২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

স্ট্যান্ডবাই থেকে স্বর্ণকন্যা সোমা

-

নিজের নামটি মাইকে ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন কম্পাউন্ড ইভেন্টের প্রতিযোগী সোমা বিশ্বাস। সোমার কান্না বাংলাদেশের স্বর্ণ উদযাপনে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। মঞ্চ থেকে বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপল ও সভাপতি সভাপতি লে.জে (অব) মাইনুল ইসলাম সোমার কান্না দেখে দৌড়ে এলেন। সোমার কান্না ছুঁয়ে যায় ফেডারেশনের সভাপতি-সম্পাদককেও।

এক গেমসে একটি ডিসিপ্লিন থেকে বাংলাদেশ সাতটি স্বর্ণ এর আগে কখনো পায়নি। সোমার স্বর্ণ পদক দিয়ে আরচারি সেই রেকর্ড স্পর্শ করেছে। স্বাভাবিকভাবেই গণমাধ্যমের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন সোমা। স্বর্ণ নিশ্চিত হওয়ার কয়েক মিনিট পেরিয়ে গেলেও কান্না থামছিল না তার। কান্নাজড়িত কন্ঠেই বলছিলেন, ‘যেখানে আমার খেলাই ছিল অনিশ্চয়তা সেখানে আমিই পেলাম স্বর্ণ। আমি কখনোই ভাবিনি স্বর্ণ জিতব ও ফাইনাল খেলব।’

কম্পাউন্ড মহিলা বিভাগে সোমার অবস্থান ছিল চতুর্থ। কম্পাউন্ড বিভাগে শ্যামলী রায়, বন্যা ও সুস্মিতা তার চেয়ে সিনিয়র এবং ভালো আরচার হিসেবেই পরিচিত। তাই স্ট্যান্ডবাই হয়ে এসে ব্যক্তিগত বিভাগে স্বর্ণ নিয়ে দেশে ফিরবেন- এটা ভেবে আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সুস্মিতা দি, শ্যামলী দি ও বন্যা আপা সবাই আমার চেয়ে সিনিয়র। তারা যথেষ্ট ভালো আরচার। ব্যক্তিগত ইভেন্টে তাদের চেয়ে ভালো স্কোর করব এবং ফাইনাল খেলব- সত্যিই ভাবিনি। চার নম্বর খেলোয়াড় হয়ে গেমসে স্বর্ণ জিতলাম এটা আমার কাছে স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু মনে হচ্ছে।’

স্ট্যান্ডবাই থেকে স্বর্ণ জয়ের রহস্য সম্পর্কে বলেন, ‘আমার আত্মবিশ্বাস ছিল। তবে আমার চেয়ে বেশি ছিল আমার কোচের। কোচ আমার চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। আমি শুধু তার নির্দেশনা মেনে চলেছি।’

বাংলাদেশ আরচারি দলের মূল কোচ ফ্রেডরিক মার্টিন হলেও কম্পাউন্ড বিভাগটা বিশেষভাবে দেখেন স্থানীয় কোচ জিয়াউল হক। শীষ্যের এমন সাফল্যে তৃপ্ত কোচ জিয়া বলেন, ‘আমার কোচিং ক্যারিয়ারে অনেক সময় ও পরিশ্রম দিয়েছি সোমার পেছনে। সেই শ্রম ও পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। ওর সবচেয়ে বড় গুণ কখনো হাল ছাড়ে না। বারবার চেষ্টা করে। সেই চেষ্টাই ওকে আজ স্ট্যান্ডবাই থেকে প্রথম করেছে। কতবার যে তার বো এর স্ট্রিং ঠিক করে দিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই।’

গেমসে অংশগ্রহণের জন্য ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আরচারি দলের সাথে কাঠমান্ডু আসার কথা ছিল। ২ ডিসেম্বর ছিল সোমার ডিগ্রী (পাস) পরীক্ষা। তার পরীক্ষার জন্যই ফেডারেশন এক দিন পিছিয়ে দেয় যাত্রা। ফেডারেশনের আস্থার প্রতিদান দিতে পেরে সন্তুষ্ট এই আরচার বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি কিছুটা চাপে ছিলাম। আমার জন্য পুরো দল দুই দিন পর এলো। দুই দিন বেশি নেপালে অনুশীলন করতে পারলো না আমার জন্য। এটা আমাকে খুব পোড়াচ্ছিল। তবে ফেডারেশন আমাকে কখনোই এই ব্যাপারে কিছু বলেনি। আমি স্বর্ণ জিতে ফেডারেশনের সম্মান রাখতে পারায় এখন কিছুটা তৃপ্তি পাচ্ছি।’


আরো সংবাদ



premium cement