন ধরে চলবে।

কোভিড-১৯ বিধিনিষেধের কারণে আদালত কক্ষ প্রায় খালিই রয়েছে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভিডিও ফিডের মাধ্যমে শহরের অন্যান্য আদালত কক্ষে হাজার হাজার মানুষ আদালতের কার্যক্রম দেখছে।

ধুসর রঙের পোশাক এবং তিনজন পুলিশ কর্মকর্তার বেষ্টনীতে বন্দুক হামলাকারী পুরো সময় চুপচাপ রয়েছেন বলে জানা গেছে। মাঝে মাঝে তিনি রুমের অন্যত্র বসে থাকা বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি এবং হতাহতদের স্বজনদের দিকে তাকিয়ে দেখছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বার্নাবি হাওয়েজ আদালতকে বলেছেন, ওই হামলার জন্য বন্দুকধারী বহু বছর ধরে পরিকল্পনা করছিল। তার উদ্দেশ্যে ছিল ‘যত বেশি সম্ভব মানুষকে হতাহত করা।’

নিউজিল্যান্ডের মসজিদ সম্পর্কে হামলাকারী তথ্য সংগ্রহ করে। মসজিদের নকশা, অবস্থান এবং আরো বিস্তারিত সব তথ্য সংগ্রহ করে। তার উদ্দেশ্য ছিল, মসজিদে সবচেয়ে ব্যস্ত সময়ে সে হামলা করবে।

মসজিদে হামলার আগে তিনি ক্রাইস্টচার্চ শহর পরিদর্শন করেন এবং তার প্রাথমিক লক্ষ্যস্থল, আল নূর মসজিদের ওপর একটি ড্রোন উড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করেন।

আল নূর মসজিদ এবং লিনউড ইসলামিক সেন্টারের বাইরে তিনি অ্যাশবার্টন মসজিদে হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। তৃতীয় মসজিদে যাবার পথে তাকে আটক করা হয়।

আদালতে আরো বলা হয়, আল নূর মসজিদের বাইরে যারা নিরাপদ আশ্রয়ে লুকানোর চেষ্টা করছিলেন, তাদের ওপরেও গুলি করেন ব্রেনটন টেরেন্ট।

এদের একজন আনসি আলিবাভা, মসজিদের বাইরে পড়ে থাকা তার শরীরের ওপর তিনি গাড়ি চালিয়ে দেন।

আদালতে জানানো হয়, হামলাকারী টেরেন্ট যখন গাড়ি চালিয়ে লিনউড ইসলামিক সেন্টারের দিকে যাচ্ছিলেন, গাড়ি থামিয়ে পলায়নপর একজন আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ব্যক্তিকে তিনি গুলি করেন। একজন ককেশীয় ব্যক্তির দিকেও তিনি বন্দুক তাক করেন, পরে হেসে গাড়ি চালিয়ে চলে যান।

গ্রেফতারের পর তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, তার পরিকল্পনা ছিল হামলার পরে মসজিদ আগুনে পুড়িয়ে দেয়া।

আদালতে নিজের পক্ষে নিজেই বক্তব্য দিয়েছেন ব্রেনটন টেরেন্ট। প্রথম দিকে তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছিলেন। তবে সশরীরে বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে তিনি সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।

তার কমপক্ষে ১৭ বছরের সাজা হতে পারে। কিন্তু মামলার প্রধান বিচারক হাইকোর্টের বিচারপতি ক্যামেরন ম্যান্ডারের ক্ষমতা রয়েছে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার, যেখানে কোনো প্যারোলের সুযোগ থাকবে না। নিউজিল্যান্ডে এর আগে কাউকে এরকম সাজা দেয়া হয়নি।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement