১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হায়দরাবাদের নিজাম বিশ্বের সেরা ধনী থেকে যেভাবে নিঃস্ব হয়েছিলেন

অষ্টম ও শেষ নিজাম মুকাররম জাহ। - ছবি : বিবিসি

হায়দরাবাদের অষ্টম ও শেষ নিজাম, নবাব মীর বরকত আলি খান বালাশন মুকাররম জাহ বাহাদুরকে বুধবার রাতে তার পূর্বপুরুষদের রাজধানী শহরেই পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে।

মুকাররম জাহর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি ১৪ জানুয়ারি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে তার মৃত্যু হয়।

তার দফতর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মহামহিম নবাব মীর বরকত আলি খান বালাশন মুকাররম জাহ বাহাদুরের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার জন্মশহর হায়দরাবাদে দাফন করা হয়।

ইস্তাম্বুলে থেকে হায়দরাবাদে আনার পরে তার লাশ চৌমহলা প্যালেসে রাখা ছিল। তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজার হাজার মানুষ হাজির হয় ওই প্যালেসে।

কে ছিলেন এই মুকাররম জাহ?
হয়দরাবাদের শেষ নিজাম মীর উসমান আলি খান বাহাদুরের নাতি ছিলেন এই মুকাররম জাহ।
সপ্তম নিজাম মীর উসমান আলি খান ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত হায়দরাবাদের শাসক ছিলেন। তার ছেলে আজম জাহ ও রাজকুমারী দুরু শহবরের ছেলে মুকাররম জাহের জন্ম ১৯৩৩ সালে।

‘দ্যা হিন্দু’ সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, উসমান আলি খান উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজের ছেলেকে বেছে না নিয়ে নাতি মুকাররম জাহকে নিজাম হিসেবে ঘোষণা করে গিয়েছিলেন।

একই প্রতিবেদনে ‘দ্যা হিন্দু’ লিখেছে যে ১৯৬৭ সালে রাজ্যাভিষেকর পরে অষ্টম নিজাম হন মুকাররম জাহ। ওই রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানও হয়েছিল চৌমহলা প্যালেসেই, যেখানে দাফনের আগে তার লাশ রাখা হয়েছিল।

অভিষেকের পরেই মুকাররম জাহ অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। কিছু দিন পরে তুরস্কে পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করেন তিনি।

বিপুল সম্পত্তি যেভাবে উড়ে গিয়েছিল
হায়দরাবাদ থেকে প্রকাশিত ‘সিয়াসত’ সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী সপ্তম নিজামের উত্তরাধিকারী হিসেবে মুকাররম জাহ পৃথিবীর সব থেকে বড় সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন। কিন্তু বিলাসী জীবনযাপন, রাজকীয় মহলের দেখভালে অবহেলা, বেহিসাবির মত দামি অলঙ্কার কিনতে খরচ করা ছিল মুকাররম জাহের স্বভাব। এভাবেই সব সম্পত্তি শেষ হয়ে যায় অষ্টম নিজামের।

উত্তরাধিকার সূত্রে মুকাররম জাহ ২৫ হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি পেয়েছিলেন। ওই সময়ে তার বয়স ছিল ৩০ বছর। কিন্তু বেহিসাবি জীবনযাপনের ফলে শেষ দিনগুলো তাকে কাটাতে হয়েছিল একটা দু’কক্ষের ফ্ল্যাটে।

সাবানের বাক্সে লুকিয়ে রাখতেন হীরা
হায়দরাবাদের নিজামের শাসন শুরু হয়েছিল ১৭২৪ সালে, তা জারি ছিল ১৯৪৮ পর্যন্ত।

হয়দরাবাদের শেষ শাসক, নিজাম-আসফ জাহ মুজফ্ফরুল মুল্ক স্যার উসমান আলি খান ১৯১১ সালে শাসনভার গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ শাসকদের খুব কাছের মানুষ।

টাইম ম্যাগাজিন ১৯৩৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি উসমান আলি খানের ওপরে একটা সংখ্যাই ছেপেছিল। ওই সময়ে তিনিই ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষ। তার কাছে ২৪২ ক্যারেটের জেকব হীরা ছিল। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হীরার একটা। যারা ওই হীরা দেখেছেন, তাদের কথায়, হীরাটি একটা ছোট লেবুর আকৃতির ছিল।

ওই হীরা রক্ষা করার জন্য একটা সাবানের বাক্সের ভেতরে লুকিয়ে রাখা হত। কখনো আবার নিজাম হীরাটিকে পেপারওয়েট হিসেবেও ব্যবহার করতেন।

যেভাবে হায়দরাবাদের ভারত-ভুক্তি হয়েছিল
স্বাধীনতার পরে যে তিনটি দেশীয় রাজ্য ভারতে যোগদান করতে অস্বীকার করেছিল, তারই অন্যতম ছিল হায়দরাবাদ। তবে ভারত সরকার সেনাবাহিনী পাঠিয়ে ১৯৪৮ সালে হায়দরাবাদ দেশের বাকি অংশের সাথে মিশিয়ে দেয়।

হায়দরাবাদের সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের পরে ভারত সরকার নিজামের সমর্থক কাশিম রিজভি ও লায়েক আহমেদকে হেফাজতে নেয়। লায়েক আহমেদ হেফাজত থেকে পালিয়ে বোম্বে (বর্তমানের মুম্বাই) চলে যান আর সেখান থেকে বিমানে পাকিস্তান পৌঁছান।

ভারত সরকার সপ্তম নিজাম বা তার পরিবারের কোনো ক্ষতি করেনি। তাদের সপরিবারে নিজেদের প্রসাদেই থাকার অনুমতি দিয়েছিল সরকার।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পরে ৫৬২তম দেশীয় রাজ্য হিসেবে হায়দরাবাদ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।

সপ্তম নিজাম ও ভারত সরকারের মধ্যে ১৯৫০ সালের ২৫ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী নিজাম বছরে ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৭১৪ টাকা প্রিভি পার্স হিসেবে পেতেন।

হায়দরাবাদ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলেও নিজাম সেখানকার গভর্নর ছিলেন ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত।

রাজ্য পুনর্গঠনের পরে নিজামের আগের সাম্রাজ্য ভেঙে তিনটি রাজ্য তৈরি হয়। অন্ধ্র প্রদেশ, কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্র।

সপ্তম নিজাম মীর উসমান আলি খানের ১৯৬৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয়।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement