উত্তর কোরিয়ায় বিদেশী গান শুনলেই মৃত্যুদণ্ড, নিষিদ্ধ ভিনদেশী গালিও!
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ জুলাই ২০২৪, ১৬:৩৫
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন আরো কঠোর হচ্ছেন। তার দেশের আইনকানুন আরো সর্বনাশী হয়ে উঠছে। বাইরের জগতের জন্য দরজা একেবারেই বন্ধ করে দিতে চাইছেন কিম। তার সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্তে সেই ইঙ্গিত মিলেছে।
বিবিসির একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ায় পর পর বেশ কিছু জিনিস নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিদেশী কোনো জিনিসই সেখানকার মানুষ ব্যবহার করতে পারেন না। এমনকি বিদেশী গান শোনাও সেখানে অন্যায়।
বিদেশী অর্থে মূলত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রভাবই দেশ থেকে মুছে ফেলতে চান কিম। গত কয়েক বছর ধরে উত্তর কোরিয়ার প্রশাসনে সেই চেষ্টা চোখে পড়ছে। নাগরিকদের সাধারণ চলাফেরাতেও হস্তক্ষেপ করছে প্রশাসন।
বিবিসির প্রতিবেদনে দাবি, উত্তর কোরিয়ায় নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে সাদা রঙের বিয়ের পোশাক। সাধারণত, সেখানে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে কনেকে সাদা গাউন পরতে দেখা যেত। তা আর করা যাবে না বলে জানিয়েছেন কিম।
কিম প্রশাসনের বক্তব্য, বিয়েতে কনের সাদা পোশাকের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ান সংস্কৃতির প্রভাব। বিদেশী প্রভাব ঠেকাতে তাই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশে নিজস্ব সংস্কৃতি লালন করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রশাসক কিম।
শুধু বিয়ের পোশাকেই নয়, বিয়ের রীতিতেও নেমে এসেছে সরকারি নিয়ম। প্রচলিত প্রথা ছিল, বিয়ের দিন কনেকে কাঁধে তুলে নেন বর। এই রীতিতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দাবি, এতেও রয়েছে দক্ষিণী প্রভাব।
দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু সংবাদমাধ্যমে দাবি, বিয়ের অনুষ্ঠানে সব ধরনের আড়ম্বর নিষিদ্ধ করেছেন কিম। বিয়ে নামক অনুষ্ঠানটিতে আনন্দের কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন তিনি। এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি সামাজিক রীতি।
বিবিসি জানিয়েছে, গত বছর উত্তর কোরিয়ায় ২২ বছরের এক যুবককে বিদেশী গান শোনার জন্য শাস্তি দেয়া হয়। ওই যুবককে মৃত্যুদণ্ড দেন কিম। সকলের সামনে প্রকাশ্যে সেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
যুবক পেশায় কৃষক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ৭০টি বিদেশী গান শুনেছেন। তিনটি বিদেশী ছবি দেখেছেন। শুধু তাই নয়, ওই ছবিগুলো তিনি অন্যদের মধ্যে বিলিও করেছিলেন।
বিবিসির দাবি, তাদের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখে গত বছর প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা অস্বীকার করেছিল কিমের দেশ। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার একাধিক সংবাদমাধ্যমেও সেই খবর প্রকাশিত হয়।
২০২০ সালে কিমের দেশে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা হয়। তাতে বলা হয়েছিল, দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো বিনোদনমূলক উপাদান দেখা অথবা প্রচার করা উত্তর কোরিয়ায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তার শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড।
ওই আইনের ভিত্তিতেই যুবককে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এরপর একই অপরাধে উত্তর কোরিয়ার আরো দুই কিশোরকে কঠোর শ্রমের শাস্তিও দেয়া হয়েছিল।
শুধু বিনোদন নয়, বিদেশী গালিগালাজও নাকি নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে কিমের দেশে। কেউ যদি প্রকাশ্য এমন কোনো গালি দেন, যার সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার যোগ রয়েছে, তবে তাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, কিমের দেশে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা স্বীকার করা হয় না। প্রশাসনের তরফে যখন তখন যে কারো বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালানো হয়।
বাড়ি বাড়ি তল্লাশির এই প্রবণতা ২০২১ সাল থেকে বেড়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিবেদনে। বিদেশী সংস্কৃতির কোনো ছোঁয়া কোনো বাড়িতে রয়েছে কিনা, তার খোঁজে দিনের পর দিন কার্যত চিরুনিতল্লাশি চালিয়েছেন কিমের কর্মকর্তরা।
উত্তর কোরিয়ায় সাধারণ মানুষের মোবাইল ফোনেও সরকারি নজরদারি চালানো হয় বলে অভিযোগ। সরকার মানুষের ব্যক্তিগত মেসেজ পড়ে, ফোনে আড়ি পাতে। এমনকি, যেকোনো সময়ে ফোন সার্চও করা হয়।
সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ায় সানগ্লাস পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সানগ্লাসকে দেশের সংস্কৃতির বিরোধী বলে বলে দিয়েছেন কিম। যদিও তাকে সানগ্লাস পরতে দেখা গেছে একাধিক বার।
কিমের এ ধরনের বিদেশী সংস্কৃতিবিরোধী কার্যকলাপে বিচলিত দেশটির মানুষ। তাদের অভিযোগ, বিদেশী সংস্কৃতির বিরোধিতা করার নামে কিম আসলে নাগরিকদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় আরো হস্তক্ষেপ করতে চাইছেন।
এই ধরনের নীতির সমালোচনা চলছে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমেও।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা