আবর্জনায় ভরে গেছে এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়া!
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৬ জুলাই ২০২৪, ২১:৪৫
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বত এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়ার এলাকা আবর্জনায় ভরে গেছে। বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করতে এবং বরফ খনন করে লাশগুলো বের করে আনতে লেগে যেতে পারে কয়েক বছর।
উঁচু পর্বতটির চূড়ায় ময়লা-আবর্জনা ও লাশ নিয়ে কাজ করা এক শেরপা এই তথ্য জানিয়েছেন।
নেপালের সেনা ও শেরপাদের একটি দল চলতি বছর এভারেস্ট আরোহণের মৌসুমে ১১ টন আবর্জনা, ৪টি লাশটি এবং একটি কঙ্কাল অপসারণ করেছে। আর এই কর্মযজ্ঞ পরিচালনায় অর্থায়ন করেছে নেপাল সরকার।
শেরপাদের দলের নেতৃত্ব দেয়া আং বাবু শেরপা বলেন, সাউথ কোলে এখনো ৪০ থেকে ৫০ টন আবর্জনা থাকতে পারে। পর্বতারোহীদের চূড়ায় তাদের আহরণ চেষ্টা করার আগে এই শিবিরের অবস্থান।
তিনি বলেন,‘সেখানে ফেলে আসা আবর্জনাগুলোর বেশিরভাগই পুরোনো তাঁবু, কিছু খাবারের প্যাকেজিং, গ্যাস কার্তুজ, অক্সিজেনের বোতল, তাঁবুর প্যাক ও তাঁবু বেঁধে রাখার জন্য ব্যবহৃত রশি।’
তিনি আরো বলেন, ৮ হাজার মিটার (২৬ হাজার ৪০০ ফুট) উচ্চতায় আবর্জনাগুলো জমাট বাঁধা অবস্থায় স্তরে স্তরে রয়েছে। আর এখানেই দক্ষিণ কোল শিবিরটি অবস্থিত।
১৯৫৩ সালে পর্বতটি প্রথমবারের মতো জয় করার পর থেকে হাজার হাজার পর্বতারোহী এটি আরোহণ করেছেন। তাদের অনেকে তাদের পদচিহ্নের পাশাপাশি ফেলে গেছেন আরো অনেক কিছু।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্বতারোহীদের তাদের আবর্জনা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে। পাশাপাশি তাদের আমানত হারানোর একটি সরকারি নথির প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি পরিবেশ সম্পর্কে পর্বতারোহীদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। এর ফলে ফেলে আসা আবর্জনার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। কিন্তু আগের দশকগুলোতে এমনটা ছিল না।
অং বাবু বলেন, ‘বেশিরভাগ আবর্জনা পুরোনো অভিযানের।’
দলের শেরপারা উচ্চতর অঞ্চলগুলো থেকে আবর্জনা ও লাশের সংগ্রহ করেছেন। সৈন্যরা নিম্নস্তরে ও বেসক্যাম্প এলাকায় জনপ্রিয় বসন্ত আরোহণের মৌসুমে কয়েক সপ্তাহ ধরে কাজ করেন। আর এ সময় আবহাওয়া পরিস্থিতি বেশ অনুকূল থাকে।
অং বাবু বলেন, সাউথ কোল এলাকায় তাদের কাজের জন্য আবহাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ সেখানে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক পরিমাণের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। তাপমাত্রা কমে যাওয়াসহ বাতাস দ্রুত তুষার ঝড়ের সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি বলেন,‘আমাদের ভালো আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল। যখন সূর্যের তাপে বরফের আচ্ছাদন গলে যাবে। কিন্তু সেই মনোভাব ও পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। অক্সিজেনের মাত্রা খুব কম থাকায় বেশিক্ষণ থাকাও কঠিন।’
আবর্জনা সংগ্রহ করাও একটি বড় কাজ। কারণ এটি বরফের ভেতরে জমে থাকে এবং ব্লকগুলো ভেঙে ফেলাও কঠিন।
তিনি বলেন, সাউথ কোলের কাছে বরফের গভীর থেকে একটি লাশ খুঁড়ে বের করতে দুই দিন সময় লেগেছিল। কাজটির আংশিক সম্পন্ন করার পর দলটিকে নিম্ন শিবিরে পিছু হটতে হয়েছিল, কারণ ততক্ষণে আবহাওয়া খারাপ প্রতিকূলে গেছে। আবহাওয়ার উন্নতির পরে আবার শুরু উদ্ধার কাজটি করতে হয়েছিল।
আরেকটি লাশ ৮ হাজার ৪০০ মিটার উঁচুতে ছিল। এটিকে ক্যাম্প-২ এ টেনে নিয়ে যেতে ১৮ ঘণ্টা সময় লেগেছিল। যেখানে একটি হেলিকপ্টার এটিকে তুলে নিয়েছিল।
নিহতদের লাশ শনাক্তকরণের জন্য কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সরানো ১১ টন আবর্জনার মধ্যে ৩ টন পচনশীল জিনিস এভারেস্টের ঘাঁটির নিকটবর্তী গ্রামগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বাকি ৮ টন আবর্জনা কুলি ও চমরী গাইতে করে ট্রাকে তুলে কাঠমান্ডুতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকারী সংস্থা অগ্নি ভেঞ্চারস পরিচালিত একটি স্থাপনায় এটি পুনর্ব্যবহারের জন্য বাছাই করা হয়।
সংস্থাটির কর্মকর্তা সুশীল খাদগা বলেন,‘আমরা সবচেয়ে পুরোনো টর্চ লাইটের জন্য রিচার্জেবল ব্যাটারি বর্জ্য পেয়েছি, যেটি ১৯৫৭ সালের।
পর্বতারোহীরা কেন আবর্জনা ফেলে রাখেন?
খাদগা বলেন,‘এত উচ্চতায় অক্সিজেন খুব কম থাকে এবং বেঁচে থাকা খুব কঠিন। তাই পর্বতারোহী ও তাদের সাহায্যকারীরা নিজেদের বাঁচানোর দিকেই বেশি মনোযোগী হন।’
সূত্র : ইউএনবি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা