২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বাংলাদেশের চেয়ে সামরিক সামর্থ্যে এগিয়ে মিয়ানমার

বাংলাদেশের চেয়ে সামরিক সামর্থ্যে এগিয়ে মিয়ানমার -

সামরিক শক্তির দিক দিয়ে বাংলাদেশের চাইতে ৭ ধাপ এগিয়ে রয়েছে মিয়ানমার। এ বছর বিশ্বের ১৪২টি রাষ্ট্রের সামরিক সামর্থ্যের একটি সূচক প্রকাশ করেছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার নামে একটি সংস্থা। এতে মিয়ানমারের অবস্থান ৩৯ নম্বরে রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান এই তালিকায় ৪৬।

কয়েক দিন আগে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা এক বিবৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে অর্থ সাহায্য এবং অস্ত্র সরবারহ কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির জনগণের ওপর নিপীড়ন বন্ধের জন্য এ আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

সামরিক শক্তির দিক থেকে মিয়ানমার তার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের থেকে দেশটির অবস্থান শক্তিশালী।

অং সান সুচির রাজনৈতিক দল এনএলডি নির্বাচনে বিজয়ের পর ক্ষমতায় তাদের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর ঠিক আগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করে।

ওই সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো।

যে কারণে মিয়ানমার এক রকম বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশটির সমরাস্ত্র কেনা থেমে নেই।

কী অস্ত্র আছে মিয়ানমারের যুদ্ধ বহরে
সূচক অনুযায়ী, সামরিক সামর্থ্যের দিক থেকে এখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এরপরেই রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত ও জাপান।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সামরিক শক্তির দিক থেকে ১৮তম অবস্থানে আছে মিয়ানমার।

দেশটির বহরে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র থেকে শুরু করে সাবমেরিন এবং নজরদারি করার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি পর্যন্ত সবই রয়েছে।

ফি বছর দেশটি তাদের সামরিক সামর্থ্য বাড়িয়ে যাচ্ছে, সেই সাথে বাড়ছে তাদের প্রতিরক্ষা বাজেটের আকার।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স বলছে, ২০২২ সালে প্রতিরক্ষা খাতে মিয়ানমারের বরাদ্দ সাড়ে ২২৮ কোটি মার্কিন ডলার।

এই মূহূর্তে দেশটির সৈন্য সংখ্যাও কম নয়। দেশটির সেনাবাহিনীতে এখন সৈন্য সংখ্যা আনুমানিক সাড়ে চার লাখ এবং প্যারা-মিলিটারি বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৫০ হাজার।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, মিয়ানমারের রয়েছে ২৮০টি বিমানের এক বহর। এতে বুঝা যায় আকাশপথে মিয়ানমারের সামরিক সামর্থ্যও বেড়েছে গত কয়েক বছরে।

এর মধ্যে ফাইটার বা ইন্টারসেপ্টর এয়ারক্রাফট ৫৫টি। প্রশিক্ষণ বিমান ৯৩টি এবং আক্রমণ চালানোর মতো বিমানের সংখ্যা ২১টি। এছাড়া যুদ্ধ বিমান পরিবাহী যানের সংখ্যা ২৬টি।
মিয়ানমারের হেলিকপ্টার আছে ৮০টি এবং অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যা ৯টি।

সামরিক যানের মধ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মোট ট্যাংক রয়েছে ৬৬৪টি।

সাঁজোয়া যান রয়েছে ১ হাজার ৫৮৭টি।

এছাড়া স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি গান বা কামানের সংখ্যা ১৯০টি এবং টানা কামান আছে ১ হাজার ৮৬৯টি। মিয়ানমারের সামরিক বহরে রকেট প্রজেক্টর আছে ৪৮৬টি।

এছাড়া দেশটির যুদ্ধবহরে নৌযান আছে মোট ১৫৫টি।

এর মধ্যে ফ্রিগেট আছে পাঁচটি, ছোট যুদ্ধ জাহাজ কর্ভেটসের সংখ্যা তিনটি। টহল জাহাজের সংখ্যা ১৩৩টি।

মিয়ানমারের একটি সাবমেরিন আছে। এছাড়া মাইন ওয়ারফেয়ার ক্রাফট আছে দুটি। এছাড়া দেশটির জনগণের ওপর নজরদারি করার জন্য ইসরাইলের কাছ থেকে পেগাসাস নামের একটি সফটওয়্যারও কিনেছে মিয়ানমার। এই সফটওয়্যার দিয়ে মোবাইল ফোন হ্যাক করে গোপনে নজরদারি চালানো যায় যেকোনো ব্যক্তির ওপর।

মিয়ানমারকে কারা দেয় অস্ত্র
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স ২০২২-এর তথ্য অনুযায়ী মিয়ানমারের রয়েছে সমরাস্ত্রের বিপুল ভাণ্ডার।

এর মধ্যে ভারী অস্ত্রের পুরোটাই দেশটি বিদেশ থেকে কেনে। তবে, হালকা অস্ত্র তৈরির জন্য মিয়ানমারের নিজস্ব সমরাস্ত্র কারখানা আছে।

যদিও ২০১৯ সালে জাতিসঙ্ঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন টিম মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছিল।

সে সময় ওই টিমের দেয়া রিপোর্টে মিয়ানমারের কাছে কোন কোন দেশ অস্ত্র বিক্রি করে সে সম্পর্কে বলা হয়েছিল।

রিপোর্টে বলা হয়, সামরিক জান্তার নিপীড়নে দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যখন মানবিক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে তখনো সাতটি দেশের কয়েকটি কোম্পানি মিয়ানমারকে অস্ত্র সরবারহ করেছে।

উল্লেখিত রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে চীন, উত্তর কোরিয়া, ভারত, ইসরাইল, ফিলিপাইন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের ১৪টি কোম্পানি যুদ্ধ বিমান, সাঁজোয়া যান, যুদ্ধজাহাজ, মিসাইল ও মিসাইল লঞ্চার সরবরাহ করছে।

ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, কোন দেশে রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনে ব্যবহার হতে পারে এমন আশঙ্কা থাকলে, সেখানে অস্ত্র বিক্রি বা সরবরাহ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি আইসিসিপিআরের বিরোধী। চীন ওই চুক্তি স্বাক্ষরকারী একটি দেশ।

সমর বিশেষজ্ঞ এবং মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেছেন, প্রতিবেশী দুই দেশ চীন এবং ভারতের সাথে মিয়ানমারের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠতার কারণে দেশটির সমরাস্ত্রের বড় অংশটি তারা এই দুটি দেশ থেকে কেনে।

অধ্যাপক আলী বলেছেন, চীন ও ভারতের সাথে মিয়ানমারের সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ যে যখন প্রথম দফায় দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেতা অং সান সুচিকে গৃহবন্দি করা হয়, সেসময় পশ্চিমা দেশগুলো যখন তৎকালীন বার্মার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, ওই সময়ও চীন ও ভারত দেশটিকে সমর্থন দিয়েছে।

সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ভারত ২০১৮ সালে মিয়ানমারকে একটি রুশ নির্মিত সাবমেরিন উপহার দিয়েছে।

তবে, ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চীন, রাশিয়া, ভারত, ইসরাইল এবং ইউক্রেন ছিল মিয়ানমারের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ।

মিয়ানমারের বেশিরভাগ ফাইটার বিমান, সাঁজোয়া যান, বন্দুক এবং যুদ্ধজাহাজ আসে চীন থেকে। আর যুদ্ধবিমান সরবরাহকারী দেশের মধ্যে রাশিয়া প্রধান। এছাড়া রাশিয়া মিয়ানমারের কাছে সাঁজোয়া যানও বিক্রি করছে। এছাড়া রকেট এবং কামানের গোলার প্রধান সরবরাহ আসে সার্বিয়া থেকে।

এদিকে, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসঙ্ঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির সামরিক জান্তা মিয়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পর চীন, রাশিয়া এবং সার্বিয়া দেশটিকে অস্ত্র সরবারহ করা চালিয়ে গেছে, যা দেশটির বেসামরিক নাগরিকদের দমনে ব্যবহার করা হয়েছে।

এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে যুদ্ধ বিমান, সাজোঁয়া যান, রকেট ও কামান।

ওই বিবৃতিতে দেশটির সরকারের অস্ত্র পাওয়ার সুযোগ বন্ধ করার জন্য জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement