২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নেপালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা: ডাটা বক্স ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছে

নেপালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা: ডাটা বক্স ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছে - ছবি : সংগৃহীত

নেপালের কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর শুরু করেছে। এছাড়া বিশ্লেষণের জন্য বিমানের ডেটা রেকর্ডার ফ্রান্সে পাঠাচ্ছে।

গত ৩০ বছরের মধ্যে দেশের সবচেয়ে মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনার কারণ কী, তা নির্ধারণ করার চেষ্টা চলছে।

হিমালয়ের পাদদেশে নতুন খোলা পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে যাওয়ার সময় রোববার ফ্লাইটটি একটি খাদে পড়ে যায়। এ সময় বিমানে থাকা ৭২ জনের মধ্যে কমপক্ষে ৭০ জনের মৃত্যু হয়।

অনুসন্ধানকারীরা সোমবার ককপিট ভয়েস রেকর্ডার ও ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার খুঁজে পেয়েছেন। তারা ৩০০ মিটার গভীর (৯৮৪-ফুট-গভীর) উপত্যকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে চিরুনি অভিযান চালায় নিখোঁজ দুজনের সন্ধানে। মঙ্গলবার সকালে একজনের লাশ পাওয়া যায়।

বিমানের প্রস্তুতকারক এটিআর-এর সদর দফতর টুলুসে নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র জগন্নাথ নিরাউলা বলেছেন, ভয়েস রেকর্ডারটি স্থানীয়ভাবে বিশ্লেষণ করা হবে। তবে ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডারটি ফ্রান্সে পাঠানো হবে।

ফরাসি বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে এটি তদন্তে অংশ নিচ্ছে এবং এর প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থলে ছিল।

নেপালের ইয়েতি এয়ারলাইন্সের চালিত টুইন-ইঞ্জিন এটিআর ৭২-৫০০টি রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ২০০ কিলোমিটার (১২৫ মাইল) পশ্চিমে রিসর্ট শহর পোখরাতে ২৭ মিনিটের ফ্লাইটটি সম্পন্ন করছিল। তবে এটি এখনো পরিষ্কার নয় যে কী কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মনে হচ্ছে, এটা টার্বোপ্রপ বিমানবন্দরের কাছে যাওয়ার সময় কম উচ্চতায় একটি স্টলে গিয়েছিল। কিন্তু কেন তা স্পষ্ট নয়।

বিমানটিতে ১৫ বিদেশী নাগরিক ও চারজন ক্রু সদস্যসহ ৬৮ জন যাত্রী ছিল। বিদেশীদের মধ্যে পাঁচজন ভারতীয়, চারজন রাশিয়ান, দুইজন দক্ষিণ কোরিয়ার এবং আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের একজন করে।

পোখরা হল অন্নপূর্ণা সার্কিটের প্রবেশদ্বার ও হিমালয়ের একটি জনপ্রিয় হাইকিং ট্রেইল।

মঙ্গলবার বিকেলে পোখরার সেতি নদীর তীরে একটি শ্মশানের তুলসী ঘাটে ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ জড়ো হয়েছিল। তারা দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ত্রিভুবন পাউডেল (৩৭) নামক সাংবাদিক ও স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকের জন্য শোক জানাতে এসেছিলেন।

সোমবার সন্ধ্যায় স্থানীয় হাসপাতালের বাইরে শত শত আত্মীয় ও বন্ধুরা জড়ো হয়েছিল।

অনেকে একে অপরকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন, যখন কেউ কেউ ময়নাতদন্তের গতি বাড়ানোর জন্য কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানাচ্ছিলেন, যাতে তারা তাদের প্রিয়জনের মৃতদেহ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিক স্মিথ, যিনি বোয়িং ৭৫৭ এবং ৭৬৭ বিমান চালান এবং ‘পাইলটকে জিজ্ঞাসা করুন’ নামে একটি কলাম লেখেন, তিনি সতর্ক করে বলেন যে দুর্ঘটনার বিষয়ে এখনো অনেক বিবরণ জানা যায়নি।

তিনি একটি ই-মেইলে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, ‘একটি সম্ভাবনা হল, একটি ইঞ্জিনের ব্যর্থতার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

বিমানের অবতরণের স্মার্টফোনের ভিডিও করা দিওয়াস বোহোরা বলেন, বিমানটি হঠাৎ বাম দিকে না আসা পর্যন্ত এটিকে অন্যান্য বিমানের মতোই সাধারণ অবতরণ মনে হচ্ছিল।

তিনি বলেন, ‘আমি এটা দেখেছি এবং আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম ... আমি ভেবেছিলাম যে আজ এটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরে এখানে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। আমিও মারা যাব।’

দুর্ঘটনা কবলিত বিমানটি এটিআর ৭২, যা সারা বিশ্বের এয়ারলাইনগুলো সংক্ষিপ্ত আঞ্চলিক ফ্লাইটের জন্য ব্যবহার করে।

১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে একটি ফরাসি ও ইতালীয় অংশীদারিত্বে নির্মিত হয় এটি। বিমানের এই মডেলটি বিভিন্ন দেশে বেশ কয়েকটি মারাত্মক দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে।

এর আগে তাইওয়ানে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে দু'টি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। যার মধ্যে একটি এটিআর ৭২-৫০০ ও এটিআর ৭২-৬০০ বিমান।

২০১৪ সালের জুলাইয়ে একটি ট্রান্সএশিয়া এটিআর ৭২-৫০০ ফ্লাইট তাইওয়ান ও চীনের মধ্যে মনোরম পেঙ্গু দ্বীপপুঞ্জে অবতরণের চেষ্টা করার সময় বিধ্বস্ত হয়। এতে ৪৮ জনের মৃত্যু হয়। একই তাইওয়ানিজ এয়ারলাইন পরিচালিত একটি এটিআর ৭২-৬০০।

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাইপেইতে উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়। এ সময় এর একটি ইঞ্জিন ব্যর্থ হয় এবং দ্বিতীয়টি ভুলবশত বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া ২০১৬ সালে ট্রান্সএশিয়া সমস্ত ফ্লাইট বন্ধ করার পর ব্যবসাও বন্ধ করে দেয়।

বিমান কোম্পানির মুখপাত্র সুদর্শন বারতৌলা জানিয়েছেন, ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ছয়টি এটিআর ৭২-৫০০ প্লেনের বহর রয়েছে।

নেপালে মাউন্ট এভারেস্টসহ বিশ্বের ১৪টি সর্বোচ্চ পর্বতের মধ্যে আটটির অবস্থান। দেশটির বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাস রয়েছে।

ফ্লাইট সেফটি ফাউন্ডেশনের এভিয়েশন সেফটি ডাটাবেস অনুসারে, ১৯৪৬ সাল থেকে নেপালে ৪২টি মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে।

রোববারের দুর্ঘটনাটি ১৯৯২ সালের পর নেপালের সবচেয়ে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। ওই সময় একটি বিমান কাঠমান্ডুতে অবতরণের চেষ্টা করার সময় একটি পাহাড়ে ধাক্কা দেয়। এতে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে থাকা ১৬৭ জন যাত্রীর সবাই প্রাণ হারান।

নিরাপত্তার মান দুর্বল উল্লেখ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৩ সাল থেকে নেপালের এয়ারলাইন্সকে ২৭টি দেশের ওপর দিয়ে উড়তে নিষেধ করেছে।

২০১৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন নেপালের এভিয়েশন সেক্টরে উন্নতির কথা উল্লেখ করেছে।

কিন্তু ইইউ এর প্রশাসনিক সংস্কারের দাবি করে আসছে।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement