২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাপানে যৌন হয়রানির জন্য গোপনে ছবি তোলা বন্ধে কড়া আইন

জাপানে যৌন হয়রানির জন্য গোপনে ছবি তোলা বন্ধে কড়া আইন। - ছবি : সংগৃহীত

জাপানে যৌন হয়রানির উদ্দেশে গোপনে কারো শরীরের ছবি তোলা বা ভিডিও ধারণ নিষিদ্ধ করে প্রথমবারের মতো আইন চালু হচ্ছে।

এই আইন আনা হচ্ছে ‘অপরের যৌনক্রিয়া বা যৌনাঙ্গ দেখে যৌন তৃপ্তিলাভের’ উদ্দেশে যারা স্কার্টের নিচ থেকে গোপনে নারী অঙ্গের ছবি তোলে বা এ ধরনের ভিডিও গোপনে ধারণ করে- তাদের বিরুদ্ধে।

জাপানে বর্তমানে এ ধরনের অপরাধের বিচার করা হয় দেশটির স্থানীয় প্রশাসনিক আইনের অধীনে, এলাকাভেদে যা ভিন্ন হয়ে থাকে।

জাপানে যৌন অপরাধের জন্য আইনে যে ব্যাপক সংস্কার আনা হচ্ছে নতুন এ আইন তারই অংশ। নতুন আইনের অধীনে ধর্ষণের সংজ্ঞাও আরো ব্যাপক করা হবে। বিনা অনুমতিতে কারোর যৌনাঙ্গের ছবি তোলা, ওই ছবি বিতরণ করা অথবা ওই ছবি কারো কাছে রাখা- এই আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কাউকে কোনোরকম যৌন উত্তেজক অবস্থায় পোজ দিতে বাধ্য করে গোপনে তার ওই অবস্থার ছবি তোলাও এ আইনে অপরাধ বলে গণ্য হবে।

যৌন উদ্দীপনায় ‘শিশু মডেল’ ব্যবহার
এ আইনে বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে ‘কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়া যৌনতা সম্পর্কিত’ ছবি তোলাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

জাপানে শিশু মডেলের বেশিরভাগই মেয়ে। তাদের ব্যবহার করে যৌন উত্তেজক ছবি নিয়মিত তোলা হয়ে থাকে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, কখনো কখনো অ্যাথলেটদের খেলাধুলার জন্য ব্যবহৃত আটোসাঁটো বা খাটো পোশাক পরা ছবিও যৌন উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য বা অন্য দুষ্কর্মের উদ্দেশে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

নতুন আইনে অপরাধীর তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হবে বা তাকে ৩০ লাখ পর্যন্ত জাপানি মুদ্রা ইয়েন (২২ হাজার ডলার) জরিমানা করা হবে। এ বছর জুনে নতুন এই বিল সংসদে পাশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জাপানে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কড়া আইন আনার জন্য জনগণের দাবি ক্রমশ বাড়ার পর আইনে এ সংস্কার আনা হচ্ছে।

জাপানের পুলিশ ২০২১ সালে গোপনে এ ধরনের ছবি তোলার জন্য পাঁচ হাজারের বেশি লোককে গ্রেফতার করেছে, যা জাপানে এ ধরনের অপরাধে রেকর্ড সংখ্যক গ্রেফতার এবং ২০১০ সালের তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেশি।

জাপানে জাতীয় বিমান চলাচল সেবাখাতের ট্রেড ইউনিয়ন পরিচালিত এক জরিপে বিমান সেবিকাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে সাতজন জানিয়েছেন যে গোপনে তাদের শরীরের ছবি তোলা হয়েছে। মার্চ মাসে ওই জরিপের ফল প্রকাশিত হয়েছে।

ইতোমধ্যেই, জাপানে বেশিরভাগ মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক তাদের ফোনে ছবি তোলার বোতাম এমনভাবে তৈরি করেছে যেন শাটার চাপলেই তা আওয়াজ করবে। যেন গোপনে কারো ছবি তোলা না যায়।

কোন দেশে কী আইন
অপরের যৌনক্রিয়া বা যৌনাঙ্গ দেখে যৌন তৃপ্তিলাভের জন্য গোপনে তোলা ছবির বিরুদ্ধে এশিয়ার বেশ কিছু দেশে আইন চালু আছে, কিন্তু তার প্রয়োগ সব ক্ষেত্রে হয় না। দক্ষিণ কোরিয়ায় গোপনে যৌন উদ্দীপক ছবি তোলার বিরুদ্ধে সাজার বিধান এক কোটি ওয়ন (সাড়ে সাত হাজার ডলার) জরিমানা অথবা সর্ব্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।

তবে কোরিয়ার মহিলা আইনজীবী সমিতি বলছে ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ ধরনের গোপনে ছবি তোলার যে দুই হাজারটি মামলা শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত পৌঁছেছিল, তার মধ্যে মাত্র পাঁচ ভাগে জেল হয়েছে।

সিঙ্গাপুরে যৌন তৃপ্তি বা যৌন উত্তেজনার জন্য গোপনে ছবি তোলার দায়ে কেউ অপরাধী সাব্যস্ত হলে দু’বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা, বেত্রাঘাত বা সবগুলো সাঁজা একসাথে দেয়ার বিধান রয়েছে। দেশটিতে এ উদ্দেশে ১৪ বছরের কম বয়সী কারোর শরীরের ছবি তুললে বাধ্যতামূলক কারাদণ্ডের আইন প্রয়োগের বিধান রয়েছে, সেই সাথে রয়েছে জরিমানা ও বেত্রাঘাত।

জাপানে ২০১৯ সালে ধর্ষণের অপরাধে অভিযুক্ত বেশ কয়েক ব্যক্তিকে খালাস দেয়ার পর গণ অসন্তোষের মুখে যৌন অপরাধের বিরুদ্ধে আইন কঠোর করতে দেশটির দণ্ডবিধিতে বেশ কিছু সংস্কার আনার বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছিল।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাপানের বিচার মন্ত্রণালয়ের একটি প্যানেল এ ধরনের ছবি তোলার ক্ষেত্রে অনুমতি দেয়ার বয়স ১৩ থেকে বাড়িয়ে ১৬ করার প্রস্তাব দেয়। ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করার সময়সীমাও ১০ বছর থেকে বাড়িয়ে ১৫ বছর করা প্রস্তাব করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে নাবালিকাদের যৌন কাজে সম্পৃক্ত করার বিষয়টিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার কথা এবং ধর্ষণের সংজ্ঞা আরো ব্যাপক করার কথাও বলা হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement