২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উত্তর কোরিয়ার কাছে কোন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আছে

২০২১ সালে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শনী। - ছবি : বিবিসি

উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে যা জাপানের ওপর দিয়ে চার হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে।

দেশটি তাদের অস্ত্র কর্মসূচির অংশ হিসেবে নিয়মিত ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে আসছে। তবে ২০১৭ সালের পর তারা এই প্রথম জাপানের ওপর দিয়ে আবারো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে পরীক্ষা চালালো।

উত্তর কোরিয়া কোন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করছে?
উত্তর কোরিয়া এবছর ৩০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। এসব পরীক্ষার মধ্যে দীর্ঘ পাল্লার কিছু ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রেও আঘাত হানতে পারে।

এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ব্যালিস্টিক মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল এবং হাইপারসনিক মিসাইল। হাইপারসোনিক মিসাইলের গতি অত্যন্ত বেশি। এটি শব্দের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি গতিতে উড়তে পারে। এছাড়াও এটি অল্প উচ্চতায় উড়ে যায়, যার ফলে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি র‍্যাডারে ধরা পড়ে না।

জাপানের ওপর দিয়ে সম্প্রতি যে ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করা হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে সেটি মধ্যম পাল্লার একটি মিসাইল যার নাম হুয়াসং-১২।

এই ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা চার হাজার ৫০০ কিলোমিটার যা দিয়ে উত্তর কোরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গুয়াম দ্বীপেও আঘাত হানা সম্ভব।

রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউটের জোসেফ বার্ন বলেন, ‘উত্তর কোরিয়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করছে। জাপানের ওপর দিয়ে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে এটা সবচেয়ে দীর্ঘ পাল্লার। এটি ভবিষ্যতে পরমাণু অস্ত্রবাহী আরো একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ইঙ্গিত হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে আগামীতে যেকোনো সময়ে উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রটির পরীক্ষা চালাতে পারে।’

এছাড়াও উত্তর কোরিয়া হুয়াসং-১৪ ব্যালিস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা চালাচ্ছে।

এই ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা আট হাজার কিলোমিটার। কোনো কোনো গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ১০ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে পারে। এর অর্থ উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র নিউ ইয়র্কেও পৌঁছাতে সক্ষম।

এটাই উত্তর কোরিয়ার প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল।

হুয়াসং-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ১৩ হাজার কিলোমিটার বলে ধারণা করা হয় যা দিয়ে উত্তর কোরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো স্থানে আঘাত করা সম্ভব।

উত্তর কোরিয়া ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে তাদের সর্বাধুনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল হুয়াসং-১৭ উন্মোচন করে। ধারণা করা হচ্ছে, এর পাল্লা ১৫ হাজার কিলোমিটার কিম্বা তার চেয়েও বেশি।

এই ক্ষেপণাস্ত্রটি সম্ভবত তিন থেকে চারটি ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। ওয়ারহেড হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্রের এমন একটি মাথা যা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।

সাধারণত অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলো একটি ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। একাধিক ওয়ারহেড বহন করতে পারার কারণে আক্রান্ত কোনো দেশের পক্ষে হুয়াসং-১৭ ক্ষেপণাস্ত্রটিকে প্রতিরোধ করা কঠিন।

২০২১ সালে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শনী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র তুলে ধরার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনকে দেখাতে চাইছে সামরিকভাবে তারা কতোটা শক্তিশালী।

দেশটি ২০২১ সালের মার্চ মাসে নতুন ধরনের একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এটি কৌশলগত বা ট্যাকটিক্যাল একটি ক্ষেপণাস্ত্র যা আড়াই টন ওজনের বিস্ফোরক বহন করতে পারে।

এর মানে হচ্ছে এই অস্ত্রটি তাত্ত্বিকভাবে পরমাণু ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম।

জেমস মার্টিন সেন্টার ফর ননপ্রলিফারেশন স্টাডিজের বিশ্লেষকরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, উত্তর কোরিয়া এর আগে কেএন-২৩ নামের যে ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে, ট্যাকটিক্যাল ক্ষেপণাস্ত্রটি তারই উন্নত সংস্করণ।

উত্তর কোরিয়ার কাছে কি ধরনের পরমাণু অস্ত্র আছে?
এর আগে উত্তর কোরিয়া সবশেষ পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে ২০১৭ সালে। পুঙ্গেরি নামের একটি জায়গায় এই পরীক্ষাটি চালানো হয় এবং তাতে ১০০ থেকে ৩৭০ কিলোটন শক্তি তৈরি হয়েছিল।

একটি ১০০ কিলোটনের বোমা ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেলা পরমাণু বোমার চেয়ে ছয়গুণ বেশি শক্তিশালী।

উত্তর কোরিয়া দাবি করে এটি তাদের প্রথম থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র যা সব ধরনের পরমাণু অস্ত্রের চেয়ে শক্তিশালী।

বার্ন বলছেন, উত্তর কোরিয়া হয়তো এখন এর চেয়ে আকারে ছোট, কিন্তু আরো বেশি শক্তিশালী-এধরনের পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে তারা এখন তাদের নতুন সক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখছে- ছোট আকৃতির ওয়ারহেড যা বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সাথে যুক্ত করে দেয়া সম্ভব, এমনকি স্বল্প পাল্লার মিসাইলের সাথেও।’

পরমাণু পরীক্ষা কোথায় চালানো হতে পারে?
এর আগে পুঙ্গেরি নামক একটি স্থানে মাটির নিচে ছয়টি পরমাণু পরীক্ষা চালানো হয়। তবে ২০১৮ সালে উত্তর কোরিয়া এই পরীক্ষা-স্থলটি বন্ধ করে দেয়ার কথা ঘোষণা করেছিল।

এর কারণ হিসেবে দেশটি বলেছিল যে তাদের পরমাণু সক্ষমতা যাচাই করা হয়ে গেছে। সেসময় ওই স্থানের ভূগর্ভস্থ কিছু টানেলও বিদেশি সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে উড়িয়ে দেয়া হয়।

তবে ওই স্থানটি পরমাণু পরীক্ষার জন্য আর ব্যবহার করার পর্যায়ে আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সেখানে আমন্ত্রণ জানায়নি।

তবে এবছরের আগের দিকে স্যাটেলাইট থেকে তোলা যেসব ছবি পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে পুঙ্গেরিতে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।

এই স্থানে আগামীতে যদি পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালানো হয়, সেটা হবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবের লঙ্ঘন।

উত্তর কোরিয়ার পরমাণু চুল্লি পুনরায় চালু
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-আন ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অঙ্গীকার করেছিলেন যে, উত্তর কোরিয়াতে পারমাণবিক সামগ্রী সমৃদ্ধ করার যতো স্থাপনা আছে সেগুলো তারা ধ্বংস করে ফেলবেন।

তবে জাতিসঙ্ঘের পরমাণু শক্তি সংস্থা বলছে স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে উত্তর কোরিয়া তাদের চুল্লিগুলো পুনরায় চালু করেছে। এসব চুল্লিতে পরমাণু অস্ত্র তৈরির উপাদান তৈরি করা হয়।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ আরো বলছে যে, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি পুরোদমে চলছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে প্লুটোনিয়াম আলাদা করা, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা ইত্যাদি।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement