২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইসলামের প্রচারণায় সলিডারিটি গেমস

বিশ্বে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দিচ্ছে ইসলামিক সলিডারিটি গেমস - ছবি : সংগৃহীত

খেলাধুলায় পিছিয়ে নেই মুসলমানরা। তারাও পারে বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্টের পদক প্রদান মঞ্চে নিজ দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর উপলক্ষ তৈরি করতে। এই চিন্তা-চেতনা থেকেই ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু ইসলামী সলিডারিটি গেমসের।

১৯৯৩ সালে ইরান প্রথম প্রবর্তন করে মহিলা ইসলামী গেমসের। সেখানে শুধু মহিলা ক্রীড়াবিদরাই অংশ নিতেন। মহিলাদের সাঁতারের সময় পুরুষরা নিষিদ্ধ ছিল। ওই মহিলা গেমস ২০০৫ সালে সর্বশেষ মাঠে গড়ায়। এরপর ইসলামী সলিডারিটি গেমস চালু হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় মহিলা ইসলামী গেমস। তবে মহিলাদের ওই গেমসের মাধ্যমে ইসলামের বড়সড় একটা প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল অংশগ্রহণকারীদের ওপর।

বাংলাদেশে সবুরা খাতুন, হালিমা বিথী ও রহিমা যুথীদের দেখা গেছে ইরান থেকে মহিলা গেমস শেষ করে দেশে ফিরেও তারা হিজাব পরে চলাচল করছিলেন। তখন বাংলাদেশ দলের মহিলা কর্মকর্তা রাফিয়া আক্তার ডলি জানিয়েছিলেন, ইরানে গেমস চলাকালীন সময়ে আমাদের সবসময়ই হিজাব পরতে বলা হতো। মাথা থেকে কাপড় সরে গেলেই তারা টেনে ঠিক করে দিতো এবং বলতো-- খানম, দয়া করে মাথায় কাপড় দিন।

২০০৫ সালের ইসলামী সলিডারিটি গেমসে মহিলা ক্রীড়াবিদরা নিষিদ্ধ থাকলেও এরপর থেকে ছেলে-মেয়ে সবার জন্যই উন্মুক্ত এই গেমস। তবে পোশাকে সেই ইসলামী রীতির কঠোরতা নেই। কেউ হিজাব পরেছে, কেউ বা পশ্চিমা ঢংয়ের কাপড় গায়ে লাগিয়েছে। পোশাকের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকরাও দুই ভিন্ন ধারায় বিভক্ত ছিল। কোনো কোনো মহিলা ভলেন্টিয়ারের মাথায় ছিল স্কার্ফ, কারো পুরো শরীর বোরকায় ঢাকা, কেউ বা খোলামেলা পোশাকের সাথে দেদারছে সিগারেট ফুঁকছে।

মিশ্র কালচারের উপস্থিতি সত্ত্বেও মুসলিম দেশগুলোর এই গেমস কেন্দ্র করে ইসলামের প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা মুসলিম ক্রীড়াবিদদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও ভাতৃত্ববোধের জন্ম হচ্ছে। এই গেমসে মুসলমান ছাড়া অন্য ধর্মের ক্রীড়াবিদরাও লড়াই করছে। তাদের কাছেও পৌঁছে যাচ্ছে ইসলামের বাণী।

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সদস্য উগান্ডার কলিন্স উইলয়ামে মতে, ‘ইসলাম সবার জন্য। এর বিস্তার সর্বত্র। সারা বিশ্বেই ছড়িয়েছে ইসলাম। এটা শুধু মুসলমানদের জন্য নয়। সবার জন্যই হতে যাচ্ছে। সেই ধারা অনুসরণেই চলছে ইসলামী সলিডারিটি গেমস।’

উজবেকিস্তানের ফেন্সিং কোচ ভেনিজুয়েলার হোসে গ্রেগারিও। তার মতে, ‘এই গেমস ইসলামী দেশগুলোকে আরো ব্যাপক হারে খেলাধুলায় আসতে উৎসাহিত করছে।’

কোনিয়া গেমসে স্বর্ণজয়ী ইরানের সাবাগাতি মোহাম্মদ জানান, দেখুন অনেকগুলো মুসলিম দেশ এই গেমসে অংশ নিচ্ছে। আবার মুসলমানের সংখ্যা ৫০ শতাংশের অনেক কম এমন দেশও (গায়ানা, সুরিনাম, ক্যামেরুন) এই গেমসে দল পাঠাচ্ছে। এই গেমস কিন্তু সেইসব দেশেও ইসলামের বাণী পৌঁছে দিচ্ছে।

পোশাকের বিধি-নিষেধের কারণে সৌদি আরব, ইরানসহ কিছু মুসলিম দেশ তাদের মহিলা ক্রীড়াবিদদের অলিম্পিক এবং এশিয়ান গেমসে পাঠাতো না। পরে পোশাকের শালীনতা বজায় থাকে এমন ডিসিপ্লিনে তারা মহিলাদের এই দুই গেমসে পাঠানো শুরু করে। এখন ইসলামী সলিডারিটি গেমস মুসলিম মেয়েদের আন্তর্জাতিক ইভেন্টে প্রতিনিধিত্ব করার মাধ্যমটা আরো প্রশস্ত করে দিয়েছে। সে সাথে মুসলিম খেলোয়াড়রা জানতে পারছে তাদের পারস্পরিক পারফরম্যান্সের মানদণ্ড।

ইসলামের এই পরোক্ষ প্রচারণার অংশ হিসেবেই ২০২৫ সালে প্রথমবারের মতো খৃস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে হতে যাচ্ছে ইসলামী সলিডারিটি গেমস। গেমসের ৬ষ্ঠ আসরের ভেন্যু ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াউন্ডি। আফ্রিকান এই দেশটির জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ মুসলমান। বাকিরা খৃস্টান। মুসলমানদের ২৭ শতাংশ সুন্নী, অবশিষ্টরা শিয়া।

উল্লেখ্য, এর আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া ও আজারবাইজানে হয়েছিল ইসলামী সলিডারিটি গেমস। ২০০৯ ও ২০১০ সালে ইরান গেমসটির আয়োজন করতে পারেনি। আর তুরস্কের যে কোনিয়া শহরকে এবারের সলিডারিটি গেমসের ভেনু করা হয়, সেই কোনিয়াতে দেশটির বেশি সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমানের বাস।


আরো সংবাদ



premium cement