২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিবিসির দফতরে আয়কর হানাকে অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী : কংগ্রেস

আয়কর বিভাগের হানা চলাকালীন দিল্লিতে বিবিসির দপ্তরের বাইরে সংবাদকর্মীদের ভিড়। - ছবি : বিবিসি

ভারতে বিবিসির দু’টি দফতরে আয়কর বিভাগের তল্লাশিকে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী আখ্যা দিয়েছে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। একইসাথে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠনও এই তল্লাশিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দিল্লি আর মুম্বাইয়ে বিবিসির দু’টি দফতরে আয়কর কর্মকর্তারা অভিযান চালান। এক বিবৃতিতে বিবিসি বলেছে, তারা আয়কর দফতরের সাথে পূর্ণ সহযোগিতা করছে।

তবে ক্ষমতাসীন বিজেপি বিবিসিকে বিশ্বের সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা বলে উল্লেখ করেছে। গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে বিবিসির সাম্প্রতিক তথ্যচিত্রের কারণেই এই আয়কর হানা বলে মিডিয়া বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এই হানাকে অগণতান্ত্রিক আর মোদী সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাব বলে বর্ণনা করেছে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।

মোদী সরকার সমালোচনাকে ভয় পাচ্ছেকংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি ভেনুগোপাল মন্তব্য করেছেন, ‘বিবিসির দফতরে আয়কর হানার ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে মোদী সরকার সমালোচনাকে ভয় পাচ্ছে। আমরা ভীতিপ্রদর্শনের এই পদ্ধতিকে কড়া নিন্দা জানাচ্ছি। এটা অগণতান্ত্রিক এবং এই স্বৈরাচারী মনোভাব আর চলতে দেয়া যায় না।’

আরেক কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ একটি সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেছেন, ‘যখন আমরা আদানি গোষ্ঠীর ব্যাপারে যৌথ সংসদীয় কমিটির দাবি জানাচ্ছি সংসদে, তখন সরকার বিবিসির পেছনে লেগেছে। একেই বলে বিনাশকালে বিপরীত বুদ্ধি।’

সমাজবাদী পার্টির প্রধান ও উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও বলেছেন, ‘তাদের (বিজেপির) সময় শেষ হয়ে আসছে’।

প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বিজেপিও
দলের জাতীয় মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘ভারতে কোনো সংস্থাকে কাজ করতে হলে তাদের ভারতের আইন মেনেই চলতে হবে। তারা যদি আইন মোতাবেক চলে থাকে তাহলে তাদের ভয় কিসের? আয়কর বিভাগকে তাদের কাজ করতে দেয়া উচিত।’ বিবিসিকে বিশ্বের সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা বলে উল্লেখ করে মি ভাটিয়ার মন্তব্য, ‘বিবিসির প্রচারের সাথে কংগ্রেসের এজেন্ডা একদম মিলে যায়।’

বিবিসির দফতরগুলোতে আয়কর বিভাগের তল্লাশি অভিযান নিয়ে ভারতের সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন এডিটর্স গিল্ড অফ ইন্ডিয়া একটি বড় বিবৃতি জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, আয়কর বিভাগের এই হানা এমন একটা সময়ে হল যখন বিবিসি ২০০২ সালে গুজরাতের দাঙ্গার ওপরে নির্মিত দু’পর্বের একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে।

‘তথ্যচিত্রটি নিয়ে যে রাজনৈতিক জলঘোলা হয়েছে, তার মধ্যে সরকার বিবিসির বিরুদ্ধে ভুল এবং পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ রিপোর্টিংয়ের অভিযোগ তুলেছে। তথ্যচিত্র দু’টি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এবং দেখার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে, ‘প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে এডিটর্স গিল্ড।

তারা বলছে, সম্প্রতি একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সরকারি নীতি বা ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করছে যে সব সংবাদমাধ্যম, তাদেরকেই সরকারী এজেন্সি দিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে, ভয় দেখানো হচ্ছে। এই প্রবণতা সাংবিধানিক গণতন্ত্রের পরিপন্থী বলে মন্তব্য তাদের।

গুজরাত দাঙ্গার তথ্যচিত্র ও আয়কর হানা

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি বা আপ বলছে, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের লাজলজ্জা সব হারিয়েছে। বিশ্বব্যাপী একটা হাসির পাত্র করে তুলল তারা নিজেদের।’

দলটির মুখপাত্র সৌরভ ভরদ্বাজ ওই মন্তব্যের পরে আরো বলেন, ‘তোমার যদি মনে হয় যে বিবিসি ভুল, তাহলে আদালতে যাও। কিন্তু যখনই আইন বহির্ভুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছে যে কেন্দ্রীয় সরকারও জানে যে বিবিসি ওই তথ্যচিত্রে সঠিক প্রতিবেদন করেছে। তিনি বলেন, ‘সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীই গুজরাট দাঙ্গার ওপরে বিবিসির তথ্যচিত্র এবং তারপরেই বিবিসি দফতরে এই আয়কর হানা দু’টো বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন’।

মিডিয়া বিশ্লেষক সম্বিত পাল বলছেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে একটি তথ্য চিত্র নিয়ে বিতর্কের পরেই কেন আয়কর কর্মকর্তারা বিবিসির পেছনে লেগেছেন, তা তো স্পষ্ট। ক্ষমতাসীন দল বা তার সহযোগীদের ভাবাবেগে কথিত আঘাত দেয়ার অভিযোগে সম্প্রতি কিছু ভারতীয় সংবাদ সংস্থাকেও একই রকমভাবে হেনস্থা করা হয়েছে।’ তার কথায়, ‘আয়কর হানার সময়ে ভারতে বিবিসির সাংবাদিকদের হেনস্থা করা শুধু যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপরে হস্তক্ষেপ তা নয়, এটা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে। এমনিতেই প্রেস ফ্রিডম ইন্ডেক্সে ভারত ১৫০ নম্বরে নেমে এসেছে, প্রতিবছর আরো নামছে।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement